মধ্যবিত্তের স্বার্থ উপো করে কী লাভ!

0
238
প্রতিকী ছবি সংগ্রহ

ড. আর এম দেবনাথ

এখন বাঙালির প্রিয় শরৎকাল। আশ্বিন মাসের ১৭ তারিখ। দেশে একটু হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। করোনার সংক্রমণ বেশ কিছুটা কম। মানুষ ঘর থেকে বেরোনো শুরু করেছেন। স্কুল খুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলেছে। অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যাংক-বিমা, দোকানপাট খুলেছে। ট্রেন চলছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলো চালু হয়েছে। জামা-কাপড়, জুতা-মোজা, প্রসাধনসামগ্রী, টিভি-ফ্রিজের ব্যবসায় একটু প্রাণ ফিরে এসেছে। বহুদিন পর। কারণ একটা অবশ্য আছে।

সামনে হিন্দু স¤প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এ মাসের ১০-১১ তারিখে শুরু হয়ে ১৫ তারিখে দশমী। এ উপল্েয হিন্দু জনগণ পূজার বাজারে নেমেছেন। গেলবার তারা পূজা ঠিকভাবে উদযাপন করতে পারেননি, যেমন পারেননি মুসলিম জনগোষ্ঠী পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে। এবার দোকানে দোকানে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ভিড়। ক্রয়মতা তাদের এখন কম নয়। প্রায় এক-দুই কোটি মানুষ সারা দেশে। কয়েক হাজার হয় পূজামÐপ। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। হিন্দুদের পূজা এখানেই শেষ নয়।

দুর্গাপূজার পর আছে ল²ী, কার্তিক, কালী ও সরস্বতী পূজা। এগুলো সবই ফসলভিত্তিক, কৃষিকাজভিত্তিক পূজা। বোঝাই যাচ্ছে সামনে উঠবে অগ্রহায়ণী ফসল, যাকে আমরা আমন ফসল বলি। এক সময় আমনই ছিল প্রধান ফসল। তখন নাকি বাঙালির নববর্ষও ছিল (অগ্রহায়ণী)। এখন বোরো হচ্ছে প্রধান ফসল। তৃতীয় স্থানে আউশ। এতদসত্তে¡ও আমাদের আমন ধানের ফলন কম নয়। বছরে এখন ১৫০-১৬০ লাখ টনের মতো আমন পাই আমরা।

খবর যা তাতে বোঝা যাচ্ছে, এবার আমনের ফলনও হবে ভালো। মানুষ এ কারণে এখন ভাতের কষ্টে নেই। কার্তিক-অগ্রহায়ণ হচ্ছে আমন ধানের মাস। তারপরই পৌষ হলো পিঠা-পুলির মাস। ঘরে ঘরে হবে আনন্দ-উৎসব। চারদিকে থাকবে নানা অনুষ্ঠান। এসে যাবে শীতকাল। খেজুরের গুড় ও রস আসবে বাজারে। তাই বোঝা যায় শরৎ ও শীতকাল ব্যবসার মৌসুম। ধান-পাট বেচা-কেনা হবে। কৃষকের হাতে টাকা আসবে। টাকা আসবে রেমিটেন্স থেকে। কৃষক তার দেনা-পাওনা শোধ করবে। গ্রামে গ্রামে মেলা হবে।

এদিকে আবার দুঃখ-দুর্দশার খবরও আছে। দুর্গাপূজার শেষলগ্ন থেকে জেলেদের ইলিশ ধরা বন্ধ, মানে নিষিদ্ধ হবে। বস্তুত হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষ দশমীর পরদিন থেকে আগের দিনে ইলিশ মাছ খেত না। আমি দেখেছি, পুরান ঢাকার বাজারে তখন ইলিশ উঠত না। এ কারণে জেলেদের দুঃখ-কষ্ট বাড়বে। সরকার অবশ্য আজকাল তাদের দেখাশোনা করে। নগদ টাকা, চাল দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখে। এবার আবার একটা জরুরি কাজও আছে।

আনন্দ-ফুর্তির মধ্যেই করোনার টিকা প্রদানের কাজ অব্যাহত থাকবে। ২৮ তারিখ ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন। তিনি ৭৫-এ পা রাখলেন। এ উপল্েয সারা দেশে ৭৫ লাখ টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। বিরাট ঘটনা। একদিনে ৭৫ লাখ টিকা! এভাবে এগোলে অল্পদিনের মধ্যেই আমরা করোনাবিরোধী টিকা প্রদানের কাজ শেষ করতে পারব এবং শুরু করতে পারব স্বাভাবিক জীবন।

ইতোমধ্যে দুর্গাপূজা দিয়ে নতুনভাবে যে ব্যবসার শুরু, তা আরও বাড়তে থাকবে। আমন ধান উঠবে, নতুন পাট আসবে বাজারে, শীতকালীন সবজির আমদানি বাড়বে, শীতে মাছের বাজার জমে উঠবে। যেহেতু করোনার আক্রমণ নি¤œমুখী, তাই স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াবে।

এদিকে অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি লণ পরিষ্কার হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সম্পর্কিত নীতিমালা শিথিল করছে। পাসপোর্টের মেয়াদ যতদিন ততদিনের জন্য প্রাপ্য সমুদয় বৈদেশিক মুদ্রা একসঙ্গে ‘এনডোর্স’ করার বিধান করেছে। ব্যাংক খাতে টাকা গড়াগড়ি করছে। চারদিকে শুধু আমানত আর আমানত।

মানুষ বিনিয়োগের আর কোনো পথ না পেয়ে ব্যাংকেই ছুটছে। এই সুযোগে একশ্রেণির ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার ৬ শতাংশের স্থলে ২-৩ শতাংশে কমিয়ে আনে। বাজারে এর বিরূপ সংকেত যায়। সঞ্চয়কারীদের কাছে পৌঁছে খারাপ সংবাদ। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তড়িঘড়ি পদপে নেয়। বলে দেওয়া হয়, ৬ শতাংশের নিচে আমানতের ওপর সুদের হার হবে না। তবু দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো ব্যাংক ত্রৈমাসিক আমানতের ওপর মাত্র ৫ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এমনকি সরকারি ব্যাংকও তাই। অথচ মানুষ এখন ত্রৈমাসিক আমানতই বেশি রাখে।

ব্যাংক ঋণ দেওয়ার কোনো জায়গা পাচ্ছে না। অথচ সবাই জানে অতিুদ্র, ুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প কোনো ঋণ পাচ্ছে না। কৃষি খাতে কোনো ঋণ ও বিনিয়োগ নেই। এ খাতের উৎপাদনশীলতা নি¤œমুখী। ব্যাংক খাতে কর্মীদের চাকরি যাচ্ছে। এর অর্থ, বাজারে ক্রয়মতা হ্রাস পাবে। আবার খবর আসছে, ঋণগ্রহীতাদের একটা অংশ বলছে, তারা কোনো সুদ দিতে পারবেন না। ‘মাইশা গ্রæপ’ নামে একটি গ্রæপ আছে, যার রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

মালিকের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী এ গ্রæপের হাল ধরে ব্যাংকগুলোকে জানিয়েছেন, তিনি কোনো সুদ দিতে পারবেন না। অথচ তাদের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৩ হাজার কোটি টাকা। প্রচুর আমানতের বিপরীতে ব্যাংকে ঋণের েেত্র এই এক নতুন ধারা সূচিত হচ্ছে। আগে পুনঃতফশিল চাইত বড় বড় গ্রাহকরা, এখন তারা সুদই দিতে চায় না। বলে রাখা দরকার, বড় বড় গ্রাহকের একটা ক্রমবর্ধিষ্ণু অংশ ধীরে ধীরে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে অথবা ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা বিদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হচ্ছে।

এদিকে ব্যাংক নতুন বিনিয়োগের ত্রে পাচ্ছে না। বড় উদ্যোক্তা পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু ছোট ছোট উদ্যোক্তার তো অভাব নেই। আমি ভুঁইফোঁড় ‘স্টার্টআপের’ কথা বলছি না, যারা বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অনলাইন ব্যবসার নামে লুট করে নিচ্ছে। তাদের প্রতারণার শিকার আমাদের মাননীয় বাণিজ্যমন্ত্রীও। আমি তেমন ব্যবসায়ীদের কথা বলছি না। ছোট ছোট উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী দেশে ৭০-৮০ লাখের কম নয়। তাদের দিকে নজর দিতে বাধা কোথায়?

এদিকে রেমিটেন্সের উল্লম্ফন মনে হয় বন্ধ হয়েছে। দুই-তিন মাস ধরে রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধির হার কম। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসাও আগের পর্যায়ে আসেনি। মনে হয় এসবে গতি আসতে সময় লাগবে। গতি আসছে না বলেই বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে রেকর্ডের পর রেকর্ড। বিনিয়োগ বাড়লে, ব্যাংক ঋণ বাড়লে আমদানি বাড়ত, ডলার খরচ হতো। সেটি হচ্ছে না। রাজস্বের গতিও ফিরে আসছে না। স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি মোটামুটি আছে, কিন্তু সরকার যে গতিতে রাজস্ব বৃদ্ধি চায়, তা হচ্ছে না।

ইতোমধ্যে নভেম্বরে চলে এসেছে কর প্রদানের শেষসীমা। এর মধ্যেই কর রিটার্ন দিতে হবে, বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে। করদাতাদের পকেট থেকে টাকা চলে যাবে সরকারের হাতে। এই সামগ্রিক বিষয়টিতে কোথাও যেন সমন্বয়ের অভাব আছে। মুদ্রানীতি, বাণিজ্যনীতি ও রাজস্বনীতির মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি শক্তিশালী ‘কোর্ডিনেশন কাউন্সিল’ আছে, যার প্রধান মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।

তিনি একবার বলেছিলেন, যতদূর মনে পড়ে, অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হবে মুদ্রানীতি দ্বারা নয়, নিয়ন্ত্রিত হবে রাজস্বনীতি ও বাণিজ্যনীতি দ্বারা। জানি না এ কাজ তিনি শুরু করেছেন কিনা। কারণ মুদ্রানীতির ‘নড়াচড়া’ই বেশি ল করছি আমরা। সে যাই হোক, সমন্বয় জরুরি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অতিরিক্ত, আমানত অতিরিক্ত, রেমিটেন্সে টান, বিনিয়োগে স্থবিরতা, চাকরিহীন প্রবৃদ্ধি, বৈষম্য বৃদ্ধি, বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি, প্রয়োজনের বাইরে প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি পরিলতি হচ্ছে ‘হাই গ্রোথের’ পাশাপাশি। সবকিছুর মধ্যে একটা সামঞ্জস্য দরকার। আমাদের হাই গ্রোথ দরকার, দরকার সমতাভিত্তিক সমাজও, যা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।

শেয়ারবাজারে চলছে উল্লম্ফন। দেখা যাচ্ছে, এখানে উল্লম্ফন খারাপ শেয়ারের মূল্যে। অথচ বাজারে নতুন কোনো শেয়ার নেই। কারা শেয়ার বেচা-কেনা করে শেয়ারের দাম এত উঁচুতে নিচ্ছে, তাও কেউ জানে না। শেয়ারবাজার থেকে কোনো পুঁজিও বাজারে আসছে না। পুরোনো শেয়ারের হাতবদল মাত্র। এরও সমন্বয় দরকার। দরকার অর্থনীতির অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শেয়ারবাজার। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পুরোনো ধারণার রদবদল করার এখনই সময়।

১০-১৫ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অর্থমন্ত্রী মহোদয় নতুন পথের সন্ধান দেবেন কিনা, তার অপো আমাদের সবারই। তার সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ আসছে বড় বড় ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে। প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, সময় দেওয়া হয়েছে, সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এখন ফল পাওয়ার সময়। ঘুরে দাঁড়াতে হলে তা হতেই হবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টিতে আশ্বস্ত হওয়া কঠিন।

একের পর এক কোম্পানি/গ্রæপ (নাম বলছি না, এসব কাগজে ছাপা হচ্ছে প্রতিদিন) যদি বসে যায়, তাহলে এগুলো বিক্রি করেও কোনো টাকা পাওয়া যাবে না। ভারতের উদাহরণ এখানে স্মরণীয়। বকেয়াও আদায় হবে না। ছেলেমেয়েরা দায়িত্ব নেবে না। এ অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে এ বিষয়টি মনে রেখে এগোতে হবে।

শরৎ, হেমন্ত ও শীতকালের নতুন ধান-পাট ওঠা, পূজা-পার্বণ, উৎসব, মেলা, গ্রামীণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর যে লণ দেখা যাচ্ছে, করোনা সংক্রমণে যে অধোগতি ল করা যাচ্ছে, তাতে আমাদের করণীয় হতে হবে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে প্রণোদনার কাজ চলছে। একে আরও জোরদার করতে হবে, স¤প্রসারিত করতে হবে, বাস্তবমুখী করতে হবে।

এসব হচ্ছে অধিকাংশ েেত্রই জোগানের দিক। কিন্তু যে দিকটি উপেতি থাকছে সেটি হচ্ছে চাহিদার দিক। একটি উদাহরণই যথেষ্ট। ২৭ সেপ্টেম্বর এক ভদ্রলোক রাস্তায় তার মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন। মনস্তত্ত¡বিদরা তাকে পাগল বলতে পারেন। কিন্তু বাস্তব সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভদ্রলোক দেখা যাচ্ছে ব্যবসা করতেন। ভালোই চলছিল তার ব্যবসা। করোনা তার সর্বনাশ ঘটায়। ব্যবসা বন্ধ হয়। তিনি হন লোকসানি ব্যবসায়ী।

উপায়ান্তর না দেখে মোটরসাইকেল কেনেন ‘রাইড শেয়ারিং’ করবেন বলে। ১০০ টাকা রোজগার করে ফড়িয়া ‘অ্যাপ কোম্পানি’কে তিনি ২০ টাকা দিতে রাজি নন। বড় কষ্টের টাকা। তাই বিনা অ্যাপে তিনি মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। পুলিশের আইন বলে কথা! বারবার মামলা খাচ্ছেন তিনি। এবার পুলিশকে বললেন সাইকেলের কাগজপত্র ফেরত দিতে। পুলিশ দিচ্ছিল না। রাগে-ােভে-দুঃখে তিনি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেন। এর ছবি মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।

এ ঘটনা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বাঁচার পথ কী? রোজগারের পথ কী? এই করোনা মহামারির মধ্যেও শত শত ব্যাংকারের চাকরি গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে বলেছে। হাজার হাজার গার্মেন্ট কর্মীর চাকরি গেছে। ব্যবসাচ্যুতি, চাকরিচ্যুতি, বেকারত্ব ইত্যাদি মানুষের রোজগার কেড়ে নিয়েছে। সরকারের রাজস্বনীতিও মানুষের, মধ্যবিত্তের রোজগার কেড়ে নিচ্ছে।

সর্বশেষ ঘটনা সঞ্চয়পত্রের সুদ। সুদ কমানো হয়েছে। ১৫ বা ২০ অথবা ৪০ লাখ টাকা কী এমন টাকা? পাকিস্তান আমলে এ পরিমাণ টাকা মানে ‘লাখপতি’, বিশাল ব্যাপার। এখন এ টাকা দিয়ে বহু উপজেলা সদরে এক কাঠা জমিও পাওয়া যায় না। ঢাকা শহরের কথা বাদ। পঞ্চাশ পয়সা-এক টাকার ইলিশের দাম এক হাজার টাকা। ১০০ টাকার স্বর্ণের দাম ৫০-৬০ হাজার টাকা। দশ পয়সা হালি সবরি কলার দাম ৪০ টাকা।

এখন বলুন, এই বাজারে ২০-৩০-৪০ লাখ টাকা কত টাকা? অথচ অর্থ মন্ত্রণালয় একে ভিত্তি ধরে ধনী-গরিব চিহ্নিত করে সুদের হার কমিয়েছে সঞ্চয়পত্রের ওপর, যা মধ্যবিত্তের বাঁচার উপায়। পাশাপাশি কি সরকারি কর্মচারীদের ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড’র ওপর সুদ কমানো হয়েছে? এটা জানা নেই। ফলাফল- চাহিদা হ্রাস, ক্রয়মতা হ্রাস, ভোগ হ্রাস। তাহলে বাজার হবে কীভাবে? জোগান আছে, ক্রেতা নেই। এ জায়গাটায় ভাববার আছে।

মধ্যবিত্তকে নিঃশেষ করে পরিণামে কারও লাভ নেই। শুধু বিদেশে তৈরি পোশাক বিক্রি করে চিরদিন চলবে না। চীন এর উদাহরণ। তারা অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে নজর দিয়েছে। ভোগের ওপর ট্যাক্স, আয়ের ওপর ট্যাক্স- তা কী করে হয়? অথচ তা হচ্ছে, মানুষের ক্রয়মতা হ্রাস পাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি দেখবেন আশা করি।

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়