স্ত্রীর পরকীয়া জেরে তিন জনকে গুলি করে হত্যা করে সৌমেন

0
163

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিতভাবে স্ত্রী তার প্রেমিকাসহ তিন জনকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশের এএসআই সৌমেন রায়।

ঘাতক সৌমেনকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই মিলেছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে এই ট্রিপল মার্ডারে ঘটনা কুষ্টিয়াসহ সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

হত্যাকান্ডের পর খুলনার রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে সৌমেন এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। কারো ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় পুলিশ বিভাগ বহন করবে না বলে জানিয়ে তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় কোন ছাড় দেয়া হবে না। দোষীকে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতে হবে।

তথ্য অনুসন্ধানে সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা খাতুনের তিনটি বিয়ের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিহত আসমা কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের নাতুড়িয়া গ্রামের আমির আলী মেয়ে।

বাগুলাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বক্কর জানান, প্রায় একযুগ আগে কুমারখালী উপজেলার ভড়–য়াপাড়া গ্রামের ওয়াজ আলীর ছেলে সুজনের সাথে আসমা খাতুনের প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে তার একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতেই কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের সরোয়ারের ছেলে রুবেলের সাথে আসমার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরকীয়া এই সম্পর্কের জেরে প্রথম স্বামী সুজনকে ডিভোর্স দিয়ে রুবেলকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন আসমা খাতুন। দ্বিতীয় স্বামীর সংসারে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন আসমা।

রবিবার এএসআই সৌমেন আসমার সাথে দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে রবিনকেও গুলি করে হত্যা করে। দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সাথেও সংসার করা হয়নি আসমা খাতুনের। বনিবনা না হওয়ায় কয়েক বছর সংসার করার পরেই রুবেলকে ডিভোর্স দেন আছমা।

সূত্রে জানা গেছে, সৌমেন রায় উপ সহকারি পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে ২০১৬ সালের ১৩ মে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগদান করেন। এরপর কোন একটি মামলার তদন্তে আসমার বাড়িতে যান সৌমেন রায়। সেখান থেকেই তাদের পরিচয় এবং এক পর্যায়ে তাদের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সৌমেন রায়ের সাথে বিয়ের ব্যাপারটি স্থানীয়দের কাছে স্পষ্ট না হলেও তাদের চলাফেরা ও যোগাযোগের বিষয়টি তারা জানতেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আসমার মা হাসিনা খাতুনের সাথে কথা হয়। মেয়ে আসমা এবং ছোট ছেলে হাসানকে নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট এলাকায় বাস করেন। তিনি জানান, রবিবার সকালে সৌমেন আসমা এবং নাতি রবিনকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তারা এই হত্যাকান্ডের কথা জানতে পারেন।

নিহত আসমার ছোট ভাই হাসান জানান, ভাগনে রবিন বোনের দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সন্তান। হাসান দাবি করেন পাঁচ বছর আগে এএসআই সৌমেনের সঙ্গে তার বোন আসমার বিয়ে হয়। আসমা খাতুন এএসআই সৌমেনের দ্বিতীয় স্ত্রী। সৌমেনের প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁরা খুলনায় থাকেন। সৌমেনের বাড়ি মাগুরার শালিকা উপজেলার কসবা গ্রামে।

পুলিশসহ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সৌমেন রায়ের পাশাপাশি শাকিলের সাথেও আসমা পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। নিহত শাকিল চাপড়া ইউনিয়নের সাওতা কারিগর পাড়ার মিজবারের ছেলে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই শাকিলের সাথে আসমার পরকীয়া চলছিল। সম্প্রতি সৌমেন কুষ্টিয়ার হালসা পুলিশ ক্যাম্প থেকে খুলনার ফুলতলা থানায় বদলী হয়ে গেলে শাকিল আর আসমা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শাকিলের সাথে আসমার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে সৌমেন চরম ক্ষুদ্ধ হন। এ নিয়ে তিনি আসমাকে বেশ কয়েকবার শারীরিক নির্যাতনও করেন বলে জানা গেছে।

নিহত শাকিলের মা জানান, মাস দুয়েক আগে এক পুলিশ অফিসার অস্ত্র মাজায় করে তাদের বাড়িতে এসে বলেন, শাকিল তার বউয়ের সাথে মোবাইলে কথা বলে। যদি কথা বলা বন্ধ না করে তাহলে খবর আছে বলে শাসিয়ে যায়।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সৌমেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুলিশকে জানিয়েছে আসমা খাতুনের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরেই সে এই হতাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো তদন্ত চলছে। তদন্তের মাধ্যমে এই ট্রিপল মার্ডারের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

উল্লেখ্য, রবিবার বেলা ১১ টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকায় পুলিশের এএসআই সৌমেন রায় তাঁর সার্ভিস রিভলবার দিয়ে গুলি করে তাঁর স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), তার শিশু পুত্র রবিন (৬) ও আসমার প্রেমিকা বিকাশ কর্মী শাকিল খানকে (২৮) গুলি করে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের পর জনতা ঘাতক এএসআই সৌমেন রায়কে রিভলভারসহ আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম জানান, এই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় থানায় এখনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে মামলার প্রস্তুতি চলছে।