কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে

0
56

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আংশিক ভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হতে যাচ্ছে। আগামী ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আংশিক চালু করা হবে।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা ১২ টায় হাসপাতালের সেমিনার কক্ষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুষ্টিয়ার আন্ত:বিভাগীয় স্বাস্থ্য সেবা চালুকরণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক সমন্বয় সভায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান এ ঘোষণা দেন।

সভায় বলা হয় আগামী ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের দিন আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি ইউনিট শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করা হবে। ওই দিন থেকে প্রতিদিন প্রতিটি ইউনিটে একশো করে মোট দুইশো রোগী ভর্তি নেওয়া হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ইউনিটসহ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরুপে চালু করা হবে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: আনোয়ারুল কবীর, প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী সরোয়ার জাহান, পুলিশ সুপার মো: মিজানুর রহমান, কুষ্টিয়া আর্মি ক্যাম্পের কমান্ডার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুবুল আলম শিকদার, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দীন আহম্মেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মো:আবুল হাশেম, হৃদরোগ এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: নাসিমুল বারী বাপ্পী, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা: আক্রামুজ্জান মিন্টু, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: মুসা কবির, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল-মামুন সাগর, সিনিয়র স্টাফ নার্স মোছা: ফাতেমা খাতুন ছাড়াও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির বক্তব্যে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: তৌফিকুর রহমান বলেন, সব ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হলেও অত্যন্ত দ্রæততম সময়ের মধ্যে আমাদেরকে যে কোন উপায়ে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করতে হবে। এর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। কুষ্টিয়ার কোন মানুষ যাতে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে এসে কোন ধরণের ভোগান্তির শিকার না হন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: আনোয়ারুল কবীর বলেন, আমাদের কাছে খুব বেশি গতি আশা করলে ভুল হবে। হাসপাতাল চালু করতে হলে লোকবল, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, মেডিসিন সব কিছুই প্রয়োজন হবে। হাসপাতাল চালুর বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয় এবং উক্ত কমিটিকে আগামী ১৮ তারিখের মধ্যে এ বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫ শয্যার এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বারবার সময় ও অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গরুপে চালু করা যায়নি হাসপাতালটি।

জানা গেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর নবনির্মিত আংশিক হাসপাতাল ভবনের একটি বøকে বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। যেতে হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। এছাড়াও মেডিকেল শিক্ষার্থীদেরকেও মেডিকেল কলেজ থেকে জেনারেল হাসপাতালে যেতে হয়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ জনকে।

সূূত্র জানায়,২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয় তলা একাডেমিক ভবন, চার তলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দুই তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের পকেটের টাকা খরচ করে যাতায়ত করে ক্লিনিক্যাল ক্লাস করতে হয়।

আরও পড়ুন – মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি এখনো লাইফ সাপোর্টে: আইএসপিআর

এ অবস্থায় হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরুপে চালুর দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহল দীর্ঘদিন ধরে নানা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রæয়ারি হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রায় আড়াই ঘন্টা অবরোধ করে রেখে ছিলেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং দাবির প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ ২০ দিনের মধ্যে শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করার আশ্বাস প্রদান করেন।