পাবর্ত জেলায় ১৬ ঘন্টার ব্যবধানে তিন ব্যাংকে ডাকাতি

0
95

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

পাবর্ত জেলার থানচি উপজেলা সদরের বাজারে দিনের বেলায় কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার ১৬ ঘন্টা আগে একই জেলার রুমা বাজারের সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় কেএনএফ এর স্বশস্ত্র সদস্যরা। তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

বুধবার বেলা ১টার দিকে থানচির কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক দুটিতে একযোগে হামলা করে সন্ত্রাসীরা। পাশাপাশি ব্যাংক দুটি লাগোয়া থানচি থানা। উপজেলা পরিষদর বাজারের কাছেই।

থানচি কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই বলেন, তাঁদের ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার ২৭০ টাকা লুটে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। ইউনিফর্ম পরা সাত-আটজন ডাকাত ঢুকে টাকার পাশাপাশি গ্রাহকদের মুঠোফোনও কেড়ে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কয়েকজনের হাতে থাকা ওয়াকিটকিতে টাকা লুট করার জন্য বাংলায় নির্দেশ আসছিল।

একই সময়ে হামলাকারীরা সোনালী ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যায় বলে জানান থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন। থানার পাশে এভাবে ডাকাতির ঘটনা কীভাবে ঘটল, জানতে চাইলে ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পজিশন নিয়েছিলাম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একই সময়ে ডাকাতদের দুটি দল দুটি ব্যাংকে ঢোকে। এর আগে তারা প্রায় ৪০ জন ২টি গাড়িতে করে বাজারে আসে। ভেতরে চার থেকে আটজন ঢুকলেও বাকিরা বাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা কয়েকটি ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। টাকা নিয়ে বের হওয়ার পর তারা পুনরায় গাড়িতে উঠে গুলি ছুড়তে ছুড়তে চলে যায়।

বাজারের পাশে টিলার ওপর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাসের একটি কার্যালয় রয়েছে। ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তা হ্যান্ডি ত্রিপুরা ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় বাসস্ট্যান্ড, শাহজাহানপাড়া, স্টেশন বাজার সব দিক থেকে গুলি হচ্ছিল। লোকজন ছোটাছুটি করতে শুরু করে। আমরা অফিসে তিনজন ছিলাম। তিনজনই ভয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ি। গুলি বন্ধ হলে আস্তে আস্তে উঠে বসি। তখনো আমরা ভয়ে জড়সড়।

আজ থানচির সাপ্তাহিক হাটবার। তাই আজ সকালে বাজারে লোকজন ভর্তি ছিল। দুপুর হতে হতে তা কমে আসে। এ সময় কেনাকাটা করছিলেন রেমাক্রি ইউনিয়নের সদস্য জন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, গুলির শব্দে মানুষ ছোটাছুটি শুরু করে। আমি একটা দোকানে ঢুকে পড়ি। ভেতর থেকে দোকানটা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর গুলি থামে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আমরা দোকান থেকে বের হই। তখন শুনি ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে।

থানচি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার সময় যে যেভাবে পেরেছেন, দোকান বন্ধ করে পালিয়েছেন। এখনো নিরাপত্তাহীন সবাই।

ব্যাংক ডাকাতির পর কেএনএফ সদস্যদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে দুই গাড়িচালক পুনরায় বাজারে আসেন। তখন কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। দুই চালকের ভাষ্য, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে থানচি বাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের তংকং পাড়া থেকে একজন ফোন করে দুটি গাড়ি লাগবে বলে জানান। দুই গাড়ি ভুসি নিয়ে থানচি বাজারে আসবে বলে গাড়িচালককে বলা হয়। সে অনুযায়ী দুটি গাড়ি তংকং পাড়ায় যায়।

দুই চালকের একজন বলেন, তংকং পাড়ায় পৌঁছে কেএনএফ সদস্যদের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখতে পান। তখন আর ফিরে আসার উপায় ছিল না তাঁদের। ওই ২ গাড়িতে করে প্রায় ৪০ জন বাজারে আসে বেলা ১টা বাজার ৫ মিনিট আগে। ডাকাতেরা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি ব্যাংকে ঢোকে। ব্যাংক থেকে বের হয়ে আগের দুটির পাশাপাশি আরও একটি গাড়ি বাজার থেকে নিয়ে তারা তংকং পাড়ায় পৌঁছায়। যাওয়ার পথে ছান্দাকপাড়ার সামনে গুলি ছোড়ে। পৌঁছে দেওয়ার পর তাঁদের কোনো গাড়িভাড়া দেওয়া হয়নি বলে তাঁরা জানান।

কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এর আগেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

সেই আস্তানায় গত বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

কেএনএফ সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা’ কমিটি গঠন করা হয় গত বছরের মে মাসে। ওই কমিটির সঙ্গে গত ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয় বেথেলপাড়ায়।