সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

0
144
DROHO-14-10-2020-P৮
সাবেক ভিপি নূর

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

ফেইসবুক লাইভে এসে ধর্ষণ মামলার বাদীকে ‘দুশ্চরিত্রা’ আখ্যায়িত করায় এবার ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে।

বুধবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে এ মামলাটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের সেই শিক্ষার্থী, যিনি এর আগে নূরসহ ছাত্র অধিকার পরিষদের ছয় নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা, চরিত্র হনন ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা করেছিলেন।

এ আদালতের পেশকার শামীম আল মামুন জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা মামলার আরজিতে দুইজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

বিচারক ওই শিক্ষার্থীর জবানবন্দি নিয়ে আগামী ২৯ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান শামীম আল মামুন।

ওই শিক্ষার্থীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলার আসামিদের ধরতে রোববার মধ্যরাতে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের অভিযানের মধ্যে ফেইসবুক লাইভে এসে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় কথা বলেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, যাকে গত কিছুদিন ধরে নিয়মিত ধর্ষণবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মামলার বাদীর ‘চরিত্র’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে নূর বলেন, “একেবারেই হাস্যরসাত্মক, ছিঃ! আমরা ধিক্কার জানাই যে, এত নাটক করছে, যেই দুশ্চরিত্রা। যে ধর্ষণের নাটক করছে। স্বেচ্ছায়…।”

মেয়েটির অভিযোগ, একই বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কর্মী হওয়ায় এই পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ হয়। সেই সম্পর্কের জের ধরে ৩ জানুয়ারি লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ মামুন। তখন সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ তার ‘পাশে দাঁড়ান’। চিকিৎসায় সহায়তা করার পর মামুনকে খুঁজে পেতে সাহায্যের কথা বলে চাঁদপুরে নিয়ে ফেরার পথে নাজমুল সোহাগও লঞ্চের মধ্যে তাকে ‘ধর্ষণ করেন’। পরে ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তিনি নূরসহ তাদের অপর সহকর্মীদের কাছে গেলে প্রথমে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করলে চরিত্রহননের’ ভয় দেখান।

এসব অভিযোগে গত ২১ ও ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় নূর ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন ওই শিক্ষার্থী।

ওই দুটি মামলা করা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। পরে শাহবাগ থানায় তিনি আরেকটি মামলা করেন ‘সাইবার বুলিংয়ের’ অভিযোগে।

লালবাগের মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হাসান আল মামুনকে, যিনি এতদিন ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দ্বিতীয় মামলার প্রধান আসামি সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ।

নুরুল হক নুরসহ সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা ও কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকিকেও সেসব মামলায় আসামি করা হয়।

১৭ দিনেও আসামিদের কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় গত ৮ অক্টোবর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়ে অনশন শুরু করেন মামলার বাদী সেই শিক্ষার্থী। পুলিশ ‘প্রভাবিত’ কি না, সেই প্রশ্নও তিনি তোলেন।

অনশন শুরুর দুই দিন পর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ফের সেই জায়গায় বসে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

গত রবিবার রাতে রাজধানীর মগবাজার ও আজিমপুরে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণ মামলার দুই এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুল ও নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান।

দুইজন গ্রেপ্তার হওয়ার রাতেই ফেইসবুক লাইভে এসে মামলার বাদীকে নিয়ে বক্তব্য দেন নুরুল হক নূর, যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।