স্বামীর নির্যাতনে আহত গৃহবধূ আরজিনা মারা গেছে

0
115

স্টাফ রিপোর্টার

স্বামীর নির্যাতনে আহত গৃহবধূ আরজিনা (২৫) টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে অবশেষে মারা গেছেন। তার তিন মাসের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। গার্মেন্টস কন্যা আরজিনা সন্তান প্রসবের জন্য ছুটিতে স্বামীর বাড়ি এসেছিলেন।

খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকাল সাড়ে আটার দিকে আহত গৃহবধূ আরজিনা মারা যায়। তার স্বামী শামীমের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের গোসাই ডাঙ্গী গ্রামে।

নিহত গৃহবধূর বোন হাজেরা খাতুন জানান, শুক্রবার বিকালে তার ভগ্নিপতি শামীম শেখ আহত আরজিনা ও তার তিন মাস বয়সী শিশু কন্যা মিমকে উপজেলার মুকশিদ পুর গ্রামে তার বাড়িতে রেখে যায়। আহত আরজিনাকে খায়ানোর জন্য কিছু ওষুধও দিয়ে যায়। এ সময় বোনের আহত হওয়ার কারন জানতে চাইলে, সে (শামীম) জানায় দু’জনের মধ্যে কথা কাটা-কাটির মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। সুস্থ্য হলে গৃহবধূকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে।

আহত আরজিনা এ সময় দুই একটি কথা বলতে পারছিলেন। কিন্তু মাথা উচু করতে পারছিলেন না। বমি করছিল। রবিবার ভোরে আরজিনার শরীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নেয়া হয়। ভর্তি করা হয়। কিন্তু কিছু সময় পর গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

তিনি আরো জানান, বুধবার সকাল থেকে তার বোন আরজিনার উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে স্বামী ও পরিবারের লোকেরা। এতে তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত লাগে। এক পর্যায়ে স্বামী ও তার এক চাচি গৃহবধূকে কুষ্টিয়ায় ডাক্তার দেখায়। মাথায় আঘাতের মাত্রা গুরুতর বুঝতে পেরে পরিকল্পিত ভাবে তাকে (আরজিনা) বোনের বাড়িতে ফেলে যাওয়া হয়। যাবার সময় ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ও টেস্টের কাগজ গুলে নিহত গৃহবধূও চাচি শ্বাশুরী নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন।

নিহত গৃহবধূর ভাই মোফাজ্জেল জানান, ৫ বছর আগে সাড়ে তিন লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে বেনের বিয়ে দেন। গার্মেন্টেস চাকরি করে তার বোন শামীমকে প্রতিমাসে টাকা দিয়ে আছিল। সন্তান হওয়ার জন্য বাড়িতে এসে তার জীবন হারাতে হলো। তিনি এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করেন।

নিহতের স্বামী শামীমের সাথে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার পরিবারের লোকেরা জানায় সে অসুস্থ্য। তবে তার আপন ছোট চাচা টিপু খন্দকার বলেন, বাচ্চা হওয়ার পর থেকে আরজিনা অসুস্থ ছিল। দুই দিন আগেও প্রসুতিকে ডাক্তার দিয়ে দেখিয়ে খোকসার গ্রামে বোনের বাড়িতে রেখে আসা হয়। সেখানে মারা গেছে। কি ভাবে মারা গেছে সে সম্পর্কে তারা বলতে পারবে। সন্ধ্যায় এ বক্তব্য নেওয়ার সময় তিনি ও তার ভাতিজা নিহত গৃহবধূর বাবার বাড়ি পাংশায় যাচ্ছেন।

সারুটিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাকিবুল হাসান বাপ্পী বলেন, আরজিনার অসুস্থ্যতার খবর কয়েকদিন আগেই তিনি শুনেছিলেন। কুষ্টিয়াতে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সনজিত সিনহা রাজন জানান, গৃহবধূকে অচেতন অবস্থায় আনা হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। মাথায় আঘাতের জনিত কারনে না কী ওই গৃহবধূ অসুস্থ্য বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, নিহত গৃহবধূর শরীরে আঘাতের আলামত পাওয়া যায়নি। আপতত অপমৃত্যু মামলা হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও উপর নির্ভর করবে মামলার পক্রিয়া।