কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
ঘাঁস কাটতে গিয়ে প্রায় চার ফিট লম্বা রাসেল ভাইপার সাপকে আধামারা করে এক কৃষক। পরে স্থানীয় লোকজন সাপটির গলাই প্লাস্টিকের দড়ি পেঁচিয়ে গাছে ঝুলিয়ে প্রায় সাড়ে আট ঘণ্টা ধরে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলেন। এরপর সাপটির পেটে বাচ্চা আছে কি না? তা পরীক্ষা করে দেখতে সাপটির পেট বেøড দিয়ে চিড়ে ফেলেন এক পশু পল্লী চিকিৎসক। অত:পর সাপটিকে পুড়িয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর বটতলা নামক স্থানে মঙ্গলবার সকাল ১০ থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্তু এ ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ আবার এসব দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দিলে ঘটনাটি ভাইরাল হয়। তবে বিষয়টি অমানবিক ও আইনবিরোধী বলে দাবি করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পরিবেশবিদরা।
আর গ্রাসবাসী বলছেন, সাপটি ভয়ংকর ও বিষধর হওয়ায় লোকজনের মাঝে পরিচিত করতে এবং সকলকে সচেতন করতে গাছে ঝুলিয়ে মারা হয়েছে।
উপজেলা বনবিভাগ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, এভাবে একটি জীবকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে পেট চিড়াই করার ঘটনাটি আইন বিরোধী ও নেক্কারজনক। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি।
সরেজমিন ঘুরে ঘুরে জানা গেছে, সকাল ১০ টার দিকে কল্যাণপুর এলাকার মোক্তার হোসেনের ছেলে জিয়াউর রহমান নিজ জমিতে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। সেসময় তিনি ঘাসের জমিতে একটি রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পান। এরপর সাপটি হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে আধামরা করেন এবং তাঁর ভাই নাসির উদ্দিনকে ফোন দেন। পরে স্থানীয়রা সাপটিকে বটতলা নামক স্থানে নিয়ে এসে একটি গাছে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়। এরপর সাপটির পেটে আরো বাচ্চা আছে কি না? তা দেখতে পেট চিড়াই করেন স্থানীয় পশু পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক। এরপর সাপটিকে পুড়িয়ে মাটা চাপা দেন স্থানীয়রা।
কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, নিজ জমিতে ঘাস কাটার সময় সাপটি তার দিকে ঝাপিয়ে পড়ছিল। সেসময় তিনি সাহস করে হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে আধামরা করেন। এরপর ফোনে স্থানীয়দের ডাকেন তিনি। এরপর স্থানীয়রা সাপটিকে গাছে ঝুলিয়ে রেখে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।
বটতলা এলাকার মুদি দোকানি বকুল হোসেন জানান, সাপটি বিষধর ও ভয়ংকর। সেজন্য জনগণকে সচেতন করতে এবং পরিচিতি বাড়াতে সাপটিকে সবাই মিলে অনেকক্ষণ গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। পরে এক ডাক্তার পেট চিড়াই করেন। অতপর পুড়িয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
এভাবে বেøড দিয়ে সাপটির পেট চিড়াই করা ভুল হয়েছে বলে জানান পল্লী চিকিৎসক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানান, সাপটির পেট মোটা ছিল। পেটে বাচ্চা আছে কি না? তা দেখার জন্য সবাই তাকে পেট চিড়াইয়ের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে পেট কাটাটা তার ভুল হয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে রাসেল ভাইপার সাপের খবরে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। সবাই ঘরে থাকতে এবং মাঠে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলেন জানিয়েছেন কৃষক রবিউল ইসলাম ও গৃহিণী সেবা রাণী বিশ্বাস।
ঘটনাটি বন ও প্রাণি সংরক্ষণ আইন বিরোধী বলে জানান বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি সাহাবউদ্দিন। তিনি জানান, বড় কোনো জনসচেনতা নেই। এভাবে আমরা প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি। ভবিষ্যতে এর ক্ষতিপূরণ কোনোদিন শোধ হবেনা।
এমন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, মানুষ আতঙ্কে অনেক কিছু করে ফেলেন। সকলকে আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানান তিনি।