স্টাফ রিপোর্টার
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কাছে স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীরা ভাড়াই চালিত যন্ত্রের মত কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেন দলটির একাধিক নেতা। কেন্দ্রিয় ভাবে ভোট বর্জনের ঘোষনা থাকলেও ব্যক্তিগত সার্থের অনেক নেতা বাড়ির আঙিনায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর অফিস বানিয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। তবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেলা বিএনপি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে খোকসা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ভোট গ্রহন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রতিদ্ব›িদ্ব হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। চেয়ারম্যান পদে বিএনপির প্রার্থী নাই। এ সুযোগ কাজে লাগাতে বিএনপি ভোট ব্যাংক খ্যাত এলাকার গুলোর নেতাদের কাছে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের দ্বিধা বিভক্ত নেতা ও প্রার্থীরা। তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) সামান্য কিছু সহজ শর্তে ত্রি-দ্বিধা বিভক্ত বিএনপি নেতাদের ছোট ছোট অংশ কজ্বিতে নিতে সক্ষম হন।
মহিলা ভাইস চেয়ানম্যান পদের প্রার্থী বহিস্কৃত জেলা মহিলা দলের নেত্রী ইসরাত জাহান পূনম নিজের মত করে ভোটের মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি টানা তিনবার এইপদে নির্বাচিত হয়েছেন। পারিবারিক ও দলীয় ইমেজ কাজে লাগিয়ে তিনি প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তার বহিস্কার আদেশ নিয়ে দলীয় কর্মীদের মাথা ব্যথা নেই। দলীয় কর্মীরা ভোট দিতে গেলেই তাকেই প্রথম বিবেচনায় রাখবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই নারী প্রার্থী গুরুত্ব পূর্ণ বলেও মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত এ উপজেলায় ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি ইতিবাচক নাও হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ আব্দুল মান্নান বলছেন, বিগত উপজেলা নির্বাচনে অনেক ভোটার শুধু বিএনপি নেত্রী ইসরাত জাহান পূনমকে ভোট দিয়ে ছিল। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের অনেক ভোট নষ্ট পাওয়া যায়। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি ভোটাররা চেয়ারম্যানের ভোট নষ্ট করে দেয় কী না তা নিয়ে সংশয় আছে বলেও মনে করছেন তিনি। বর্তমান সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত একাধিক নির্বাচনে বিএনপির নেতারা আওয়ামী লীগের নেতাদের হয়ে কাজ করেছে। এবাও তার ব্যত্বয় ঘটেনি।
দলটির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, খোদ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ আমজাদ আলী, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান কাজল, যুগ্ম আহবায়ক মমিনুর রহমান মমিন, মাসুদ আহসার শিবলী, আলাউদ্দিন খান সহ প্রায় ১ ডজন নেতা আওযামী লীগের নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থীর হয়ে কাজ করছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপি নেতারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতাদের লেজুর বৃত্তি করার কথা অস্বীকার করলেও সরেজমিন পেক্ষাপট ভিন্ন। শিমুলায়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রহিম উদ্দিন খানের পক্ষ নিয়েছেন উপজেলা বিএনপির হেবিওয়েট নেতারা। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক মমিনুর রহমান মমিন নিজের বসত বাড়ির প্রবেশ পথে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রহিম উদ্দিন খানের দোয়াত কলম মার্কা প্রতীকের অফিস করেছেন। সারিবদ্ধ ভাবে প্রায় শ খানেক চেয়ার সাজানো হয়েছে সেখানে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী আড্ডা চলে। এইক প্রার্থীর হয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির আর এক প্রভাব শালী নেতা আলাউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। প্রায় ১ সপ্তাহ আগে তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন।
উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক রাকিবুল হাসান রাজিব জানান, তার কাছে যেসব নেতারা আদর্শ ছিল তারা সবাই আওয়ামী লীগ নেতাদের ভোট করছে। অবস্থা দেখে মনেহচ্ছে বিএনপি নেতারা ভাড়াই চালিত হয়ে গেছেন। বিএনপির আহবায়ক সদস্যসচিব সহ প্রথম কতারের অনেক নেতাই আওয়ামী লীগের হয়ে ভোট করছে। অনকে নেতা নিজের লোকদের ভোট করতে নির্দেশ দিয়ে খোকসা ছেড়েছে। “বিশেষ করে বিএনপি নেতা আলাউদ্দিন খানের মত নেতাও আওয়ামী লীগের এক নেতার নির্বাচলে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন।”
উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মনিনুর রহমান মমিন বলেন, তিনি বা তার দলের কোন নেতা আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভোট করছেন না। বিএনপির সাধারন ভোটার সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে ভোট করছেন। নিজের বাড়ির সামনে এক প্রার্থীর অফিসের ব্যাপারে কোন সদউত্তর দিতে পারেনি ওই নেতা। শুধু বলেন আত্মী স্বজন আছে না।
বহিস্কৃত জেলা মহিলাদরের সহসভাপতি ইসরাত জাহান পুনম বলেন, দলের মধ্যে বিরোধী প্রতিপক্ষ সোসাল মিডিয়া ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দলীয় ইমেজের মতই তার পারিবারিক ইমেজ ভোটের মাঠে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন দলীয় নেতাদের বিরোধীতার মধ্যে তিনি টানা তিনবার ভাসই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারও তার বিজয় নিশ্চিত। তাই বিরোধী পক্ষা তার বিপক্ষে অপপ্রচার নিয়ে ব্যস্ত।
কেন্দ্রিয় ছাত্রদলের সাবে অর্থ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, স্থানীয় বিএনপির প্রথম সাড়ের নেতারা কেন্দ্রিয় ভোট বর্জনের সিদ্ধন্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগর চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট করছেন বলে শুনেছেন। তারা যদি কারো ভোট না করে থাকেন তবে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মীদের জানিয়ে দিক তারা কেন্দ্রে সিদ্ধান্তের সাথে একমত আছেন। কিন্তু তা না করে নিরবে ভোট করছেন।
বিএনপির নেতা আলাউদ্নি খানের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব মনিরুজ্জামান কাজল বলেন, বিএনপির নেতা মমিন তার কেস-কাবারি (মামলা) ঠিক করার জন্য একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে বলে শুনেছেন বলে স্বীকার করেন। এ ছাড়া নিজের দোষ খন্ড করার সময় বলেন, সাধারণ ভোটারা এসে যদি জানতে চায় কাকে ভোট দেবো। সে ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর হক রক্ষায় একটি বিশেষ প্রতীকে ভোট দেওয়া পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও স্বীকার করেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজে ও পরিবারের লোকেরা ভোট দিতে যাবে না।
উপরেজলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ আমজাদ আলী বলেন, সব গুজবের উপর চলছে। অনেক প্রার্থী বিএনপি নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। কেউ কেউ পারিবারিক বা সামাজিক ভাবে কোনো কোন প্রার্থীর পক্ষে ভোট করছেন। তবে নেতাদের মধ্যে কারো নামে কেউ রিপোর্ট করেনি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় ইসরাত জাহান পুনমতে দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলে, যে কোন নেতার বিরুদ্ধে রিপোর্ট হলে ২৪ ঘ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া তার নিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ খন্ড করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি অন্যের জন্য ভোট করতে যাবো কেনো? আমি নিজেও প্রার্থী হতে পারতাম। আমাদের ভোট ব্যাংক আছে।’ বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক মমিন সম্পর্কে বলেন, তার সাথে অনেক দিন যোগাযোগ নেই, সে কি করছে তা নিশ্চিত নয়।
এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজন আওযামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী।
খোকসা উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। যার মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার রয়েছে।