স্টাফ রিপোর্টার
প্রসস্ততা কমিয়ে ভুল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খোকসার সিরাজপুর হাওড় নদীর মৃত খালে পরিনত হয়েছে। ভরা বর্ষা মৌশুমেও নদিতে পানি নেই। নদীর দুই তীরের কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার প্রকল্প আলো মুখ দেখেনি। মৎস্য চাষের প্রকল্প বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ খননের পর এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিজে মাছ চাষ করা জন্য নদীতে এপার ওপার করে বাঁধ দিয়ে দখল করেছেন।
নদীর উৎস্য মুখ ও ভাটিতে নদীর মিলন স্থলে সুইচ গেট নির্মান করায় নদীর প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসূম শুরু হলেও নদীটির কোথাও পানি নেই। নদীটিকে ঘিরে সরকারের নেওয়া আধুনিক চাষ আবাদের জন্য সেচ প্রকল্প প্রায় দুই যুগেও আলোমুখ দেখেনি। সমিতির মাধ্যমে নদীতে মাছ চাষ প্রকল্পটিও মুখ থুবরে পরেছে।
জেলার এক মাত্র হাওড় নদী খোকসার সিরাজপুর মৌজায় গড়াই নদী থেকে উৎপত্তি। ২১ কিলোমিটার ভাটিতে মাগুড়া জেলার শ্রীপুরের আলমসা ইউনিয়নে গিয়ে আবার গড়াই নদীতে মিশেছে। চার দশক আগে বর্ষা মৌসুমে হাওড় নদীতে ইলিশ মাছ ধরার বাইণ পড়ত। বাইরে থেকে জেলেরা নৌকা নিয়ে আসত। ৯১ সালের পরবর্তী সময়ে নদী দুই তীরের হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমিতে সেচের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়া হাওড়ে মৎস্য সমিতির মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতির মাছ চাষের প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই সময়ের কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ১৫০ মিটার প্রসস্ত নদী ৩৫ মিটার প্রসস্ত করা হয়। নদীর স্বভাবিক পানির প্রবাহ ঠেকাতে নদীর উৎস্য মুখ ও ভাটির মিলন স্থলে একাধিক সুইচ গেট তৈরী করা হয়। ফলে উৎস্য নদী গড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাওড় নদী শুকিয়ে মৃত খালে পরিনত হয়।
সবেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মাগুড়া জেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম স্পর্শ করে গেছে হাওড় নদী। এসব গ্রাম ও মাঠের পানি নিস্কাষনের ৩০টি খাল এসে মিলেছে হাওড়ে। দুই পাড়ের হাজার হাজার একর সরকারী জমি প্রভাবশালীদের দখলে করে নিয়েছে। কেউ ঘর বাড়ি তৈরী করে বসবাস করছে। আবার ফসল আবাদ করে দখল পোক্ত করেছে।

খোকসা অংশে জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদ নিজে মাছ চাষের জন্য একতারপুর ব্রিজের পশ্চিম পাশ দিয়ে মাটি ফেলে চওড়া বাঁধ দিয়ে নদীটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। নদীতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়ার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন তারা।
জানিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যাান হবিবর রহমান হবি বলেন, নদীর চওড়া কমিয়ে খাল বানানো হয়েছে। প্রকৃতিক পানি প্রবাহ ঠিক থাকলে নদী তীরের লাখ লাখ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া যেতে। প্রচুরপরিমানের প্রাকৃতিকমাছ উৎপাদন হত। নদীর প্রবাহ ঠিক রেখে পরিকল্পিত ভাবে নদী খনন করা হলে নদীটি মারা যেতনা। বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজিদ বাঁধ দিয়ে নদী দখল করে নিয়েছে।
হাওড় নদীর জলকর ইজারাদার আব্দুল মান্নান বলেন, তিনি গত বছর ইজারা নিয়ে নদীতে মাছ চাষ করেছিলেন। বেতবাড়িয়া মোড় থেকে চর দশকাহুনিয়া পর্যন্ত কিছু জায়গায় ৭ মাস পানি থাকে। কিন্তু এবারে নদী খননের নামে খাল তৈরী করা হয়েছে। এখানে মাছ চাষ করা যাবে না।
রবিউল ইসলাম বলেন, নৌকায় নদীর ঘাট পার হয়ে তারা স্কুলে যেতেন। পালতোলা নৌকা চলত। বর্ষায় নদীর বাঁকে বাঁকে ইলিশ মাছ ধরারা নৌকা নিয়ে মাঝিড়া আসতো। নদীতে নৌকা বাইচ খেলা হতো। অর্থ লোভি কিছু মানুষের জন্য নদী প্রাণ হারিয়েছে।
হাওড় নদীর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারন সম্পাদক অনিতা বিশ্বাস বলেন, শুনেছেন নদী কাটা হচ্ছে। এখন দেখি নদী নয়, খাল কাটা হচ্ছে। এটা খুবই খারাপ হয়েছে।
পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দ্বীবাকর সরকার বলেন, নদীর প্রাণ ফেরাতে হলে আগে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ঠিক রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এ জন্য সর্ব প্রথম উৎস্য মুখ ভাটির সুইচ গেট গুলো অপসারণ করতে হবে। সেটা কেউ করবে না।
চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজিদ বলেন, ছোট বেলায় তারাও এই হাওড়ে নৌকা চলতে দেখেছে। বর্ষায় নৌকায় এ নদী দিয়ে হাটুরেরা বিভিন্ন হাটে যেতো। তার বিরুদ্ধে যে নদী দখলের অভিযোগ উঠেছে তা ঠিক নয় বলেও দাবি করেন। নদী খনেন প্রয়োজনে নদীতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ বলেন, প্রতিবার পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির তদারকিতে হাওড় খনন হয়েছে। নতুন নতুন পরিকল্পনা করায় নদী শরু হয়ে গেছে।