দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চলমান অসহযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘিরে সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিনত হয়েছে সারাদেশ। বেড়েই চলছে হতাহতের সংখ্যা। আন্দোলনের প্রথম দিন রবিবার (৪ আগস্ট) সবশেষ ৭৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরেই ১৩ পুলিশ ও ৩ শিক্ষার্থী, একই জেলার রায়পুরে ৫ আওয়ামী লীগ নেতাসহ ছয়জন, ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষার্থীসহ নিহত ৪ জন, নরসিংদীর মাধবদীতে আওয়ামী লীগের ৬ নেতাকর্মী, ফেনীতে ৭ জন, রংপুরে ৪ জন, মুন্সিগঞ্জে ৩ জন, বগুড়ায় ৩ জন, মাগুরায় ৪ জন, ভোলায় ৩ জন, পাবনায় ৩ জন, সিলেটে ২ জন, কুমিল্লায় ১ জন, জয়পুরহাটে ১ জন ও বরিশালে ১ জনসহ ৭৯ জন নিহত হয়েছে বরে খবর পাওয়া গেছে।
জেলায় জেলায় নিহতের কিছু তথ্য:
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ‘গণপিটুনিতে’ ১৩ জন পুলিশ সদস্য এবং গুলিতে ৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে থানায়। প্রাথমিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিচয় পাওযয় যায়নি। তবে নিহতদের মধ্যে এসআই, ওসিও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকের এখন পর্যন্ত কোনো হদিস মেলেনি।
পাবনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পাবনায় আওয়ামী লীগ নেতার গুলিতে তিনজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুরে শহরের এ হামিদ রোডের ট্রাফিক মোড়ে বিক্ষোভ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পাবনা সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নিহতরা হলো, মহিবুল (১৬), জাহিদ (১৯) ও ফাহিম।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষাথীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ঘোষিত কর্মসূচি পালন করছিল। এ সময় পেছন থেকে পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিবলী সাদিক পৃথক হামলা চালায়। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন – শিক্ষামন্ত্রীর চশমা হিলের বাসভবনে হামলা
মাগুরা: মাগুরায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
রংপুর: রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরসহ ৪ জন নিহত এবং ১০ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা-উপজেলায় উত্তেজনার মাঝে প্রশাসন নিষ্কিয় ছিল। রাজপথ রক্তাক্ত হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাউকে দেখা যায়নি।
রবিবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শহরের বাজার স্টেশন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটলে পুরো শহর দখল করে নেয় আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা। এ সময় ড. জান্নাত আরা হেনরীর বাসা, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাসা, আওয়ামী নেতা বিমল কুমার দাসের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া জেলা জজ আদালত, এসিল্যান্ড অফিস, মুক্তির সোপান স্মৃতিসৌধ, শিল্পকলা একাডেমিসহ শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে চয়ন ইসলাম এমপির বাসা ভাঙচুর করা হয়। বেলকুচি ও উল্লাপাড়া আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়।
বরিশাল: বরিশালে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়িতে হামলার সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় মহানগর ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি টুটুল চৌধুরী নিহত হয়েছেন। পরে আন্দোলকারী প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের বাড়ির সামনে ১১টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।
ভোলা: ভোলার নতুন বাজারে আইনশৃঙ্খলনা রক্ষাকারী বাহিনী গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে জসিম উদ্দিন (৭০) নামে একজন ছাতা শ্রমিকের পরিচয় জানা গেলেও দুইজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের বয়স ২০ থেকে ২২ বছর বলে জানা গেছে। রবিবার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় আন্দোলনকারীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে আন্দোলনকারীরা আ.লীগ অফিস, শ্রমিক লীগ অফিস ও পৌরসভা ভাঙচুর চালিয়ে দুটি গাড়িতে আগুন দেয়। এ সময় ডিসি অফিসের দুটি গাড়িতেও আগুন দেয় তারা।
বগুড়া: বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। রবিবার বগুড়ার সাতমাথায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযাগ আন্দোলনের প্রথম দিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে মেহেদী হাসান নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৭০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতদের জয়পুরহাট ২৫০ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ফেনী: ফেনীতে অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থকদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ৭ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। রবিবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী মহিপাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে রবিবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলছে। গতকাল শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশে অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। এর আগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রবিবার থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে এই ঘোষণা দেয়া হয়। এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।