তিন বছরেও পৌর এলাকার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু হয়নি

0
141
পানি সরবরাহের ট্যাব চুরি হয়ে গেছে।

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসা পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের পাইপ লাইন ও পাম্প হাউস নির্মান শেষ হলেও প্রকল্পটির ৩ বছরেও চালু হয়নি। পাইপ বসানোর জন্য খোড়া-খুড়ি করা রাস্তা গুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ দিন ব্যবহার না হওয়ায় পাড়া-মহল্লায় বসানো তিন শতাধিক পানির ট্যাব চুরি হয়ে গেছে।

প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে পাওয়া তর্থে জানা গেছে, খোকসা পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টির ১২ হাজার মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে পৃথক দুটি প্রকল্প গ্রহন করে। গত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইপ লাইন নির্মান কাজ ও একটি পাম্প হাউস নির্মানের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজটি শেষ করার জন্য ১০ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ৩ বছরে কমপক্ষে ৫ দফায় সময় বাড়িয়েছে ঠিকাদার। অভিযোগ উঠেছে কাজ শেষের আগেই বিলের ৯০ শতাংশ টাকা ঠিকাদারকে পরিশোধ করা হয়েছে।

খোজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রায় এক বছর আগে পৌর এলাকার ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪ কিলোমিটার পানি সরবরাহের পাইপ লাইন স্থাপন কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সুবিধা ভোগী পর্যায়ে পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ৭০০ টি সংযোগসহ পানির ট্যাপ বসানো হয়। একদিন পরীক্ষামূলক পানি সরবরাহও করা হয়। অদৃশ্য কারণে পানি সরবরাহের বিষয়টি ধামা চাপা পরে যায়। ফলে পৌরবাসীদের বৃহৎ অংশ সরবরাহের পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ প্রকল্প সম্পর্কে অবগতনন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড়ের কাউন্সিলরা। পৌর সভায় বসেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর গাফিলতির কারনেই পানি সরবরাহ করা হচ্ছেনা বলে দাবি করেন ওই কাউন্সিলর।

নিজের বাড়ি থেকে ৫শ গজ দূরে খাবার পাসি সংগ্রহ করতে এসেছে মাজেদা নামের একবৃদ্ধা।

পানি সরবরাহ শুরুর আগেই শতভাগ পানির ট্যাব চুরি হয়ে গেছে। পানির পাইপ স্থপনের সময় পৌর এলাকার ৮ কিলোমিটার রাস্তা খোড়া খুড়ি করা হয় কিন্তু সে গুলো সংস্কার করা হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা গুলো কাদা-জলে তলিয়ে যায়। এলাবাসীদের অভিযোগ ঠিকাদারের লাগানো পাইপ ও ট্যাব গুলো খবই দুর্বল ছিল। বচ্চারা কিছু তছরুপ করেছে। কিছু লাগানোর পর পর হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। পাইপ পোতার সময় এলাকাবসীদের জানানো হয়েছিল প্রতিদিন সকালে ও বিকালে দুই বার পানি সরবরাহ করা হবে। নিজেরা পাইপ সরবরাহ করলে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাসা-বাড়িতে পানি নিতে পারবেন। অনেকেই এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাসা-বাড়িতে পাইপ লাইন টেনে নিয়েছেন। কিন্তু তিন বছরে সর্বরাহের এক ফোটা পানি পাইনি কেউ, একদিনের জন্য।

পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাজেদা খাতুন। বয়স ৫০। চার সন্তানের জননী। নিজের বাড়িতে ব্যক্তিগত টিউবয়েল আছে। কিন্তু পানিতে প্রচুর আইরণ থাকায় বাড়ি থেকে প্রায় ৫ শ মিটার দূরে কালিবাড়িতে পানি নিতে এসেছেন। প্রায় দেড় বছর আগে নিজের পয়সা খরচ করে পাইপ আর তিনটি ট্যাব কিনে দিয়ে পানির সংযোগ নিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও পৌরসভা পানি সরবরাহ করেনি। অযতার্থ টাকা খরচ করে বসে ্আছেন। সরবরাহের পানি দিলে তাকে আর এই বৃদ্ধ বয়সে অতিরিক্ত কষ্ট করে খাবার পানি টেনে নিতে হতো না। তিনি খাবার পানি সমস্যার সমাধানের দাবি জানান।

পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহব্বত আলী জানান, দেড় বছর আগে তার বাড়ির বেড়ারর সাথে ঠিকাদার পাইপ দিয়ে গেছে। কিন্তু সেই পাইপে আর পানি আসেনি। তিনি জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রকৌশলীর উপর ক্ষুদ্ধ।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসেম আলী বলেন, পানি সরবরাহের লাইন তৈরী বা পরিকল্পনার সময় তাকে জানোই হয়নি। পাইপ লাইন স্থাপনের সময় যে সব রাস্তা কেটে চলাচলের অনুপযোগী করা হয়েছে, সে গুলো মেরামতের জন্য অনেকার পরিষদের মিটিং এ তোলা হয়েছে। কিন্তু রাস্তা আর সংস্কার হয়নি। তিনি পানি সরবরাহ সহ রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান।

পৌর সভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ টিপু প্রকল্পটি চালু না হওয়া হতাশ। তিনি জনান, বিলম্বে হলেও প্রকল্পের পাইপ, গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে পানি সরবরাহের ট্যাপ স্থাপন ও বাসা বাড়িতে পানির পাইপ লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পাম্প হাউস নির্মান কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। পানি সর্বরাহ চালু না হওয়ার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ও ঠিকাদার বলতে পারবে।

পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন আলী বলেন, কাজটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর। প্রকল্পটি হস্তান্তরের জন্য তাদের মৌখিক তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে একদিন পরীক্ষা মূলক পাম্প চালুকরে করেছিলেন। কিন্তু পাইপ লাইনে একাধিক লিকেজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ রিয়য়েও তারা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানিয়েছে। এ ছাড়া যেসব স্থানে সাধারণ মানুষের খাবার পানি নিশ্চিত করতে ট্যাব লাগানো হয়েছিল সে গুলোর একটিও নেই। মালামাল সংরক্ষনের জন্য হলেও প্রকল্পটি দ্রæত চালু হওয়া প্রয়োজন।

পৌর সভার প্যানেল মেয়র ও ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান টিপু নিজেও বলতে পারেন নি পানি সরবরাহ প্রকল্পের বিষয়ে। তিনি শুনেছেন অচিরেই পানি ছাড়া হতে পারে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন আলী জানান, প্রকল্পের সিংহ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। নতুন আরো একটি পাম্প হাউস নির্মান করা হচ্ছে। আগামী জুন মাসের দিকে প্রকল্পটিতে পানি সরবরাহ করা হতে পারে।

পৌরসভার মেয়র তরিকুল ইসলাম তারিক জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পোগুলো বাস্তবায়ন নিয়ে নিজেও ক্ষুদ্ধ। তিনি বলেন, পানি সর্বরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিলম্বের বিষয়ে ওই বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন কিন্তু লাভ হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন দীর্ঘ সূত্রতায় ঝুলে আছে। শুষ্ক মৌসূমের আগে পানি সরবরাহ চালু হলে পৌর বাসীরা উপকৃত হবে বলেও তিনি জানান।