আমার সাথে যারা বিরোধিতা করবে, আল্লার সাথে………

0
25

স্টাফ রিপোর্টার

“আমার সাথে যারা বিরোধিতা করবে, আল্লার সাথে তারা বিরোধিতা করবে। কারন আমি করি আল্লার মসজিদ ঘর, আর শয়তনরা মসজিদে আসবে, শয়তারাও গোরস্থানে শোবে।” উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ছোট ভাইয়ের নির্বাচনী পথসভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের দেওয়া এমন একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী রহিম উদ্দিন খানের নির্বাচনী সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান এক দীর্ঘ বক্তব্যে এ কথা বলেন। তার এ বক্তব্য উপজেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠেছে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় আমবাড়িয়া ইউনিয়নে গোসাইডাঙ্গী গ্রামে নির্বাচনী পথসভায় তিনি আরো বলেন, “উন্নয়ন করবো, উন্নয়ন করাবে আল্লাহ আমার দিয়ে। “আমার সাথে যারা বিরোধিতা করবে, আল্লার সাথে তারা বিরোধিতা করবে। কারন আমি করি আল্লার ঘর মসজিদ, আর শয়তনরা মসজিদে আসবে, শয়তারাও গোরস্থানে শোবে।” মসজিদে যেয়ে সে সুখ খুজতে পারবে না। হয় কোন ওয়াক্তে যাবে, হয় কোন ওয়াক্তে যাবে না। আর গোরস্থানে গেলে গোরস্থানের মাটি অন্যান্য শয়তান, অন্যান মানুষের চেয়ে ইমানদারেরা যে ভাবে থাকবে। শয়তানদের যে মাটি চাপা হবে এটা আপনার কল্পনাই করতে পরবেন না। আপনারা যে আলেম ওলামা হুজুররা টের পায় গোরস্থানের পাশ দিয়ে গেলে। শব্দ পায় কোন কবরে কোন শয়তারে কি সাজা হচ্ছে। তারা টের পায়। আমরা আপনারা পাই না। এই হচ্ছে শয়তানদের করুন ইতিহাস। আমি শয়তানের অনুসারিদের বলবো তাদের সাথে থাকার দরকার নেই। এহকালের শাস্তি পরোকালের শাস্তি ভোগ করার দরকার নেই।” ………………

শুক্রবার তার এই ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন বক্তব্যর প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী বাবুল আখতারসহ সাধারণ নেতা-কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আগামী ৮ মে প্রথম দফায় খোকসা উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজন আওযামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি নেতারা বিচ্ছিন্ন ভাবে পক্ষ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে মূলত প্রতিদ্ব›িদ্বতার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুল আখতার, সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম উদ্দিন খান ও যুগ্ম সম্পাদক আল মাছুম মোর্শেদ।

রহিম উদ্দিন খান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের ভাই। ডামি চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দাঁেিয়ছেন রহিম উদ্দিন খানের ছেলে শাওন মাহামুদ খান। তিনি প্রার্থী হলেও বাবার পক্ষে মাঠে ভোট করছেন।

উচ্চ আদালতের স্থগিত আদেশে বাদ পরা চেয়ারম্যান প্রার্থী ওহিদুল ইসলামের স্ত্রী সালেহা বেগম নাছিমা নিজের আনারস প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। সালেহা বেগম অবশ্য স্বামীর ডামি হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে ছিলেন। এই প্রার্থীর হয়ে ভোট করছেন তারই দেবর ডামি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সদর উদ্দিন খান তার ভাইকে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার পক্ষে তিনি নির্বাচনী সভা সমাবেশ করছেন। এর আগে তার ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচন করানোর জন্য থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হোসেনকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে সদর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে। সে সময় দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা।
খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী বাবুল আখতার বলেন, আমার নেতা যে বেশ ভূষায় চলেন, তাতে তার এই বক্তব্য খুবই বে-মানান। মহান আল্লাহ পাকের সাথে নিজের তুলনা করা ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হবিবর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বক্তব্য “সুপার এডিট” করে উপস্থাপন করেছে একটি চক্র। জেলা সভাপতি সম্প্রতি এলাকার মসজিদ, কবর স্থান ও মন্দিরের ব্যপক উন্নয়ন করেছেন। আর একটি মহল মসজিদ মন্দিরের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বাঁধা দিচ্ছে তাদেরকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। ডিজিটাল প্রতারণার সাথে জড়িতদের বিরুরেদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খানের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি কলটি কেটে দেন।

খোকসা উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৫৩ জন। যার মধ্যে ৫৭ হাজার ৩২০ জন পুরুষ এবং ৫৬ হাজার ৬৩৩ জন নারী ভোটার রয়েছে।