খোকসায় ড্রেনের পানির তোরে নদীর তীর রক্ষার বাঁধ ধসে পরেছে

0
57

স্টাফ রিপোর্টার

খোকসা পৌর এলাকার সব কয়টি ওয়ার্ডে বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত ড্রেনের পানির চাপে গড়াই নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ধসে পরেছে। ফলে প্রায় ৩০টি পরিবার আবার নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে পরেছে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ডোবা নালা থেকে উঠে আসা সাপের উপদ্রপের সাথে বাড়ছে পানি বাহিত রোগ।

গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ২, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির পানিতে উপজেলা ভূমি অফিস, উপজেলা নির্বাচন অফিস, যুবউন্নয়ন অফিস, সমাজসেবা অফিস, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পরেছে। অধিকাংশ বাড়ির উঠানে পানি উঠে পরেছে। বৃষ্টির পানিতে প্রায় অর্ধশত পুকুর ভেসে গেছে। ড্রেন উপচে রাস্তা ঘাট নোংরা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। নিজেদের থাকা খাওয়ার স্থান সমস্যাসহ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পরেছেন বেশিভাগ পরিবার।

সোমবার সকালে ড্রেনের পানির চাপে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ পাড়াই গড়াই নদীর তীর রক্ষার বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। আর এতেই নতুন করে নদী ভাঙ্গনের ঝুকিতে পরেছে প্রায় ৩০ পরিবার।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহ পাড়ায় অপরিকল্পিত ভাবে নির্মান করা ১ হাজার মিটার লম্বা ৫ ফুট গভীর ড্রেনের পানি ১০ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে গড়াই নদীতে অপসারণ করছিল পৌর কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানির চাপে সোমবার সকালে ড্রেনের সামনে থেকে নদীর তীর রক্ষার বাঁধ ধসে যায়।

সোমবার দুপুরে পৌর এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড়ে সবেজমিন গিয়ে দেখা য়ায়, শাহ পাড়ার শতাধিক পরিবার বৃষ্টির মৌসুমে শুরু থেকে জলাবদ্ধ হয়ে জীবন কাটাচ্ছেন। এখানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মান করা ড্রেন রয়েছে। কিন্তু ড্রেনটি ময়লা আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে পরেছে। এক অংশের পানির তোরে বিধবা আয়শা খাতুনের বসত ঘরের একাংশসহ রান্না ঘরের বেশীর ভাগ নদীতে চলে গেছে। ড্রেনের উপর দিয়ে একটু এগোতেই দেখা যায় পৌর সভার টাকায় এক ব্যক্তির পুকুরের উপর সেতু নির্মান করা হয়েছে। আর এই সেত্ইু ঘটিয়েছে যত বিপত্তি। এই পুকুরেই মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে বিশাল দুটি ড্রেনের মুখ। ফলে একদিকে জলাবন্ধতা স্থায়ী হয়েছে। অন্যদিকে আবজনার ভাগারে পরিনত হয়েছে গোটা মহল্লাটি।

নদীর তীর রক্ষার বাঁধ ধসে একমাত্র মাথা গোজার ঘর হারাতে বসা বিধবা আয়শা খাতুন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ড্রেন করার সময় নদীতে নামানোর পরিকল্পনা না থাকাটা প্রথম ভুল। দ্বিতীয় ভুল হয়েছে তার ঘরের ভিতর দিয়ে পাইন দিয়ে ড্রেনের পানি নদীতে দেওয়া।

বিধবা আয়শা খাতুন বলেন, তার সব জমিই নদীতে চলে গেছে। ব্যাটারা বাঁধ দেওয়ার পর স্বামীর ভিটাই ঘর তুলে বসবাস করছিলাম। এবার আবার নতুন করে লাগা ভাঙ্গনে তার রান্না করে খাওয়া যায়গা নদীতে চলে গেছে। বসত ঘর ভাঙ্গনের মধ্যে ঝুলে আছে। রাতে কোথায় থাকবেন এ নিয়ে ভাবছেন। তিনি মনে করেন, পৌর সভার কাউন্সিলের ভুলের কারনে তাদের মাথা গোজার শেষ আশ্রয় হারাতে হচ্ছে।

সংবাদ কর্মী মমিন হোসেন ডালিম বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেনের জন্য তারা বছরের তিন মাস পানি বন্ধি থাকেন। আগে নদীতে পানি নেমে যেত কিন্তু এখন সব পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের ভোগান্তির অন্ত নেই।

পৌর সভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম হুসাইনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পৌরসভার ৭ নম্বরের হাসেম আলী জানান, পানি বেড় করার জন্য কেউ নিজের জমি কাটতে দেয় না। ফলে ওরা বছরের বেশীর ভাগ সময় পানিবন্দি থাকে।

আরও পড়ুন – পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ

পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ টিপু জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মানের সময় পাইপ দিয়ে পয়েন্ট তৈরী করে রেখে গিয়েছিল। ড্রেন করার পর পাইপের সাথে সংযোগ দেওয়া হয়েছে মাত্র।

খোকসা পৌর প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেসমা খাতুন তার নিজের অফিসে পানি অপসারনে পৌরসভা প্রকৌশলীকে তাগিদ দিতে শোনা যায়। এর পরে তিনি পানি বন্দি এলাকা ঘুরে দেখতে বেড়িয়ে যান। পরে তার সরকারি মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

পানি উন্নয় বোর্ডের কুষ্টিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তার স্পষ্ট কোন ধারণা নেই। তবে তার লোকেরা এই প্রতিনিধির সাথে কথা বলবেন বলে জানান।