হাসিনা-মোদী শীর্ষ বৈঠকে সহযোগিতা এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়

0
182
PM-BD-PMINDIA-DROHO-14-P4
ফাইল ছবি।

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিয়ে তাঁরা এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠকে যোগ দেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সহযোগিতামূলক ঐকমত্য রয়েছে, তার সুযোগ নিয়ে দুই দেশই নিজ নিজ অর্থনীতিকে আরও সংহত করতে পারে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক নির্ভরতাকে আমরা আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃতি দিই।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, তার সরকার প্রতিবেশীর অগ্রাধিকার নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই নীতির এক নম্বর স্তম্ভ হচ্ছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার এই নীতি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিন থেকেই আমার অগ্রাধিকারে রয়েছে।

তাঁদের এ বৈঠকের আগে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি, সামাজিক উন্নয়ন, কৃষিসহ সাতটি বিষয়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে সাতটি কাঠামো চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

আর ভার্চুয়াল বৈঠকে ৫৫ বছর পর বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ীর মধ্যে রেল করিডোরেরও উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ওই রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

সে প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, উভয় দেশ বিদ্যমান সহযোগিতামূলক ঐকমত্যের সুযোগ নিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে আরও সংহত করে বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক ভ্যালু-চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। আমাদের চলমান যোগাযোগের উদ্যোগগুলো এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এর অন্যতম উদাহরণ হল ‘চিলাহাটি-হলদিবাড়ী’ রেল সংযোগ পুনরায় চালু করা।

এ অনুষ্ঠানেই মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়।
সে প্রসঙ্গ ধরে মোদী বলেন, এটা গর্বের যে, আমি মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে পারছি। তারা আমাদের তরুণদের সবসময়ই উদ্বুদ্ধ করে যাবেন।

চলতি বছরের মার্চে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। তবে করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে মূল আয়োজন বাতিল হওয়ায় তার আর আসা হয়নি।

আগামী বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের জন্যও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান নরেন্দ্র মোদী।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবেল করতে হচ্ছে। সঙ্কটের এই সময়ে স্বাস্থ্য, কোভিড-১৯, টিকার মত বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে বিশ্ব মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন এবং মানবজাতি কীভাবে এই অজানা শত্রুর মোকাবিলা করে তার পরীক্ষার মুখোমুখখি।

তিনি বলেন, সম্ভবত কোভিড-১৯ মহামারীর সবচেয়ে বড় বহিঃপ্রকাশ হল মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা। এ বছরের গোড়ার দিকে ঢাকায় আপনাকে স্বাগত জানানোর ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। তবুও, আমাদের গত শীর্ষ বৈঠকের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী, এই ক্রান্তিকালীন সময়ে উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা এগিয়ে নিয়েছে-তা প্রশংসাযোগ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের মাসে এ বৈঠকে করতে পেরে তিনি আনন্দিত। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জানান।

২০১৯ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লীর গ্র্যান্ড হায়দ্রাবাদ হাউসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের কথা স্মরণ করে তার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এ বছর মহামারীর মধ্যেও দুই দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বছর জুড়ে রেলরুট দিয়ে বাণিজ্য, উচ্চ-পর্যায়ের পরিদর্শন ও সভা, সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারতীয় পণ্যসামগ্রীর প্রথম পরীক্ষামূলক চালান প্রেরণ এবং অবশ্যই, কোভিড-১৯ বিষয়ে সহযোগিতার ন্যায় বিভিন্ন উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি।

বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত ও জনবহুল অঞ্চলে ভারত সরকার যেভাবে কোভিড-১৯ মোকাবিলা করেছে, সেজন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্যাকেজগুলো ছাড়াও, ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর উদ্যোগে প্রবর্তিত অর্থনৈতিক প্যাকেজগুলো প্রশংসনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, আপনার গৃহীত নীতিমালার মাধ্যমে ভারত বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভাইরাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশেও আমরা এই মহামারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব উপশম করতে ১৪.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। মার্চের গোড়ার দিকে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরে আমরা আড়াই কোটির বেশি মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতা সম্প্রসারিত করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে ব্যাপক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে ব্যাপক বিঘœ ঘটা এবং ভোক্তাদের চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও আমাদের অর্থনীতি উর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত অতিক্রম করছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠারও ৫০তম বছরে পা রেখেছে।

এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো যৌথভাবে উদযাপনের জন্য আগ্রহী হওয়ায় ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।