কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির পরিপেক্ষিতে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে অন্তবর্তী সরকার। বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এসব কথা জানানো হয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্যাতনে নিহত আবরার ফাহাদের বাবা-মা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের পাশে আবরারের বাড়িতে গেলে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মা রোকেয়া খাতুন ও বাবা বরকত উল্লাহের।
হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে তোমার সাথে দেওয়া খাবার খেয়ে নেও। পাঁচ বছর আগে আবরারের সাথে এটাই ছিল মায়ের শেষ কথা। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সকালে আবরারকে নিজে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলেন মা। ওই দিনের স্মৃতিচারণ করে অশ্রæসিক্ত চোখে মা রোকেয়া খাতুন বলেন, গত রাতে সংবাদে দেখলাম ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বৈরাচারী শাষনামলে ছাত্রলীগের দু:সাহস যদি এতটা না থাকতো তাহলে তারা এতটা বিপদজনক হতো না। ওই রাতে আমার ছেলেকে তারা নির্মম, নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। সেটা পুরো দেশবাসী জানে।
রোকেয়া খাতুন বলেন, ছেলে হত্যার ৫ বছর পর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়েছে। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, আগেও যেমন দেশবাসী আমাদের সাথে ছিলেন তেমনিভাবে এখনো সাথে থাকবেন। কারণ আবরারকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার এখনো কার্যকর হয়নি। তিনজন আসামী এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত। সেই সাথে হত্যাকান্ডে ছাত্রলীগকে যারা ইন্ধন দিয়েছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন – ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করায় আনন্দ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধীরা
আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ২০২৪ সালে ৫ আগষ্টের আগে আমার মতো হাজার হাজার মা সন্তান হারিয়েছে। বর্তমান সরকার যেন প্রতিটি হত্যার বিচার করে। অসুস্থদের যতটুকু সহযোগিতা প্রয়োজন তার ব্যবস্থা করে। একজন মা হিসেবে এটাই আমার চাওয়া। সন্তান হারানো কতটা কষ্টের তা শুধু একজন মা বোঝেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমার মতো আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সবার মা কষ্ট পাচ্ছে। খারাপ কাজের জন্য ছাত্রলীগকে বর্তমান সরকার নিষিদ্ধ করেছে এটা দেশবাসী জানে।
সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোকেয়া খাতুন বলেন, ছাত্রলীগ হত্যা, গুম ধর্ষণসহ বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত ছিল। এর থেকে যেন দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল শিক্ষা নেই। তাদের দলের অঙ্গ সংগঠনের কেউ যেন অদুর ভবিষ্যতে ছাত্রলীগের মতো খারাপ কাজ করতে আর সাহস না পাই। পরবর্তী ও বর্তমান সরকারের কাছে এটাই আমার প্রত্যাশা।
এ সময় পাশেই ছিলেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত ছেলে হত্যার বিচার শেষ হয়নি। ছেলেকে হত্যায় ছাত্রলীগের সাথে আরো অনেকেই জড়িত ছিল। যাদেরকে মামলায় আসামী করা হয়নি। জানতে পেরেছি ছাত্রলীগকে সরকার নিষিদ্ধ করেছে। আমার দাবি যে সংগঠনী হোক না কেন, যারা সাধারণ ছাত্রদের উপর অন্যায় অত্যাচার করবে তাদের বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর নির্যাতনে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে নিহত হন আবরার ফাহাদ। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।