খোকসায় ব্রিজের উপর দিয়ে নৌকা চলে

0
114
ভূমিহীনদের পারা পারের ব্রিজের উপর দিয়ে নৌকা চলে।

স্টাফ রিপোর্টার

দ্বীপচরের ভূমিহীন পল্লীতের যাওয়া আসার ব্রিজের উপর দিয়ে বছরের কয়েক মাস নৌকা চলে। অপকিল্পিত ভাবে নির্মিত ব্রিজ ভূমীহীন ও নদী তীরের মানুষের গলার কাট হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদী পারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয় সাধারণ মানুষসহ স্কুল কলেজ গামী ছাত্র ছাত্রীদের।

কুষ্টিয়ার খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের হিজলাবট গ্রামে গড়াই নদীর বুকে জেগে ওঠা চরটি দ্বীপচর নামে পরিচিত। নদীকে দুই ভাগ করেছে এ চর। ভূমি প্রশাসনের হিসাব মতে তিন দশক আগে এ চরের প্রায় ৩শ একর আবাদযোগ্য খাস জমি ১৭১টি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলায় সরকারী খরচে নির্মান করা প্রথম পর্যায়ের আবাসন প্রকল্পে এটি। এ চরে বর্তমানে প্রায় ১৫শ মানুষের বসবাস। নারী পুরুষ মিলে ভোটার রয়েছে সাড়ে চারশত। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা খাতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ভূমীহীনরা বঞ্চনার শিকার বলেন সরল স্বাকার উক্তি দিয়ে থাকেন জন প্রতিনিধিরা।

তিন বছর আগে খোকসা ইউনিয়নের মোড়াগাছা হলিপ্যাড আবাসন ও ওসমানপুর ইউনিয়নের দ্বীপচর আশ্রায়ণ মাঝে শাখা নদীর উপর প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মান করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের নির্মানকরা ব্রিজটি দৃশ্যত কাজে আসেনি। বর্ষায় নদীতে পানি আসলে আগে তলিয়ে যায় দ্বীপচরের ভূমীহিনদের এক মাত্রা রাস্তা ও ব্রিজ। এ বছরও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এক মাসেরও বেশী সময় ধরে ব্রিজটি পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে শাখা নদী পারা পারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে স্কুল কলেজ গামী ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষদের।

দ্বীপচর গড়াই নদীকে দুই ভাগ করেছে। চরের পশ্চিমপাড় দিয়ে বয়ে যাওয়া মূল নদী পার হয়ে ইউনিয়র পরিষদে যেতে হয়। চরের উত্তর দিয়ে বয়ে শাখা নদী পাড়ি দিয়ে উপজেলা সদরসহ হাটবাজার, স্কুল কলেজ, ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। বর্ষায় শাখা নদী পানি আসলেই চরের ভূমিহীনরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন। প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী জীবনে ঝুকি নিয়ে জল কাঁদা মারিয়ে শাখা নদী পার হয়ে স্কুল কলেজে যায়। অসুস্থ্য রোগী ও ফসল আনা নেওয়ায় করতে বিপাকে পরতে হয়।

রবিবার তখন দুপুর। নৌকায় নদী পার হয়ে হেলিপ্যাডের ঘাটে এসে নামলেন পিপা খাতুন। রড় নদী পার হয়ে দেবীনগর গ্রামে তার বাবার বাড়ি। ব্রিজ নির্মাতাদের ভুল পরিকল্পা নিয়ে তিনিও ক্ষুদ্ধ। সব যাগায় (জায়গায়) ব্রিজ দিয়ে মানুষ চলে। আর এই ব্রিজ দিয়ে নৌকা চলে। দুই চরের থেকে ৩০ ফুট নিচে করে ব্রিজ বানানো হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে ব্রিজে ওঠার রাস্তা ডুবে যায়। গাঙে (নদীতে) পানি আসলেই ব্রিজ ডুবে যায়।

ত্রিশ বছর ধরে হিজলাবট ঘাটে মানুষ পারাপার করেন মাঝি আয়ুব আলী। ব্রিজ হওয়ার পর বর্ষা মৌসুমে দুই নদী পার হতে হচ্ছে। আগে কম সময় লাগতো। এখন বেশী সময় লাগে। ফলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তিন বছর আগে এই ব্রিজ বানানো হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় ব্রিজের উপর দিয়ে নৌকায় মানুষ পারাপার করেন। আগে একটু ভাটিতে গিয়ে মানুষ দাঁড়াতো। ব্রিজ হওয়ায় এখন এক নদী দুই বার পার করতে হচ্ছে। এই ব্রিজের কারনেই বছরে ৫/৬ মাস পারাপারে সমস্যা বেশী হয়।

গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ভূমিহীনরা অবহেলিত বলে সরল স্বীকার উক্তি দিলেন ওসমানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল ইসলাম ডাবলু। ব্রিজটি ৪ থেকে ৫ ফুট উচু করা হলে ভূমিহীনদের যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকত। উপজেলা পরিষদেও বরাদ্দের সিংহ ভাগ যায় অন্য যায়গায়। ভুমিহীনদের কথা কেউ ভাবেন না। চরের পশ্চিম অংশের হিজলা কর মৌজা দিয়ে একটি পাকা রাস্তাসহ বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পর চেষ্টা করছেন। ভুল পরিকল্পনায় নির্মান করা সেতুর উপর দিয়ে মাটি ফেলে রাস্তা তৈরীর কথা ভাবছেন।

সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ^াস। দুই পাশের রাস্তার থেকে ব্রিজ অনেক নিচুতে করা হয়েছে বলে মনে করেন। তা ছাড়া ব্রিজটি খুবই সরু। পানি প্রবাহ কম হয়। এ কারণে বর্ষা এলেই ব্রিজটি ডুবে যায়। ভূমিহীনদের জন্য খুবই গুরুত্ব পূর্ন এই বিষয়ে উদ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন।