সরকারি বরাদ্দে প্রতিবন্ধি আজাদের দোকান ঘরই হয়নি, আবার ব্যবসা

0
66

স্টাফ রিপোর্টার

ভিক্ষুক পুনঃবাসন প্রকল্পের আওতায় ব্যবসার জন্য নগদে ১৮ হাজার টাকা, একবান্ডিল ঢেউটিন সাথে ঘর তৈরীর কিছু কাঠ পেয়েছিলেন রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত ও এক পা হারানো প্রতিবন্ধি আবুল কালাম আজাদ। সরকারি টাকার সাথে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় দোকান ঘর তৈরী কাজ শুরু করেছিলেন। অর্থাভাবে ঘরটি আর তৈরী করতে পারেনি। ব্যবসাও শুরু করতে পারেনি। তাই আবার ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমেছেন। এ প্রকল্পের সুবিধা ভোগীদের সবাই ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় ফিরে গেছেন।

ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জীবন মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় ভিক্ষুক পুনবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি চালু হয় ২০১৬ -১৭ অর্থ বছরে। আট বছরে সরকারের এ প্রকল্পে সুবিধা পেয়েছেন দুই শতাধিক ভিক্ষারী। কিন্তু প্রতিদিনই গ্রামগঞ্জ ও হাটা বাজারের দল বেঁধে ভিক্ষা করতে দেখা যায় অসংখ্য ভিক্ষারীকে।
স্বামী অসুস্থ হয়ে পরায় প্রায় ৫ বছর ভিক্ষা করছেন জয়ন্তী হাজরা ইউনিয়নের মাসালিয়া গ্রামের আমেনা বেগম। এবছর অসুস্থ্য স্বামীর জন্য শীতের একটা কম্বল পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কম্বলও তার ভাগ্যে জোঠেনি। একই গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি রেহানা খাতুন। স্বামী পরিতক্তা এই নারীও ভিক্ষুক পুনবাস প্রকল্পের আওতায় পরেনি। তার মত বৃদ্ধা রেবা, বিলকিস, জয়নব, সারথি রানি মন্ডলও এ প্রকল্পের সহায়তা পায়নি।

উপজেলায় সমাজ সেবা অফিসে ভিক্ষাবৃত্তি পেশার সাথে জড়িত বা উপকার ভোগী ভিক্ষুকের সংখ্যা জানাতে পারেনি। তাদের কাছে গত দুই অর্থ বছরের ৩২ জন সুবিধাভোগী ভিক্ষুকের তালিকা আছে। সমাজ সেবার তালিকায় রেল দুর্ঘটনায় দুই হাত ও এক পা হারানো প্রতিবন্ধি আবুল কালাম আজাদকে ব্যবসার জন্য সর্বোচ্চ সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে সহায়তার টাকায় ব্যবসাতো দূরের কথা দোকান ঘরের মেঝে পর্যন্ত তৈরী করতে পারেন নি। ঘর তুলতে গিয়ে ভিক্ষা করে জমানো সব টাকা তার শেষ হয়ে গেছে। দুই শিশু পুত্র আর স্ত্রীসহ ৪ জনের সংসার চালাতে আবার ভিক্ষায় বেড় হচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৬ জন ভিক্ষুককে প্রথম বার পূনবাস প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর প্রতিবছরই নতুন বরাদ্দ এসেছে। প্রায় ২ শতাধিক ভিক্ষুককে প্রকল্প থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, উপজেলারা ভিক্ষুকের তালিকা তাদের কাছে আছে। তবে তালিকাটি বিগত সরকারের আমলে করা।

উপজেলা সদর থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরের পদ্মা নদীর তীরের গোপগ্রাম ইউনিয়নের বরইচারা গ্রাম। এই গ্রামের রমজান মৃধার ছেলে প্রতিবন্ধি আবুল কালাম আজাদ। স্ত্রী আসমা ও দুই পুত্র রোহান ও রুমনসহ তিনি গ্রামেই বাস করেন। আগে কুষ্টিয়া জেলা শহরে রিকসা চালাতেন। ২০০৯ সালে শহর থেকে বাড়ি ফেরার সময় ট্রেনের নিচে পরে ২টি হাতসহ বাম পা (কাটা পরে) হারান।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন প্রতিবন্ধি আবুল কালাম আজাদের বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। সকালেই তিনি ভিক্ষার ঝুলি হাতে উপজেলা সরের দিকে রওনা করেছেন। পাকা রাস্তার সাথে নিজের বসত ঘরের উত্তরে বাড়ির জমিতেই আধাপাতা ১৫ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া দোকান ঘর নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন। সবেমাত্র ঘরের পোতা পর্যন্ত উঠেছে। অর্থাভাবে কয়েক মাস আগেই দোকান তৈরীর কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

প্রতিবন্ধি আজাদের স্ত্রী আসমা খাতুন জানান, তার স্বামী ভিক্ষুক ছিল না। ভাগ্যের দোষে প্রতিবন্ধি হয়ে গেছে। ছোট ছোট দুই ছেলে আর সংসারের তাগিদে মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর গত বছর ব্যবসার জন্য সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে নগদ ১৮ হাজার টাকা, একবান্ডিল ঢেউটিন সাথে ঘর তৈরীর কিছু কাঠ পেয়ে ছিলেন। যা দিয়ে দোকার ঘরের পোতা পর্যন্তও হয়নি। সরকারি টাকার সাথে ভিক্ষা করে জমানো ১৫ হাজার টাকা লাগিয়ে ঘরটির পোতা পর্যন্ত করা সম্ভব হয়েছে। টাকা না থাকাই দোকান ঘর করা হয়নি। ব্যবসা করবেন কি দিয়ে ?

খোকসা বাস স্ট্যান্ডে প্রতিবন্ধি আজাদের সাথে দেখা করা হয়। তিনি জানান, সরকারি টিন আর টাকায় তার দোকান ঘরকরাই হয়নি। ব্যবসার পূজির আগে তার দোকান ঘরটি ঠিক করা দরকার। ঘর তৈরী করতে তার আরো প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা প্রয়োজন। সাথে ব্যবসার পুজি দরকার। সবমিলিয়ে দুই-আড়াই লাখ টাকা হলে ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। কিন্তু এখন তার বাড়ির লোকের দুই বেলার খাবার দিতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অন্যদের মত সেও ভিক্ষা করছেন। সরকারি সাহার্যের দু’টো মুরগি বা হাঁস, একটা ছাগল অথবা গরুর বাছর দিয়ে কেউ কিছুই করতে পারেনি। তাই তার মত প্রায় সবাই ভিক্ষা করছেন।

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ভিক্ষুক পুনবাস ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি উপকার ভোগীদের কল্যানেই এসেছে। তবে কাক্সিক্ষত সফলতা আসতে সময় লাগবে। তিনি জানান, প্রকল্পটি অনেক আগে চালু হলেও তার কাছে গত দুই অর্থ বছরের ৩২ জন উপকার ভোগীর তালিকা আছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই আছেন বলে দাবিও করেন তিনি।

আরও পড়ুন – শ্রদ্ধা নিবেদন

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন সুদিপ্ত রায় দ্বিপন বলেন, প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা ফাইল দেখে জানাতে হবে।