লোকসানের ভয়ে জমি থেকে পেঁয়াজ তুলছেন না কৃষক

0
124

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসায় পেঁয়াজের ফলন না পেয়ে লোকসান ঠেকাতে অনেক কৃষক জমি থেকে পেঁয়াজ না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসব কৃষকের দাবি তারা সরকারী প্রণোদনার বীজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন।

চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৬৩৭৩ একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়। সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে খরিদ এবং সরবরাহ করা নিন্মমানের পেঁয়াজ বীজ দিয়ে জমি আবাদ করে মারাত্মক ফলন বিপর্যয়ের মুখে পরেন। কৃষকদের দাবি বিঘা প্রতি গড় ১০ মন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে অতিরিক্ত খরচ ও লোকসান ঠেকাতে অনেক কৃষক পেঁয়াজ না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এ ছাড়া নতুন পেঁয়াজে গাছ গজিয়ে যাওয়ায় মজুত রাখা যাচ্ছে না। তাই স্থানীয় হাট বাজারে ভালো পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। একদিকে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া অন্যদিকে ফলন ও দাম কমে যাওয়ায় চরম বিপাকে পরেছে তারা।

ইতোমধ্যেই লোকসান ঠেকাতে পৌর এলাকার ছাত্তার খান ও আলম নিজের জমি থেকে পেঁয়াজ তুলবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এসব জমির পেঁয়াজ হয়নি। শ্রম ব্যয় করে তোলাই বৃথা হবে। তাই গ্রামের লোকজনদের জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নিতে বলেছেন। কিন্তু দুই এক জন ছাড়া কেউ ফ্রিতে পেঁয়াজ নিতে আসছে না।

পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ড মালিগ্রামের কৃষক ছাত্তার খান। নিজের ফার্মের একটি গরু বিক্রির দুই লাখ টাকা দিয়ে ৫ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে রবি মৌসূমে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। লেকসান ঠেকাতে সরকারী প্রণোদণার বীজে রোপণ করা এক বিঘা জমির পেঁয়াজ না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদের জন্য কৃষি অফিস থেকে ছাত্তার খানকে ২কেজি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের দানা (বীজ) ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার দিয়েছিল। মাঠে চারা রোপণের এক সপ্তাহ পর থেকে চারা গুলোয় মড়ক দেখা দেয়। প্রতিষেধক দিয়ে মড়ক থামলেও চারার সাথে আর পেয়াজ হয়নি। যেমন চারা তেমনই রয়ে গেছে। এ গ্রামের কৃষক পোকন আলী, প্রান্তি কৃষক হুমায়ুন, আমজাদ আলী, আজাহার প্রামানিক ও মোশারফ প্রামানিক প্রণোদনার বীজ দিয়ে পৃথক পৃথক জমি আবাদ করেছিলেন। তাদের জমিতেও পেঁয়াজের ফলন হয়নি। কৃষকদের দাবি, এ বছর বাজার থেকে হাউব্রিড জাতের পেঁয়াজের দানা (বীজ) খরিদ করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন। সরকারী ভাবে সরবরাহ করা প্রণোদনার বীজ নিয়ে তার থেকে বেশী প্রতারিত হয়েছেন। পেঁয়াজ চাষ করে এ বছর অনেক কৃষকে পথে বসতে হবে বলে তারা মনে করেন।

কৃষক ছাত্তার খান বলেন, সরকারী ভাবে সরবরাহ করা প্রণোদনার বীজ রবি মৌসূমে রোপণের উপযোগী নয়। এই বীজের জন্য তার ক্ষতি গ্রস্থ্য হয়েছেন। সরকারী বীজে তিনি ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেছিলেন। এ সব জমিতে গাছের সাথে পেঁয়াজ না থাকায় তিনি এক বিঘা জমির পেঁয়াজ তুলবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবছর সব জমি মিলে ১৫ মন পেঁয়াজ ফলাতে পারেনি। সামান্য যে পেঁয়াজ পেয়েছেন তাও আবার ঘরে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিটি পেঁয়াজ থেকে নতুন গাছ গজাচ্ছে। এই জমি আবাদ করতে তার প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি বীজ সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনসহ কৃষকদের ক্ষতি পুরণের দাবি করেন।

এ কৃষকের স্ত্রী খুশি খাতুন জানান, তারা অন্য ফসল বপণের জন্য জমি তৈরী করবেন। তাই গ্রামের মানুষদের পেঁয়াজ তুলে নিতে বলেছেন কিন্তু কেউই জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে নিতে আসছে না। গত বছর স্বামী স্ত্রী মিলে রাত জেগে মাঠে পেঁয়াজ পাহারা দেওয়া হয়েছে। এই কৃষাণী সহ অন্য কৃষাণীরা জানান আরো জানান, এবছর পেঁয়াজ ঘরের রাখা যাচ্ছে না। গাছ থেকে পেঁয়াজ কেটে আলাদা করার দুই দিন পরই আবার নতুন গাছ গজাতে শুরু করছে। পেঁয়াজ মজুদ রাখা যাচ্ছেনা।

উপজেলার সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, আবহাওয়া জনিত কারণে কিছু কিছু জমিতে পেঁয়াজের ফলনে তারতম্য হয়েছে। প্রায় ১০০ জন কৃষক প্রণোদনার বীজ নিয়েছেন। সব কৃষক ক্ষতির শিকার হয়নি। এ বছর প্রতি বিঘায় প্রায় ৬০ মন ফলন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ কুমার সাহা জানান, এখন যে পেঁয়াজা জমি থেকে তোলা হচ্ছে সেটাকে হালি পেঁয়াজ বলে। এই পেঁয়াজের জন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনার বীজ দেয়নি। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের জন্য প্রণোদনার বীজ দেওয়া হয়েছিল। তাদের বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ মন ফলন হয়েছে। তিনি আরো জানান, কৃষকরা সঠিক সময়ে বীজ বপণ ও পরিচর্যা না করা ফলনে বিপর্যয় হয়েছে।