জনবল সংকট : ৪০ মিনিট বিলম্বে চলে এক জোড়া ট্রেন

0
129

স্টাফ রিপোর্টার

স্টেশনের সিগনাল ঘরে আর বাতি জ্বলে না। রেল লাইনের সিগনাল পাখায় পাখায় লাল সবুজ বাতির আলোও ওঠে না। জনবল সংকটে পোড়াদাহ-রাজবাড়ী রুটের মধ্যবর্তী খোকসা স্টেশনটি ক্লোজিং ডাউন ঘোষনা দেওয়ায় এখন ট্রেনের ক্রসিং বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকা গামী তিন জোড়া আন্ত নগর ও মেলই ট্রেনসহ আভ্যন্তরীর রুটের যাত্রীবাহী অধিকাংশ ট্রেন এই স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করে রাখা হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা।

পশ্চিম রেলওয়ের শত কিলোমিটার দীর্ঘ পোড়াদাহ-রাজবাড়ী রুটের মধ্যবর্তী খোকসা স্টেশন। একজন স্টেশন মাস্টার, দুইজন বুকিং সহকারী, চারজন পয়েন্টম্যান, চারজন পোটার, ক্লিনার ও মালিসহ ১৫জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুমোদন রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে হঠাৎ করে স্টেশন মাষ্টার তৈফিক আহম্মেদকে ঈশ্বরদী বাইপাসে পেশনে (ডেপুটেশন) সরিয়ে নেওয়া হয়। একজন বুকিং সহকারী আর একজন পরিচ্ছন্নকর্মীসহ চার কর্মচারী দিয়ে স্টেশনটি সচল রাখা হয়েছে। প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে হাজারো যাত্রী ওঠা নামা করেন। সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রাজশাহী গামী টুঙ্গীপাড়া ও ঢাকা গামী মধুমতি এক্সেপ্রেস ট্রেন দুটির নিয়মিত ক্রসিং রয়েছে এখানে। কিন্তু স্টেশনটি ক্লোজ ডাউন ঘোষনা করায় এখানে ট্রেনের ক্রসিং ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। ফলে পাংশা অথবা কুমারখালীতে ক্রসিং করা হয়। আর এ কারণেই ট্রেন জোড়া প্রতিদিনই ৪০ মিনিট বিলম্বে চলাচল করে। প্রতিদিনই এই স্টেশন দিয়ে ঢাকা গামী মধুমতি এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস, নকশিকাথা এক্সপ্রেস, টুঙ্গীপাড়া-রাজশাহী চলাচল কারা টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়াও দুই জোড়া সাটেলসহ একাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন এই স্টেশনে এসে পরবতী গন্তব্যের লাইন ক্লিয়ার পাওয়ার আশায় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে।

পশ্চিম রেলের একটি সূত্র জানান, খোকসা স্টেশনে যাত্রীদের টিকিট বুকিং ও পন্য পরিবহন থেকে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকার বেশী রাজস্ব আয় হয়। এর মধ্যে বেসরকারী খাতে চলাচলকারী ট্রেন গুলো থেকে বেশী আয় হচ্ছে। স্টেশনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী থাকলে সরকারের আয় আরো বৃদ্ধি পেত।

তখন দুপুর একটা বাজতে কয়েক মিনিট বাঁকী। রাজবাড়ী গামী ফিরতি সাটেল ট্রেন পার হবে। শতাধিক যাত্রী স্টেশনে অপেক্ষা করছেন। বেসরকারী সংস্থার কর্মচারীরা ট্রেনের টিকেট বিক্রিতে ব্যস্ত। ষ্টেশন মাষ্টারের কক্ষের দরজা বন্ধ। তবে টেলিফোন বেজে উঠলেই একজন সেই রুমে যাচ্ছেন আবার বেড় হয়ে আসছেন। তার সাথে কথা বলে জানা গেলো তিনি ক্লিনার পদের কর্মচারী। তার নাম মিরাজুল ইসলাম। পাশের ষ্টেশন থেকে লাইন ক্লিয়ার চেয়ে টেলিফোন বার্তা পাঠালে তার উত্তর দেওয়া, ঘন্টা বাজানো, লাইন ক্লিয়ার দেওয়া সবই করেন তিনি।

একজন মাত্র বুকিং সহকারী তিনি সকাল থেকে ডিউটি করে বাড়ি গেছেন। অন্য একজন পয়েন্টম্যান প্রধান রেল ক্রসিং এর গেট ম্যানেজ করছেন। অপরজন পোটার ব্যস্ত আছেন ষ্টেশনে।

রেল নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব থাকা সংগীত শিল্পী খন্দকার সেলিম রেজা জানান, এই রেল রুটে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, বেনাপোলসহ বিভিন্ন রুটের আন্তনগর ট্রেল চলাল করে। এ ছাড়া দুই জোড়া সাটেল ট্রেনে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা হয়। এখান থেকে সরকারী বেসরকারী ব্যাংক বীমার কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষাথীরা যাতায়াত করে। কিন্তু এই স্টেশনে জনবল সংকটের কারণে প্রতিদিনই অধিকাংশ ট্রেন এখানে এলে লাইন ক্লিয়ার পাবার অপেক্ষায় ঘন্টার পর দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যাত্রীরা ভোগান্তিতে বিরক্ত হয়ে ট্রেনের টিকিট করা বন্ধ করে দিচ্ছেন। একদিকে যাত্রীরা সময় মত অফিস-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে পৌছাতে পারছেন না।

স্টেশনের সাথে ৩০ বছর ধরে পান ও প্রসাধনীর ব্যবসা করেন ইসলাম আলী। তিনি শুনেছেন অবিভক্ত বাংলায় এই স্টেশন থেকে ট্রেনে কলকাতায় যাতায়াত ও পন্য পরিবহন করা হত। পদ্মা-গড়াই নদীর ভাটি অঞ্চলের মানুষ নৌকায় এসে এখান থেকে ট্রেনে যাতায়াত করত। এখন গাড়ী আছে অনেক কিন্তু নানা সংকটে যাত্রীরা ট্রেনে আসা যাওয়া কষ্টের মনে করেন। যাত্রী কমছেই।

পেশনে থাকা স্টেশন মাষ্টার তৈফিক আহম্মেদ বলেন, পাংশ ও কুমারখালীতে সার্কিট ব্রেকিং হওয়ায় প্রতিদিন সকাল হলেই মধুমতি অথবা টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে বিলম্বে ছাড়া হচ্ছে। ফলে দিনের প্রথম ট্রেনটি পৌনে ঘন্টা বিলম্বে যাত্রা করছে। এখন সব থেকে দ্রæত স্টেশনটি ক্লোজিং ডাউন থেকে অবমুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী পোষ্টিং করলে যাত্রী ভোগান্তি ও ট্রেনের বিলম্ব দূর করা সম্ভব।

পশ্চিম রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলার জন্য তার অফিশিয়াল মোবাইল ফোনে কল করা হয় কিন্তু তিনি ফোন ধরেনি।