মোবারকগঞ্জ চিনিকল, ২শ টাকার উৎপাদন ব্যয়ের চিনি ৬০ টাকায় বিক্রি

0
145

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকলে সুদসমেত প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২শ টাকা আর সেই চিনিই বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। ফলে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রতিবছর গড় লোকাসান গুনতে হচ্ছে পৌনে একশ কোটি টাকা।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একদিকে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন অন্যদিকে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় মোবারকগঞ্জ চিনিকলে হরিলুট শুরু হয়। আখ ক্রয় থেকে শুরু করে সর্বত্রই লুটপাট চলে আসছে। ব্যাংক ঋনের ভারে প্রতিষ্ঠানটি ক্রমাহত লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। যার পরিনতিতে প্রতি কেজি চিনি উৎপাদন করতে ব্যাংক ঋনের সুদ দিতে হয় প্রায় ৮০ টাকার কাছাকাছি।

মোবারকগঞ্জ চিনি কলের চিনি উৎপাদন ও বিপনন বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ মাড়াই মৌসুমে মিলটিকে এক কেজি চিনি উৎপাদন করতে ব্যাংক সূদ দিতে হয়েছে ৭৮.১১ টাকা। ওই বছর মিলটি এক কেজি চিনি উৎপাদন করতে সূদ বাদে খরচ হয়েছিল ১৩৩.০৩ টাকা। আর সূদসহ উৎপাদন ব্যয় হয় ২১১.১৪ টাকা। ২১১ টাকায় উৎপাদিত চিনি বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ টাকায়।

গত ২০২০-২০২১ মৌসুমে এক কেজি চিনিতে উৎপাদন খরচা পড়েছিল ১৯৩.৫৮ টাকা। আর সেই চিনিই মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। এ বছর এক কেজি চিনি উৎপাদন করতে মিলটিকে ব্যাংক সুদ গুনতে হয় ৬৯.৫৮ টাকা। তবুও এ বছরের উৎপাদন ব্যয় প্রায় ১০ কোটি টাকা কম হয়েছে।

সুত্রটি আরো জানায় জানায়, ২০২০-২০২১ আখ মাড়াই মৌসুমে মিলটি ৭ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে। যার মধ্যে ২ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন চিনি অবিক্রিত রয়েছে। এই পরিমাণ চিনি উৎপাদন করতে মিলের লোকসান দিতে হয়েছে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা। আর মোট এই লোকসানের মধ্যে অর্ধেকের বেশি রয়েছে ব্যাংক সুদ। যার পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।

মোবারকগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, পুরাতন যন্ত্রপাতি, কৃষক পর্যায়ে আখের মূল্য বৃদ্ধি, জনবল সংকট, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি ও ব্যাংক ঋণের সুদের মিলটিতে চাপে চিনি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে চিনির বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় লোকসান বাড়ছে।

উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৯৬৫ সালে নেদারল্যান্ড সরকার মোবারকগঞ্জ চিনিকলটি স্থাপন করে। এ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১১৮৪ পদের বিপরীতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক কর্মচারী রয়েছে ৬৭৯ জন। প্রথম দিকে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হলেও ক্রমাগত এটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে।