সভাপতি- সম্পাদকের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় সভা পন্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় সভাপতি কুমারখালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান ও সাধারণ সম্পাদক কুমারখালী পৌরসভার মেয়র সামসুজ্জামান ওরুন একে অপরকে দায়ী করে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানায়, দীর্ঘ এক বছরেরও অধিক সময় পর শনিবার আবুল হোসেন তরুন অডিটোরিয়ামে কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা আহবান করা হয়। বিগত সভার এজেন্ডা বাস্তবায়ন, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, বিভিন্ন জনসভায় সাংগঠনিক বিরোধী বক্তব্যসহ সভায় পাঁচটি এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দুই বহিস্কৃত সদস্য জয়নাল আবেদীন ও আব্দুল মাজেদ মাষ্টার সভায় উপস্থিত হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও সাধারন সম্পাদক সামসুজ্জামান ওরুন দুজনের মধ্যে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়।
এ সময় সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান ওরুন সভাপতি আব্দুল মান্নান খানের কাছে বহিস্কৃত দুজন নেতা কিভাবে সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তাদেরকে সভা থেকে বের করে দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু সভাপতি বহিস্কৃত দুই নেতাকে সভায় উপস্থিত রেখেই সভা শুরু করতে বলেন। এ নিয়ে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বাগ-বিতন্ডার জেরে শুরুর আগেই পন্ড হয়ে যায় সভা।
সভায় কুষ্টিয়া-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যরিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ উপস্থিত ছিলেন। কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আশাদুর রহমান আসাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকারী কমিটির সভা মূলতবী ঘোষণা করার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকারী কমিটির সভা পন্ড হওয়াকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান ও সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুন পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন। শনিবার দুপুর একটায় কুমারখালী রেল স্টেশন সংলগ্ন নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খান বলেন, দীর্ঘ এক বছর পরে শনিবার বেলা ১১ টায় আবুল হোসেন তরুন অডিটোরিয়ামে কার্যকারী কমিটির সভা ছিল। কিন্তু সভা শুরুর আগ মুহূর্তে সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুন সংগঠনের দুই সদস্য জয়নাল আবেদিন এবং আরেক সদস্য আবদুল মাজেদ মাস্টারকে বহিস্কৃত দাবি করে সভা থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলেন। এ নিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট তকর্-বিতর্কের এক পর্যায়ে সভার মূলতবী ঘোষণা করা হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হলেও পরবর্তীতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাধারণ ক্ষমার কারণে তারা এখনও দলের সদস্য আছেন।
অপরদিকে একই দিন বিকেল ৩ টায় কুন্ডুপাড়া নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান অরুন বলেন, আগের বর্ধিত সভার কার্যবিধি অনুমোদন, বিভিন্ন ইউনিয়নের নতুন কমিটি গঠন, বিভিন্ন জনসভায় বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য সহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা ছিল শনিবারের কার্যনির্বাহী সভায়। কিন্তু নিজের কোরাম পূরণ করার জন্য সভাপতি আব্দুল মান্নান খান বহিস্কৃত দুই সদস্যকে সভায় উপস্থিত করান।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান করায় সভাপতি এবং আমি নিজে স্বাক্ষর করে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে দুজনকে দল থেকে বহিষ্কার করলাম তাদেরকে সভার কোরাম পূরণের জন্য নিয়ে এসে সভাপতি রীতিমত গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন বলে দাবি করেন ওরুন। তিনি বলেন, বহিস্কৃত নেতাদের বের করে সভা শুরুর প্রস্তাব জানালে সভাপতির সাথে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে পদাধিকার বলে সভা পন্ড করে চলে যান। ওরুন অভিযোগ করেন, সভা বন্ধের জন্য পুলিশসহ নানা ইস্যু খুঁজছিলেন সভাপতি সাহেব। এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুগ্রুপের দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রুপ নেওয়ায় শহর এলাকায় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। অবশ্য সভা শুরুর আগে থেকে সভাস্থল ও তার আশেপাশে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।