ড.মুন্সী মুর্তজা আলী
সমালোচনা ভাল না খারাপ? নিশ্চয়ই খারাপ। তবে সবক্ষেত্রেই নয়। যদি কোন ব্যক্তির আড়ালে অযৌক্তিক ও অন্যায় সমালোচনা করা হয়; এটা খারাপ। তবে সমালোচনা করা ভাল। যদি তা নিজেকে বা অন্যকে শুধরানোর জন্য করা হয়। অন্যকে শুধরানোর জন্য সমালোচনা করতে হলে, তার সামনে করতে হয়। যাতে সে নিজেকে শুধরাতে পারে। অগোচরে সমালোচনা করলে তো সে আর নিজেকে শুধরাতে পারে না। কিন্তু আমরা কখনোই মানুষের সামনে তার সমালোচনা করি না। তার অগোচরেই সমালোচনা করি। মজার বিষয় হলো, যে আমাদের সামনে সমালোচনা করে, তাকে আমরা শত্রু মনে করি। আর যে আমাদের অগোচরে সমালোচনা করি, আমরা না জেনে ও না বুঝে কখনো কখনো তাকে আমরা বন্ধু মনে করি। মূলত আমরা উল্টোটা করি। আসলে প্রকৃত বিষয়টা হলো, যে আমাদের সামনে সমালোচনা করে; সেই আমাদের প্রকৃত বন্ধু বা শুভাকাঙ্খী। আর যে আমাদের অগোচরে সমালোচনা করে; সে আমাদের প্রকৃত বন্ধু নয়। অথচ এভাবে আমরা কখনোই ভাবি না।
যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা করা ভাল। তবে তা সমালোচিত ব্যক্তির সম্মুখে করতে হবে কিংবা তাকে মেসেজ দিতে হবে। কিন্তু আমরা যেটা করি সেটা হলো; আমরা নিজেকে শুধরাই না। নিজের দোষ দেখি না। নিজের সমালোচনা করি না। শুধু অন্যের দোষ ধরি। অন্যকে শুধরাতে বলি ও অন্যদের সমালোচনা করি। আরও যেটা খারাপ কাজ করি সেটা হলো, অন্যের দোষগুলো তাদের অগোচরে সবার কাছে বলে বেলায়। অথচ আমাদের উচিত কেউ দোষ করলে তার উপস্থিতিতে সমালোচনা করা। তার দোষটা ধরিয়ে দেওয়া। তাকে সতর্ক করা। নিজের বড় দোষকে দোষ মনে করিনা। আর দোষ মনে করলেও সেটাকে ছোট ও ঠুনকো বিষয় মনে করি। আর অন্যের ছোট দোষকে বড় করে দেখে তাদের সমালোচনা করে বেড়ায়। এসব করে কেউ কেউ আবার মজাও পায়। এটা খুবই ন্যাক্কারজনক ও দুঃখজনক। কখনো কখনো আমরা নিজের দোষ ঢাকার জন্য অন্যকে মিছে সমালোচনা করি। এটা গর্হিত কাজ। ভুল করলে চুপ থাকি। আর অন্যের ভুলে সোচ্চার না হই। নিজের দোষ ঢাকতে অন্যের অযথা সমালোচনা করা অন্যায় ও অনৈতিক।
এজন্য যেটা করা উচিত তা হলো; নিজের সমালোচনা বেশী বেশী করা। অন্যের সমালোচনা শুধু কম কম করাই নয়। তাদের অগোচরে সমালোচনা না করা। বরং তাদের সম্মুখ সমালোচনা করে তাদের দোষটা ধরিয়ে দেওয়া।
তাই আসুন আমরা গঠনমুলক সমালোচনা করি। নিজের দোষগুলো বিশ্লেষণ করে দেখি, আমাদের কি কি দোষ আছে। সেগুলো শুধরাই। এরপর অন্যকে শুধরাতে বলি। আগে আত্মসমালোচনা। নিজেকে শুধরানো। তারপর পরের দোষ নিয়ে বেশী টানাটানি না করে, তাদের ভুলগুলো ধরিয়ে দিই। তবে পরচর্চা নয়।
অধ্যাপক
ড.মুন্সী মুর্তজা আলী
লোক প্রশাসন বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া।