সম্পর্ক

0
147
ডঃমুন্সী মুর্তজা আলী

ডঃ মুন্সী মুর্তজা আলী

“সম্পর্ক” একটিমাত্র শব্দ। এই একটি শব্দ মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং অনেকগুলো বাক্য থেকেও বৃহৎ। “সম্পর্ক” এর প্রথম অক্ষর “স”।“সহজ” এর প্রথম অক্ষরও “স”। “স” অক্ষর দিয়ে মানে সহজভাবে সম্পর্কশুরু হয়। (কখনো কখনো সম্পর্ক জটিলতার মধ্য দিয়েও শুরু হয়। কিন্তু আজ সেদিকে যাচ্ছি না)। তবে জীবন চলার পথে এ সম্পর্ক সহজ থাকে না। কারণ হলো, সম্পর্কের “স” অক্ষরের পরে মানে মাঝখানের অক্ষরটি হলো যুক্তাক্ষর “ম্প”। অর্থ্যাৎ যুক্ত অক্ষরের (ম্প) মত জটিল অক্ষর দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলা পথের মাঝে জটিল সময় ও চরাই উৎরাই পেরোতে হয়।

প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিঘাত পেরিয়ে সম্পর্কের শেষ অক্ষর “ক” মানে “কালের ¯্রােত” এর মত এই সম্পর্ক কখনো বিলীন হয়। আবার কখনো টিকে থাকে।

বিভিন্ন মানুষের সাথে সম্পর্ক বিভিন্নভাবে গড়ে ওঠে। কখনো আত্মীয়তার ভিত্তিতে, আবার কখনো রক্তের উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আত্মীয় ও রক্তের সম্পর্ক বাদেও মানুষের মধ্যে এক ধরনের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেটা হলো “আত্মা”র সম্পর্ক। আত্মীয় ও রক্তের সম্পর্কের মধ্যেও আত্মার সম্পর্ক থাকে। তবে আত্মীয় ও রক্তের সম্পর্কের মধ্যে কখনো কখনো এই আত্মার সম্পর্কে ছেদ পড়তে পারে।

কখন বুঝবেন আত্মীয় ও রক্তের সম্পর্কের মধ্যে ছেদ পড়েছে কিংবা সেই সম্পর্ক আত্মীক হয়েছে? দুটো উদাহরন দেয়া যাক।

যেমন ধরুন, আপনি আপনার রক্তের সম্পর্ক, আত্মীয়, বন্ধু বা প্রিয়তমা থেকে দূরে আছেন। সেই মুহুর্তে আপনি হয়তো আপনার আত্মীয়, বন্ধু বা প্রিয়তমাকে গভীরভাবে মনে মনে অনুভব করছেন। যদি দূর থেকেও একে অপরকে গভীরভাবে অনুভব করেন এমনকি পৃথিবীর অন্যদিক বা অপর প্রান্তথেকেও যদি আপনার কাছের জন আপনাকে গভীরভাবে অনুভব করে। তাহলে বুঝবেন, আপনার সাথে আপনার আত্মীয়, প্রিয়তমা বা বন্ধুর সাথে আত্মার সম্পর্ক অর্থাৎ প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই সম্পর্ক হতে হয় পারস্পরিক ও দ্বিপাক্ষিক। একপক্ষের মাধ্যমে এই আত্মীক সম্পর্ক তৈরী হয়না। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে। আপনি হয়তো কোন এক বিকালে আপনার আত্মীয়, বন্ধু বা প্রিয়জনকে গভীরভাবে অনুভব করছেন। সেই মুহুর্তে আপনার আত্মীয় বন্ধু বা প্রিয়জনও দূর থেকে আপনাকে গভীরভাবে অনুভব করবেই। যদি আপনাদের মধ্যে আত্মীক সম্পর্ক থাকে। ভেবে দেখুন! এরকম কোন ঘটনা যদি আপনার জীবনে ঘটে থাকে। তাহলে বুঝবেন, আপনার সাথে সেই মানুষটির আত্মীক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আপনি জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আপনার প্রিয় মানুষকে ফোন করবেন বলে ফোনটা হাতে করেছেন। সেই মুহুর্তে যদি আপনার প্রিয় মানুষটি ফোন করে। তাহলে বুঝবেন, এটা আত্মীক সম্পর্ক। এই সম্পর্ক উভয়ের ভালবাসা ও অনুভূতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। তাই আত্মার সম্পর্ক এমন এক সম্পর্ক, দূরে থাকলেও সে সম্পর্ক মরে না। আর যদি কারো সাথে আত্মীক সম্পর্ক গড়ে না তুলতে পারেন, তাহলে আপনি কারো মনে অবস্থান করতে পারবেন না। যেটা প্রকৃত মানুষ হিসেবে আপনার জন্য যন্ত্রণার। আর প্রকৃত মানুষ না হলে আপনি এই যন্ত্রনা বোঝার সক্ষমতা ও অর্জন করতে পারবেন না। এটা বোধের ব্যাপার। এই প্রখর বোধ আপনার থাকতে হবে। আর এই সম্পর্কে যখন চিড় ধরে তখন তাদের মধ্যে অন্য সম্পর্ক থাকলেও আর আত্মীক সম্পর্ক থাকে না। এমনকি যাদের সাথে “আত্মা”র সম্পর্ক থাকে, তাদের সাথে আপনা আপনি এই সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। এটা একটা সাধনা।

এবার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথা ধরা যাক। স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে আইনগত কাঠামোর মাধ্যমে। তবু তাদের মধ্যে সম্পর্ক হলো দেহ, মন, মস্তিস্ক, বন্ধুত্ব, আত্মীয় ও আত্মার সম্পর্ক। স্বামী যখন দূর থেকে স্ত্রী’কে অনুভব করবে, এবং সেই সময় স্ত্রীও যদি স্বামীকে অনুভব করে; সেটা হলো আত্মীক সম্পর্ক। দু’জন কাছাকাছি থাকলে ও এই আত্মজ সম্পর্ক অটুট থাকে। আবার দু’জন কাছাকাছি থেকেও যদি সেই সম্পর্ক অনুভব না করে, তাহলে বুঝতে হবে তাদের সম্পর্কে চিড় ধরেছে।

কিভাবে সম্পর্ক ধরে রাখবেন? ছাড় দেওয়া শিখবেন। এসব আত্মার লোকদের সমালোচনা করবেন না। তাদের বিপদে এগিয়ে যাবেন। ছোটখাট ঝামেলা সত্ত্বেও এই সম্পর্ক ধরে রাখবেন। মনে মনে মঙ্গল কামনা করবেন। আপনি বুঝতে পারবেন, কার সাথে আপনার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এখানে বিধাতা প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। তাই সবার সাথে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। যার সাথে যখন আত্মিক সম্পর্ক হবে না তখন বুঝবেন, এটা বিধাতার আশির্বাদ। বিধাতার আশির্বাদে মানুষে মানুষে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আত্মা হলো বিধাতার প্রতিনিধি। এটাই শ্বাস্বত ধারনা ও সাধনা। অনেক সাধনার পর মানুষে মানুষে এই আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও টিকে থাকে। এই “আত্মার সম্পর্ক” হলো প্রকৃত বন্ধুত্বের সম্পর্ক। পৃথিবীর আত্মীয়, রক্ত ও আত্মার সম্পর্কের মানুষেরই প্রকৃত বন্ধু। তাই আসুন, নিস্কাম ও নিঃস্বার্থভাবে আমরা একে অপরের সাথে আত্মীক ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলি।

অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।