হেমন্ত জন্মশতবর্ষে কবীর সুমনের স্মরণ

0
147
hemanta-kabir-suman
সংগৃহিত ছবি

সুমন বিশ্বাস

বাংলা সংগীত প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। কিন্তু তখনকার গান আর আজকের গানের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। এর প্রধান কারণ উচ্চারণ। দুই যুগের মধ্যে এই সেতুবন্ধনীর কাজই করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এমন কথাই বললেন কবীর সুমন।

একশো বছর আগে ঠিক আজকের দিনে কলকাতার উপকণ্ঠে জন্মেছিলেন এমন এক ব্যক্তি, যিনি বাংলা গানের জগতে এক বিপ্লব এনে দিয়েছিলেন। বাংলা আধুনিক গানের কথা বলতে তাঁর কথাই প্রথম মনে পড়ে সংগীতপ্রেমীদের।

তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আজ তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে প্রবাদপ্রতীম সেই গায়ককে স্মরণ করলেন কবীর সুমন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে অনেক কাছ থেকে দেখেছিলেন তিনি। হেমন্তবাবু ছিলেন তাঁর ‘গায়ক।’ কথাপ্রসঙ্গেই কবীর সুমন বলেন, “তাঁর উচ্চারণ শুনে মনে হত তিনি আমার গায়ক। আমার বাবা আমার গানের প্রথম শিক্ষক। কিন্তু আমার গায়ক তিনি হয়ে উঠতে পারেননি কোনওদিন। যা হেমন্তবাবু হয়েছিলেন।”

মানুষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কেমন ছিলেন? অতীতে ডুব দিলেন কবীর সুমন। উঠে এল এক অন্য হেমন্তের কথা।
যিনি কৃতজ্ঞ, যিনি উদার, যিনি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আগে দু’বার ভাবেন না। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জীবনের যাঁরা শিকড় ছিলেন, তাঁর সংগীত জগতে আসা যাঁরা সম্ভব করে তুলেছিলেন, তিনি শেষদিন পর্যন্ত তাঁদের মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা দিয়ে আসতেন তাঁর গাড়ির চালক সনৎদা। .

হেমন্তবাবু যখন রাতবিরেতে ফাংশান সেরে বাড়ি ফিরতেন, তখন এই সনৎদাই তাঁকে অমলেট ভেজে খাওয়াতেন। সেই সময় যাঁদের রোজগার প্রায় ছিলই না, তাঁদের কাছে যেন ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। প্রত্যেককে সাহায্য করতেন তিনি।

এতটাই ‘ডাউন টু আর্থ’ ছিলেন। এই প্রসঙ্গেই নিজের জীবনের একটি গল্পও শোনালেন কবীর সুমন। একবার তাঁর বউদি তাঁদের বাড়ি ঘুরতে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন শ্যামল মিত্রের অনুরাগী। কলকাতায় বেড়াতে এসে বায়না ধরেন শ্যামল মিত্রের গান শুনবেন সামনে থেকে।

সুধীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় শ্যামল মিত্রকে অনুরোধ করলেন যদি তিনি বাড়িতে এসে একটি গান শোনান। কিন্তু তখন যন্ত্র ছাড়া কাজ করতেন না শ্যামল মিত্র। সেদিনের সেই কথা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কানে পৌঁছেছিল। এরপর এক রবিবার হঠাৎ তিনি কবীর সুমনের বাড়িতে হাজির।

সুধীন্দ্রনাথবাবুকে বললেন, “আপনার বউমা কই? ‘অনিন্দিতা’র শুটিংয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম আপনার বউমাকে দু’টো গান শুনিয়ে যাই।” এমনই ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। জন্মশতবর্ষে তাঁর জন্য রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।