স্কুল ছাত্র অনিক এখন নৈশ্য প্রহরী

0
83
স্কুল ছাত্র অনিক

স্টাফ রিপোর্টার

দশম শ্রেণির মেধাবি ছাত্র অনিক। বাজারে নৈশ্য প্রহরীর চাকুরি করে। দিনের বেলায় এ বাড়ি সে বাড়ি বিদ্যুতের কাজ করে। চার জনের সংসার চালিয়ে গোদ রোগ আক্রান্ত বাবা আবুল কালাম বিশ্বাস (৪৫) এর চিকিৎসা করাতে পারছে না। সংসারের ঘানি টানতে সে ক্লান্ত। অসুস্থ্য কালামকে তিন বছর আগে প্রতিবন্ধির কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এক কিস্তিও ভাতার টাকা পাননি।

কুষ্টিয়ার খোকসা জানিপুর সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনির ছাত্র অনিক বিশ্বাস। উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমলাপুর গ্রামের আবুল কালামের বড় ছেলে। ছোট ভাই অভি ও মা হিরা খাতুনকে নিয়ে তাদের চারজনের সংসার। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে বাবা আবুল কালাম গোদ রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার দুটি পা থেকে হাটু পর্যন্ত ৬/৭টি বড় বড় টিউমার আকৃতির ধারণ করেছে। সম্প্রতি তার পায়ের সব টিউমারের মুখ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে তার ডান পায়ের গুড়ালির কাছে একটি টিউমার ফেটে গেছে।

পরিবারের সাথে অনিক

এক সময়ের গ্রীলের মিস্ত্রীর কাজ করতেন আবুল কালাম। শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে এখন তাকে কেউ কাজে নেয় না। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে বাজারের নৈশ্য প্রহরীর কাজ নেন। হাটতে না পারায় বড় ছেলে অনিককে নিজের কাজে স্থলাভিশিক্ত করেছেন। এ পর থেকে অনিকের জীবন সংগ্রাম শুরু হয়েছে। রাতে বাজার পাহাড়া। দিনে ২ শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়া। এর পর অবসর সময়ে বৈদ্যতিক মোটর ফ্যানের কয়েল মেরামত থেকে শুরু এ বাড়ি সে বাড়ি লাইন মেরামতের নানা ধরনের বিদ্যুতের কাজ করে।

বৃহস্পতিবার তখন গভীর রাত। হাতে টর্চ লাইট, বাঁশিতে ফু দিতে দিতে থানা মোড়ের দিকে এগিয়ে আসছিল এক কিশোর। কাছে আসতে নিজের পরিচয় দিয়ে অনিক জানান, সে স্থানীয় সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে ছাত্র। বাবা নৈশ্য প্রহরীর চাকুরি করতেন। কিন্তু সাড়ে ৩ মাস আগে বাবা বেশী অসুস্থ হয়ে পরায় সে নিজে এখন বাজার পাহারার কাজ করে। তার বেতন ধরা হয়েছে ৮৫০০ টাকা। এই সামান্য বেতনে তার সংসার চলে না। তাই পড়া লেখার পাশাপশি বিকাল থেকে নিজের বাড়িতে ও অনন্যের বাড়ি গিয়ে বৈদতিক লাইন মেরামতের কাজ করে। সারা রাত জেগে বাড়ি ফিরে পড়া লেখা করা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছ। তবে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে সে।

অনিকের বাবা আবুল কালাম গোদ রোগে আক্রান্ত

অনিক জানায়, বাজার পাহারার বেতন নিয়ে সে নিজও বৈষম্যের স্বীকার। একই বাজারে অন্য এলাকার পাহারাদারের যে বেতন পান তাদের দলের পাহারাদারদের বেতন অনেক কম দেওয়া হয়। এ নিয়ে কথা তোলায় তাকে পাহারা থেকে বাদ দেওয়ার হুমকী দেওয়া হয়েছে। তার বাবার নামে তিন বছর আগে একটি প্রতিবন্ধি কার্ড হয়। কিন্তু ভাতা সুবিধা পায় না।

অনিকের বাবা আবুল কালাম বলেন, তারা পারিবারিক ভাবে গ্রীলের ভালো মিস্ত্রী ছিল। নিজে ও তার বাবা অসুস্থ্য হওয়ায় দোকান বিক্রি করে চিকিৎসায় ব্যয় করেছিলেন। এখন এক মুঠো ভাতের জন্য ১৫ বছরের ছেলেকে দিয়ে পাহারাদারের চাকুরি করাতে বাধ্য হচ্ছেন। তার ডান পায়ের গোড়ালির কাছের একটি টিউমার কয়েক সপ্তাহ আগে ফেটে গেছে। ক্ষত স্থান দিয়ে সারা বেলা পুজ রক্ত পরে। প্রতিদিনই হাসপাতাল থেকে ড্রেসিং করান। এখন আর হাসপাতালে যাওয়ার ভ্যান ভাড়ার টাকাও নেই।

তিনি আরও জানান, তার বাবা ও সে নিজেদের দোকান চালাতেন। অসুখে পরে দোকানটি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের কাছে যারা কাজ শিখেছেন তারা অনেকেই দোকানের মালিক। তারা এখন তাকে কাজে নেয়না।

অনিকের মা হিরা খাতুন বলেন, “দোকান বিক্রির টাকা দিয়ে তৈরী করা আধাপাকা ঘরটি তাদের কাল হয়েছে। এ ঘরের কারণে তারা এক টাকার সরকারী সাহায্য পায় না।” করোনা মহামারির সময়েও তারা কোন সাহায্য পায়নি। ওই সময় থেকে তার স্বামী কালাম বাজার পাহাড়ার কাজ নেয়। এখন আর হাটা চলা করতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে ছেলেটিকে বাজার পাহারার মত কঠিন কাজে দিয়েছেন। ছেলে যে বেতন পায় তা দিয়ে চার জনের সংসার চলেনো কঠিন। টাকার অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

কালামের প্রতিবন্ধি ভাতার বিষয়ে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, কালাম গত বছর অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এ বছর তার ভাতার প্রসেসিং চলছে। আশা করা যায় ১৫ দিনের মধ্যে তার হিসাব নম্বরে টাকা ঢুকে যাবে।