কুমারখালী মুক্ত দিবস ৯ ডিসেম্বর

0
137
১৯৭১ সালের মহান মুক্তযেুদ্ধে পাকিস্থানীদের নির্মম হত্যার শিকার শহীদ মুক্তিযে২াদ্ধাদের ডাশার গণকবর।

কুমারখালী প্রতিনিধি

৯ ডিসেম্বর। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে উপজেলা (থানা) পাক হানাদার মুক্ত হয়।

দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে উপজেলার কুসলীবাসা, বিল বরইচারা, ডাঁসা, ঘাঁসখাল সহ কুমারখালী শহরের বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এসব যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা সহ অনেক নারী-পুরুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি সৈন্যরাও নিহত হয়।

৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করে কুন্ডুপাড়া রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। সে সময় রাজাকার ফিরোজ-খুরশিদ, গোলাম রসুল, সাদী ও গালিবদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। এ যুদ্ধের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া থেকে পাক-হানাদার বাহিনী কুমারখালী শহরে প্রবেশ করে এবং বিপ্তিভাবে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

কিন্তু সে সময় হাতে গোনা কয়েকজন যুক্তিযোদ্ধা ও পর্যাপ্ত অস্ত্র না থাকায় পাক বাহিনীর মুখোমুখি না হয়ে কৌশলে পিছু হটে আসে মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা কুমারখালী শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হত্যাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও শেল নিপে চালায়। ৭ ডিসেম্বরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা তোসাদ্দেক হোসেন ননী মিঞা, কুন্ডুপাড়ার ওমর আলী শহীদ হন। এ ছাড়া শহীদ হন সামসুজ্জামান স্বপন, সাইফুদ্দিন বিশ্বাস, আব্দুল আজিজ মোল্লা, শাহাদত আলী, কাঞ্চন কুন্ডু, আবু বক্কর সিদ্দিক, আহমেদ আলী বিশ্বাস, আব্দুল গনি খাঁ, সামসুদ্দিন খাঁ, আব্দুল মজিদ ও আশুতোষ বিশ্বাস মঙ্গল।

এরপর ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজাকার ও পাকবাহিনীর ক্যাম্পে হামলা করতে পৃথক পৃথক এলাকায় অবস্থান নেন। এতে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা বারিক খান, রনজু, আ. রাজ্জাক, হাবীব, মঞ্জুর আর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনি, মনজু সাত্তার, সামছুল আলম পিন্টু মাষ্টার, মাহাতাব, কামাল, আতিয়ার রহমান স্বপন (সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা), মকবুল হোসেন, ধীরেন, মিজান বিশ্বাসসহ আরো অনেকেই অংশ নেয়।

আরও জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা শহরের চারপাশ থেকে পাকবাহিনীর ক্যাম্প (বর্তমান কুমারখালী উপজেলা পরিষদ) আক্রমণ করে। দীর্ঘসময় যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। একপর্যায়ে পাকবাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে ট্রেন যোগে কুষ্টিয়ার দিকে রওনা দিলেও পাকবাহিনীর বহনকারী ট্রেনটিতে হামলার পরিকল্পনা করে মুক্তিযোদ্ধারা।

পাকবাহিনীর সদস্যদের বহনকারী ট্রেনটি চাড়াইকোল হাতিসাঁকো এলাকায় পৌঁছানো মাত্রই মুক্তিযোদ্ধারা ট্রেনটি লাইন চ্যুত করে দেয়। ফলে ট্রেন লাইন চ্যুত হয়ে পড়ে এবং পাকবাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পায়ে হেঁটে কুষ্টিয়া অভিমুখে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পাকবাহিনীর সদস্যরা আরেকটি ট্রেন যোগে কুমারখালীতে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
এদিনে রাজাকার কমান্ডার খুশি মারা যায়। আর অন্যান্য রাজাকারেরাও শহর ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কুমারখালী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়।

এইদিন মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেল ও এসএলআরের ফাঁকা গুলি বর্ষণের মধ্যদিয়ে উল্লাস করেন এবং স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। অপরদিকে কুমারখালী হানাদার মুক্ত হওয়ার খবর পেয়ে সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে আনন্দ মিছিল শুরু করেন।

নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ৯ ডিসেম্বর কুমারখালী মুক্ত দিবস পালন করা হয়ে থাকে।