কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের গেট ভেঙে কারাবন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার(৭ আগষ্ট) বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি চালিয়েছে কারারক্ষীরা। পরে ঘটনাস্থলে পৌছে সেনাবাহিনী জেলা কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন। তবে কতজন পালিয়েছে তার সঠিক তথ্য এই মুহুর্তে না বলতে পারলেও আনুমানিক ২০ জন করাবন্দি পালিয়েছে বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়ার জেল সুপার আ: বারেক জানান, ভেতরে দুপুরের খাবার ও গণনা শেষ করে অফিসেই নামাজ আদায় করছিলাম। নামাজ শেষ করে উঠতেই হঠাৎ কারাগারের ভেতর থেকে চিৎকার ও অভ্যন্তরীণ গেটে আঘাতের শব্দ শুনতে পাই। দৌড়ে গিয়ে ওদখি অন্তত ৩’শ জন সংঘবদ্ধ হয়ে ভেতর থেকে একসাথে গেটে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে গেটের হেজবোল্ড ভেঙে যায়। এ সময় কারাবন্দিরা পালানোর চেষ্টা করলে কারারক্ষীরা ফাঁকাগুলি চালায়। এ সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আবারো ভেতরে ঢুকে যায়। তবে এই সুযোগে ১৫ থেকে ২০জন কারাবন্দি পালিয়ে গেছে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ঠেকাতে গিয়ে ৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন। এছাড়া কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অস্ত্র ভান্ডার রক্ষিত আছে, কারাবন্দিরা নিরাপদে আছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে কারাগারের দর্শনার্থী কক্ষে স্বজনরা কারাবন্দি সাথে কথা বলছিল। হঠাৎ ভেতর থেকে বেশকিছু উচ্ছৃঙ্খল কয়েদি কারারক্ষীদের মারধর শুরু করে। এ সময় বাইরে থাকা করাবন্দিদের স্বজনরাও চেচামেচি শুরু করেন।
সূত্র জানায়, কারাগারের ভেতরে থাকা কুষ্টিয়ার চাঞ্চল্যকর দশ টুকরা হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও কিশোর গ্যাং এস কে সজীবের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে। এদিকে কারাগারে গুলির শব্দ শুনে উৎসুক জনতা বাউন্ডারি গেটে জড়ো হয়। তারা ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে কারারক্ষীরা তাদেরকে বাধা দেই। এর কিছুক্ষণ পরেই সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
আরও পড়ুন – পুলিশের নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলাম
জেল সুপার আব্দুল বারেক জানান, ঠিক কতজন বন্দী জেল থেকে পালিয়ে গেছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে কোন জঙ্গি বা বড় মাপের কোন সন্ত্রাসী আছে কিনা সেটাও বলতে পারেননি ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বন্দিদের তালিকা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তালিকা মেলানোর পর জানা যাবে কতজন বন্দী পালিয়েছেন। পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের পরিচয় জানা যাবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ এহেতেশাম রেজা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ১২-১৩ জন বন্দি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। বন্দিদের পালানো ঠেকাতে কারারক্ষীরা বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কুষ্টিয়া ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা অধিনায়ক লে: কর্নেল মো: মাহবুবুল আলম শিকদার জানান, কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।
কারারক্ষীরা জানান, জেলখানার ভেতরের রান্নাঘর থেকে চেলা কাঠ সংগ্রহ করে কারাগারের প্রধান ফটকের আগের ফটকটি ভেঙ্গে বেরিয়ে আসেন দেড় শতাধিক বন্দী। এ সময় কারারক্ষীরা বাধা দিতে গেলে বন্দিরা তাদের উপর হামলা চালায়। এরপর বন্দীরা প্রধান ফটকের কারারক্ষীকে মারপিট করে তার কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নিয়ে তালা খুলে একে একে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। এ সময় জেলখানার বাইরে থাকা কারারক্ষীরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। তবে তার আগেই বেশ কয়েকজন বন্দী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় ৫ জন কারারক্ষী আহত হয়েছেন।
কারাগার সূত্র জানায়, ৬শ ধারণক্ষমতা থাকলেও প্রায় ৯ শতাধিকের ও বেশি বন্দী রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে।