খোকসার মাদ্রাসায় ধারাবাহিক শিশু নির্যাতনের অভিযোগ

0
183
শিশু শিক্ষার্থী ইব্রাহীম

গরম লোহার রডের স্যাকা দেওয়া নিত্যকার ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসায় একটি নূরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক শিশু ছাত্র নির্যাতনের রোমহর্ষ্যক বর্ণনা দিলো শিশু শিক্ষার্থীরা। এখানে কথার অবাধ্য হলেই গরম লোহর রড়ের স্যাকা দেওয়া নিত্যকার ঘটনা। এক ছাত্রকে কাপড় ডলার গরম স্ত্রীর স্যাকা দেওয়ার ঘটনায় আপোষ-রফা হয়েছে ৩ হাজার টাকায়।

উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নে মোল্লা পাড়া নূরানী হাফেজিয়া কওমী মাদ্রাসায় প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ৯০ জন শিশু শিক্ষার্থী লেখা পড়া করে। এসব ছাত্ররা প্রতিনিয়তই শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকের নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে একাধিক শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা কমিটির নেতারা প্রভাবশালী হওয়া অভিভাবকরা কেউ বিচার চাইতে সাহস পাচ্ছেন না।

পড়া না করায় ২য় শ্রেনির ছাত্র মুছা নামের এক শিশুর পেটে কাপড় ডলার গরম স্ত্রীর স্যাকা দেয় হাফেজ মামুনুর ওরফে মামুন। শিশুটির অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে তৎপর হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকায় বিষয়টি আপোষ রফা হয়। শিশু মুছা শিমুলিয়া পাল পাড়ার আনিসুলের ছেলে। শিশুটি এখনো পোড়ার ক্ষত নিয়ে অসুস্থ রয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানান। একই শিক্ষক নূরানী শ্রেনির শিশু শিক্ষার্থী হাসানের কানে লোহার রড দিয়ে স্যাকা দেয়। এ ছাড়া দ্বিতীয় শ্রেনির শিশু শিক্ষার্থী ইব্রাহীমকে লোহার রড দিয়ে গলায় স্যাকা দিতে যায় ওই শিক্ষক। কিন্তু শিশুটি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে তার বাঁম হাতের মুষ্ঠি পুড়ে য়ায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান

মাদ্রাসায় নির্যাতিত শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলতে সরেজমিন গেলে শিশুরা নিজের মুখে শোনায় রোমহর্ষ্যক নির্যাতনের কাহিনী। শিশু মুছার মা রুপালী খাতুন জানান, মাদ্রাসা থেকে গরম স্ত্রীতে তার ছেলের পেট পুড়েছে। ছেলেরা খেলার সময় তার ছেলে পেট পুড়ে যায়। তবে তিনি না কী মেম্বরের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকায় আপোষ রফা করেছেন বলে দাবি করেন তার একাধিক প্রতিবেশী।

বাম হাতের মুঠো পুড়ে যাওয়া শিশু শিক্ষার্থী ইব্রাহীম জানায়, পড়া না পাড়ায় হাফেজ মামুনুর ওরফে মামুন তার কাঁধে লোহার গরম রড় চেপে ধরার চেষ্টা করে। শিশুটি নিজেকে রক্ষা করতে গেলে তার হাত পুড়ে যায়। তার মা রুপসী একই অভিযোগ করেন। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তিনি ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। কিন্তু মাদ্রাসার নির্যাতনে ভয়ে এখনো ছেলে রাতে আতকে ওঠে। এ নিয়ে তিনি কোন অভিযোগ করেন নি বলেও জানান।

একই গ্রামের শিশু শিক্ষার্থী হাসান তার বাবা রবিউল ইসলামের মিথ্যা বক্তব্য উল্টে দিয়ে খুব ছোট ছোট করে জানায়, হাফেজ মামুন তার কানে লোহার গরম রড় দিয়ে স্যাকা দিয়ে কান পুড়িয়ে দেয়। সে ভয়ে প্রথমে বাবাকে জানানি।

শিমুলিয়া ইউনিয়নের মেম্বর সিরাজের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, ছাত্র নির্যাতনের ঘটনায় আপোষের বিষয়ে তিনি জানেন না। এমন কী মাদ্রাসাটি কারা চালায় তাও তিনি জানেন না।

নূরানী হাফেজিয়া কওমী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান অকপটে স্বীকার করলেন ছাত্র নির্যাতনের বিষয়টি। তিনি জানান, লোহার রড় দিয়ে স্যাকা দেওয়ার ঘটনাগুলো তিনি শোনেনি। তবে গরম ইলেট্রিক স্ত্রী ধরে ছাত্রের পেট পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার তিনি জানতে পারেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো স্বীকার করেন স্থানীয় মেম্বরের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকায় ছাত্রের পরিবারের সাথে আপোষ করা হয়েছে।