সরকারী জলাশয়ের মাটি কেটে জলাশয় ভরাট করছে আ’লীগ নেতার ছেলে

0
79

স্টাফ রিপোর্টার

সরকারি জলাশয়ের একাংশের মাটি কেটে অন্য অংশ ভরাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলেসহ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। মাটি কেটে ভরাট করায় জলাশয়টি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। বর্ষায় আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতা ও মাছ চাষ ব্যাহতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নকশাপাড়া থেকে শিমুলিয়া তহবাজার হয়ে গাড়াল পর্যন্ত সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত অর্ধশতাধিক বিঘা জলাশয় রয়েছে। এটিই শিমুলিয়া জুলা (খাল) নামে পরিচিত। ৫০ থেকে ৭৫ ফুট প্রশন্ত এ খালের ৩৫ বিঘা জলকর ইজারার মাধ্যমে স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা মাছ চাষ করে আসছেন। চলতি বাংলা সন থেকে আগামী তিন বছরের জন্য শোমসপুর মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুসকে ১১ একর ও বাঁকি জলাশয় শিমুলিয়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি নিখিল চন্দ্র বিশ্বাসের নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে।

জলাশয়ের অংশীদারিত্ব নিয়ে ইজারাদার কুদ্দুসের সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালীদের বিরোধ বাধে। এরই সূত্র ধরে ইউনিয়ন আওয়মী লীগের সাবেক সভাপতি আনছার আলীর ছেলে স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জলাশয়ের এক পাশের মাটি কেটে অপর পাশ ভরাট ও মাটি বিক্রি শুরু করেন। এ মাটি কিনে বাড়ির আঙিনাসংলগ্ন জলাশয়ের প্রায় ১০ বিঘা অংশ দখল করেছেন স্থানীয় ছলিম মোল্লা, নওশের, খোকন, বারিক, আসাদ, দুলালসহ ১০ জন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শিমুলিয়া তহবাজারসংলগ্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। এ মাটি দিয়ে ব্রিজ থেকে পশ্চিমে প্রায় ২০০ মিটার লম্বা তিন বিঘা জলাশয় ভরাট করে দখল করেছেন শিক্ষক মিজানুর রহমান। পূর্বদিকে কয়েক বিঘা জলাশয় ভরাট করেছেন আব্দুল বারিকসহ অন্যরা। শিমুলিয়া তহবাজার ব্রিজের পূর্ব ও পশ্চিমে প্রায় এক কিলেমিটারজুড়ে চলছে সরকারি জলাশয় দখলের মহোৎসব।

স্থানীয় খলিলুর রহমান জানান, এক সময়ের ৫০-৬০ ফুট চওড়া জলাশয়টি বর্ষায় সাঁতরে পার হওয়া কঠিন ছিল। এবার সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের পর হঠাৎ করেই স্থানীয় নেতা আনছার আলীর ছেলে জলাশয়ের মাটি বিক্রি শরু করেন। নেতার ছেলে হওয়ায় কেউ কিছু বলেন না।

শিমুলিয়া অংশের ইজারাদার আব্দুল কুদ্দুস জানান, এ বছর ১১ একর জলাশয় ও চাষের জমি ইজারা পেয়েছেন। এর ভাগ চেয়েছিলেন এক প্রভাবশালী। ভাগ না পেয়ে তাঁর লোকজনই মাটি কেটে জলাশয়ের একাংশ ভরাট করছে। এভাবে মাটি কেটে জলাশয়ের আকার ছোট করা হলে মাছ চাষ করা যাবে না।

জলাশয় ভরাটের কথা স্বীকার করে শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি জলাশয়ের মাটি কেটে নিজের জমি ভরাট করেছেন। আগেও অনেকেই জলাশয় ভরাট করে বাড়ি তৈরি করেছেন। তখন কেউ দেখেনি।

শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের দাবি, তিনি যখন ইজারার মালিক ছিলেন, তখন কেউ মাটি কাটেনি। এখন কাটছে। ইজারাদারের সঙ্গে এলাকাবাসীর বনিবনা নেই। এ কারণে যে যেভাবে পারছে মাটি কেটে জমি ভরাট করছে।

জানিপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম মিঞা জানান, জলাশয়টি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত। মাটি কাটার বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, অভিযোগ পেয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হয়েছে। তদন্ত হয়েছে। কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।