স্টাফ রিপোর্টার
দশম শ্রেণির অদম্য ছাত্রী শোভা খাতুন। নিজের বাই সাইকেল নেই, তিন কিলোমিটার দূরে স্কুলে যাওয়ার ভ্যান ভাড়া টাকাও দিতে পারেনা বাবা। তাই প্রতিদিনই সহপাঠিদের বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করে। সেই সহপাঠিদের বাইসাইকেল তাকে বিভাগীয় পর্যায়ে দ্রুত বাইসাইকেল রেসে অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দিয়েছে। চাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বৃহস্পতিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত বিভগীয় প্রতিযোগীতায় অংশ নেবে সে।
খোকসা উপজলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বনগ্রাম মধ্যপাড়ার প্রান্তি কৃষক আব্দুল হান্নানের দুই সন্তানে মধ্যে শোভা খাতুন বড়। বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোটবেলায় খালা বাড়ি থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় শখের বসে বাই সাইকেল চালানো শিখেছিল। এখন নিজে স্কুলে যাওয়া আসার ভ্যান ভাড়া থাকেনা। তাই প্রতিদিন তিন কিলোমিটার দূরের বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কাস করতে যায় অন্য শিক্ষার্থীর বাই সাইকেল চালিয়ে। সে ছোট হোক আর বড় ছাত্র-ছাত্রী হোক। চলতি মাসে অনুষ্ঠিত ৫২ তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় দ্রুত বাইসাইকেল রেস ইভেন্টে অংশ নেয় শোভা। স্কুল, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বিজয়ী হয়ে সে এবার বিভাগীয় আসরে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে নিয়েছে।
বুধবার সকালে তখন কুয়াসসার ঘোর কাটেনি। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮কিলোমিটার দূরের গ্রাম বনগ্রাম মধ্যপাড়ায় স্কুল ছাত্রী শোভার বাড়ি গিয়ে তার বাবা হান্নানকে পাওয়া গেলো না। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই তিনি ইট ভাটার কাজে চলে গেছেন। কয়েকটি খুপড়ি ঘরের মাঝে এক চিলতে উঠনে বসে একটি নতুন বাই সাইকেল মোছায় (পরিস্কারে) ব্যস্ত শোভা। এই সাইকেল নিয়ে সে প্রতিযোগীতায় অংশ নেবে। ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন ওই ছাত্রীর মা ময়না খাতুন ও ছোট ভাই রিফাত। প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্য নিজের সাইকেল না থাকায় হত দাড়িদ্র ওই ছাত্রীকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার বাই সাইকেলটি কিনে দিয়েছে।
শোভা জানায়, এ বছর নিজের স্কুলের “জিমি” নামের এক বড় আপুর অনুপ্রেরণায় সে শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় অংশ গ্রহন করে। ওই সিনিয়র আপু (ছাত্রী) তাকে প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে নিজের বাই সাইকেলটি দিয়েছিলেন। সেই সাইকেল নিয়ে সে জেলা পর্যায় পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতীযোগীতায় অংশ নিতে পারায় সে আনন্দিত। সে বিভাগীয় পর্যায়ে সফল হওয়ার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছে।
শোভা আরও জানায়, খালা বাড়িতে থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় শখের বসে সে বাই সাইকেল চালানো শিখেছিল। কিন্তু মাধ্যমিকে ওঠার পর ভ্যান ভাড়ার অভাবে প্রতিদিনই সহপাঠি, ছোট-বড় শিক্ষার্থীর বাই সাইকেল চালিয়ে তিন কিলোমিটার দূরে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কাস করতে যায়। বিভার্গীয় পর্যায়ে প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়ার সুবাদে উপজেলা প্রশাসন তাকে সাইকেল কিনে দেওয়ায় সে খুশি হয়েছে। তাকে আর অন্যের সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে হবে না। ইচ্ছেমত যে কোন প্রতিযোগীতায় অংশও নিতে পারবে।
ছাত্রীর মা ময়না খাতুন, মেয়ে শোভার সফলতায় খুবই আনন্দিত হয়েছেন। সে (শোভা) আরো উপরে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই মা। তিনি জানান, অনেক দূর স্কুল। স্কুলে যাওয়া আসার ভ্যান ভাড় দিতে পারতেন না। তাই মেয়ে অন্যজনের চালক হয়ে বাই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত। নিজের সাইকেল কেনার স্বক্ষমতাও নেই।
বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জমির বলেন, মানবিক বিভাগের মেধাবী ছাত্রী শোভার ইভেন্ট বাই সাইকেল রেস। এখানে কারচুপি করার সুযোগ খুবই কম। সে কারণে এই ইভেন্টে তার স্কুলের মেধাবি ছাত্রী শোভা ভালো করবে বলে তিনি আশা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ছাত্রী শোভা যখন উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়েছিল তখন তার ‘ধার’ করা সাইকেলটা বারবার সমস্যা করছিল। এখন ওর একটা নতুন বাই সাইকেল দিয়েছি। নিজের সাইকেল থাকায় তার আত্ম বিশ্বাস বেড়েছে। বিভাগীয় পর্যায়ে ও আরো ভালো করবে বলে তিনি আশা করছেন।