কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষসহ ১৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকালে কলেজের বিজ্ঞান ভবন থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রায় এক ঘন্টা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধের কারণে ওই সড়কে দীর্ঘ যানজটসহ জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটি কু-চক্রী মহল পুলিশের সঙ্গে যোগসাজসে মামলাবাজির ব্যবসা করতেই এই মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছে। ওই কুচক্রী মহলটি আমাদের শিক্ষা জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়াসহ কলেজ ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করে শিক্ষার মনোরম পরিবেশ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে ষড়যন্ত্র ও হয়রানি মূলক মামলা থেকে ১৩ শিক্ষকের নাম নিঃশর্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যথায় দাবি আদায়ের জন্য লাগাতার ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জনসহ কঠোর কর্মসূচী গ্রহণের হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এদিক এ ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার কান্ডজ্ঞানহীন এবং কু-চক্রী মহলের নিন্দনীয় কাজের ফল হিসেবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে এর একটা সুরাহার দাবি করে কলেজের অধ্যক্ষ মোল্লা মো. রুহুল আমিন বলেন, এ জাতীয় নিন্দনীয় কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়া এলাকার জান মোহম্মদ জানুর ছেলে শেখ সবুজ রহমান (৪০) শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় বিগত ৫ আগস্ট দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে শহরের কোর্টপাড়া এলাকার মেহেরজান রেস্টুরেন্টের সামনে পৌঁছালে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিশির কুমার রায়, সাবেক উপাধ্যক্ষ আনছার হোসেন, প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যক্ষ আকলিমা খাতুন, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোহা: রোকনুজ্জামান, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ হাশেমুজ্জামান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বিকাশ চন্দ্র সাহা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর নবীনূর রহমান খান, প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ রহমান, গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মন্ডল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আলতাফ হোসেন, হিসাব-বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রথীন্দ্রনাথ সাহা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিজ্ঞানী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমানা আফরোজ রেশমা ও একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর নূর ইস সাবা হুমায়রার নির্দেশে এজাহার নামীয় ২১ জন আসামিসহ অজ্ঞাত নামা আরো ৫-৭ জন তার ওপর ওপর গুলি ও হামলা চালায়।
হামলার এক পর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে অন্যান্যরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি ঢুকে রয়েছে। এ ঘটনার দীর্ঘদিন পর গত ১১ ফেব্রæয়ারি আহত শেখ সবুজ রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ১৩ জন শিক্ষকসহ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, মামলার ১৬ নাম্বার আসামি হিসাবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও কিশোর গ্যাং প্রধান শেখ এসকে সজিবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৫ আগস্টের দুই দিন পর ৭ আগস্ট শেখ এসকে সজীবসহ ২৭ জন কুষ্টিয়া জেলা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যায়। অথচ মামলার ঘটনার তারিখ ৫ আগস্ট দেখানো হয়েছে।
দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার কারণে থানায় মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে বলে এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন – খোকসায় বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ
মামলার বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে কেউ যে কারও বিরুদ্ধে কগনিজেবল অভিযোগ নিয়ে আসলে মামলা হতেই পারে। আমরা তদন্তু করে দেখবো ঘটনার সত্যতা আছে কি না। সত্যতা না পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশীট হবে না।