নিহত সাংবাদিক বৃষ্টির মৃতদেহের অপেক্ষায় তিনদিন গেলো

0
101

শুধু শিক্ষকই নয়, মা বেটির সম্পার্ক ছিল

স্টাফ রিপোর্টার

আমি শিক্ষক, ও (অভিশ্রæতি বৃষ্টি ) আমার সাথে শিক্ষকের মত মেশেনি, মনে হয়েছে যে, আমি ওর মা। সম্পর্ক ছিল মা বেটির। পাঁবছর আমি ওকে মেয়ের মত দেখতাম, মেধাবী ছিল তাই অনেক বার তার বাড়িতেও গেছি। মেয়ে হিসেবে খুবই ভালো ছিল, শান্ত প্রকৃতির ছিল। ঢাকা থেকে ফিরলে মাঝে মাঝে স্কুলে এসে দেখা করতো। এভাবেই নিজের বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রী সাংবাদিক অভিশ্রæতি শ্বাস্ত্রী ওরফে বৃষ্টি খাতুনকে নিয়ে বলছিলেন বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মোছাঃ রাশিদা খাতুন।

রবিবার সকালে খোকসা উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বনগ্রামে নিহত ইডেন ছাত্রী ও সাংবাদিক অভিশ্রæতি বৃষ্টির বাড়ি যাওয়া হয়। শোকে যেন পাথর হয়ে গেছে পুরো পরিবার। স্থানীয় স্কুলের ছাত্র -ছাত্রী আর প্রতিবেশী আত্¥ীয়তে বাড়ি ঠাসা। নিহতের মা বিউটি বেগমকে ঘরের বারান্দায় এনে বসানো হয়েছে। তিনি বিলাপ করছেন, আমার সোনার কোথায় রাখলে গো, আমার সোনারে আমার কাছে দও। আমি একবার দেখবো গো। কখন আসকে সোনা মনি, কখন আসবে গো। আবার মেয়ের স্মৃতি চারণ করছেন। মাঝে মাঝে মুর্ছা যাচ্ছেন।

নিহত বৃষ্টির বাবা শাবলুল আলম সবুজ গত তিন দিন ধরে মেয়ের লাশ পেতে কখনো থানা, কখনো শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ইউনিটের মর্গ ঘুরে ঘুরে আদালতের দ্বারস্ত হয়েছেন। মেয়ের লাশ কবে পাবেন তা জানেন না। বিষয়টি ক্রমাগত জটিল হয়েছে কতদিন লাগবে তাও অনিশ্চিত বলে জানা।

সাংবাদিক অভিশ্রæতি ওরফে বৃষ্টি খাতুনের বাড়ির থেকে এক কিলোমিটার দূরে বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলেই বৃষ্টি মাধ্যমিক পড়ে ছিল। শিক্ষক উপবেশন কক্ষে দুই একজন শিক্ষক বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। বাঁকীরা কাসে ব্যস্ত। সেখানে কথা হয় শিক্ষিকা মোছাঃ রাশিদা খাতুনের সাথে। বৃষ্টির সাথে তার সম্পর্ক ছিল মা বেটির মত। মেধাবি ছিল তাই অনেক বার তার বাড়িতেও গেছেন। মেয়ে হিসাবে খুবই ভালো মেয়ে ছিল। শান্ত প্রকৃতিরও ছিল। সে (বৃষ্টি) মুসলিম পরিবারের মেয়ে। স্কুলে সে আমাদের নামাজ পড়ত। শান্ত ও মেধাবি ছিল।

এই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সুরাইয়া খাতুনের বড় বোনে বান্ধবি ছিল বৃষ্টি। ছোট বেলা থেকে সে বৃষ্টি আপুকে চেনে। কয়েক মাস আগেও বৃষ্টিকে কালো বোরকা পরে তাদের স্কুলের আসতে দেখেছিল। তারা বৃষ্টির মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি করে।

নিহত সাংবাদিক ও ছাত্রী বৃষ্টির প্রতিবেশী আব্দুল মজিদ বলেল, মেধাবী ছিল বৃষ্টি, মেধা হিসেবে একশোর মধ্যে একশো।

বনগ্রাম পশ্চিম পাড়ার জামে মসজিদের ইমাম মোঃ ইসমাইল হোসেন বললেন, মৃত ব্যক্তি মুসলমান হলে তার দাফন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

নিহত ছাত্রীর ছোট ফুপু রোজিনা জানান, তার কাছে সাভারে থাকত বৃষ্টি। মেয়ের এ্যাজমার সমস্য ছিল। শ্বাস কষ্টের কারণে করোনার সময় সে ঢাকাতে যায়। বৃষ্টি ধর্ম ত্যাগ করেনি।

রবিবার দুপুরে ইডেন কলেজের অধ্য অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম জানান, নিহত সাংবাদিকের নাম বৃষ্টি খাতুন। তার বাবার নাম সবুজ শেখ, মায়ের নাম বিউটি বেগম। কুষ্টিয়ার খোকসার বনগ্রামে তার বাড়ি।

অধ্য অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম আরও জানান, ২০১৭-১৮ সেশনে বৃষ্টি ইডেন কলেজের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়। দ্বিতীয় বর্ষের পরীা অংশ নেয়। এরপর বৃষ্টি তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ করে। কিন্তু আর পরীা দেয়নি। ইডেনের রাজিয়া বেগম হোস্টেলের আবাসিক ছাত্রী ছিল। সে দুই বছর পর হল ছেড়ে দেয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, তিনি যতটুকু সংবাদ নিয়েছেন তাতে বৃষ্টি খাতুন মুসলমানের মেয়ে। এখন আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে মৃতদেহ ফেরত পাওয়া লাগবে। তিনি জেনেছেন নিহতের বাবা শাবলুল আল সবুজ আদালতে আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার পক্ষ থেকে পরিবারকে সব ধরনের সহযোগীতা করা হচ্ছে বলেও জানান।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকান্ডে মারা যান অভিশ্রæতি শাস্ত্রী। তার মরদেহ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এর আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার আঙুলের ছাপ সংরণ করা হয়।