কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে শিশুসহ অন্তত ৮ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে শহরের মজমপুর গেটে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা ১টার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেনি। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। এরপর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানার ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে থানার ভেতরের সমস্ত আসবাবপত্র ও জরুরি রেকর্ড সহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০ টি মোটরসাইকেল ভস্মীভুত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে, বেলা দুটোর পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি গ্রæপ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে ঢুকে পড়ে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ও শটগানের গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। আহতদের জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা ৪ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের থানা পাড়া এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন – দিল্লির গোপন বাসস্থানে শেখ হাসিনা
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো চারজনের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে আহত ১২৪ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আহতদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ বলে জানান তিনি।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য হাহাকার চলছে। হতাহতদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এদিকে, বেলা দুটোর পর পরই হাজার হাজার জনতা কুষ্টিয়া শহরে নেমে এসে উল্লাস করতে থাকেন। অনেকে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। কেউ কেউ মিষ্টিও বিতরণ করেন। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, হানিফের চাচাতো ভাই কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাই তাইজাল আলী খান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া ২ আসনের সাংসদ কামারুল আরেফিন সহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আওয়ামী সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে। রাত নয় টায় এ প্রতিবেদন তৈরি পর্যন্ত শহরজুড়ে মানুষের উল্লাস চলছিল। এছাড়া জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানেও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশের উদ্ধতন কোন কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।