দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। বিশ্বমানবতার উপর নিপীড়ন, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মজয়ন্তী।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কবির জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বানী প্রকাশ করেন।
প্রেমের, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি হিসেবে নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্য-সংগীত, সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ।
১৯২১ সালে তৎকালীণ বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষে একুশ বছর বয়সে কবির রচিত বিদ্রোহী কবিতা বিস্ময়কর আত্মজাগরণ ঘটায়।
সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, রাষ্ট্রীয় অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে তিনি লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গান।
বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী ফকির আহমেদ ও জাহেদা খাতুনের ঘরে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ কবি নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহন করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’।
মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমন এড়াতে জনসমাগম না করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয়ভাবে এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কবির জন্মতিথিতে নানা কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
কবি নজরুল তার ৭৭ বছরের জীবনকালের ৩৪ বছরই ছিলেন নির্বাক। বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম, অভাব-অনটন, নানা প্রতিকূলতা, জেলজুলুম ও হুলিয়ার মধ্যেই তার সাহিত্যচর্চার সময় ছিল মাত্র ২৪ বছর।
নজরুল এই ২৪ বছরে সৃষ্টি করে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩টি নাটক, ৩টি গল্পগ্রন্থ, ৫টি প্রবন্ধ, ২টি কিশোর নাটিকা, ২টি কিশোর কাব্য, ৭ হাজার গানসহ ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ ও ৩টি উপন্যাস গ্রন্থ এবং ৭টি চলচ্চিত্র কাহিনীসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনীকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, অভিনেতা।
১৯৪১ সালের শেষের দিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। লুম্বিনী পার্ক ও রাচি মেন্টাল হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলে এক বছরেরও বেশি সময়। ১৯৫৩ সালে কবিকে পাঠানো হয় ইংল্যান্ড ও জার্মানিতে। বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই ১৯৫৩ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত নির্বাক ও অসুস্থ অবস্থায় কলকাতায় অনেকটা অনাদরে নীরবে-নিভৃতেই কাটে অপ্রতিদন্ধী প্রতিভার অধিকারী বিদ্রোহী কবির জীবন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবির জন্মদিনে তাকে ঢাকায় নিয়ে এসে তাকে জাতীয় কবির মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। তার কবিতা ‘চল্ চল্ চল্- ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল-’কে তিনি সামরিক সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করে কবিকে সম্মানিত করেন।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।