কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কার্যক্রম মুখ থুবরে পরেছে। জমি অধিগ্রহণ হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটছে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় আট বছর আগে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চর প্রাগপর মৌজায় প্রায় ৫০৬ একর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার অগ্রগতি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কুষ্টিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এখানকার অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলের নিয়ামক হয়ে উঠবে বলেও বলে মনে করেন তারা।
সূত্র জানায়, রেলওয়ে এবং সরকারের অব্যবহৃত জমি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ভেড়ামারা উপজেলার চরমোকারিমপুর, আরাজিসারা এবং চর প্রাগপুরে মৌজাকে বেছে নেয়া হয় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য। ২০১৭ সালে ১০ জুন স্থানীয় জেলা প্রশাসন ৩১২ একর খাস জমির দলিল প্রকল্প কর্তৃপরে কাছে হস্তান্তর করে। তবে এরপর থেকে এ প্রকল্পের দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি হয়নি। এখনো দফায় দফায় স্থান পরিদর্শনের মধ্যেই রয়ে গেছে কার্যক্রম। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি কুষ্টিয়া ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ল্েয সংশিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপরে (বেজা) কর্মকর্তারা মোকারিমপুর ইউনিয়ন গোলাপনগর বন্দোবস্তকৃত জমি পরিদর্শন ও মতবিনিময় করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও বেজার নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী আহসান, যুগ্ম সচিব ও বেজার বিনিয়োগ উন্নয়নের মহাব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান, উপসচিব ও বিনিয়োগ উনয়ন-১ এর ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল এবং সোশ্যাল কনসালটেন্ট আব্দুল কাদের খান প্রমুখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, গ্যাস সহজলভ্যতার জন্য দেশের ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী স্থান হিসেবে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলাকে বিবেচনা করে ভারত সরকার এবং সে দেশের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা মনে করেন, ভেড়ামারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে এ এলাকায় তথা কুষ্টিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সূত্র জানায়, ভারতের টাটাসহ চীন ও জাপানের একাধিক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এখানে বড় ধরণের বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের এমপি, সাবেক তথ্য মন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন- আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভেড়ামারা এলাকায় একটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা। সে ল্েয ভেড়ামারা লালন শাহ সেতুর উত্তর পাড় রেলওয়ের জায়াগাও নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর বেশি কোন কার্যক্রম নজরে আসছে না। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তিকে আরো গতিশীল করতে অতি শীঘ্রই সরকার ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি রেকসোনা খাতুন বলেন, ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ল্েয বন্দোবস্তকৃত জমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ পরিদর্শন করে গেছেন অনেক আগেই। সেখানে বসবাসরত অধিবাসীদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ল্েয অনেক আগেই প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করে বেজা’র নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এর বেশি কোন অগ্রগতির খবর জানা নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা, মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদের সভাপতি এ্যাডভোকেট তানজিলুর রহমান এনাম বলেন, রেলওয়ে বিভাগের থেকে জমি ক্রয় করা হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন বেজার অধিগ্রহণকৃত এই জমি। কিন্তু দুঃখেরর বিষয় দীর্ঘদিন ধরে এ জায়গায় কাজের কোন অগ্রগতি নেই।
ভেড়ামারা রেল বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু দাউদ বলেন, জমি অধিগ্রহণের পর কিছু দিন ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের তোড়জোড় ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাসদের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে এটি বাস্তবায়ন মুখ থুবড়ে পেড়েছে।
ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার যে উদ্যোগ এটা সম্পূর্ণ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকাশ কুমার কুন্ডু জানান, ভেড়ামারায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ল্েয অনেক আগেই জমি বেজার নামে দিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বাস্তবায়নের েেত্র এখন পর্যন্ত তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।