কঠোর আইনে কি ধর্ষন রক্ষা হবে ? ধর্মে কি বলে ?

0
277
DROHO-25-P-1
লেখক

-এস, এম, আফতাব উদ্দিন

সু প্রাচীন যুগ থেকেই নারী-শিশু নির্যাতন, ব্যাভিচার , ধর্ষনের ধারাবাহিকতা চলে আসছে। আজ অবধি চলমান। আমরা আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগ থেকেই শুরু করি। সে যুগে জীবন্ত কন্যা শিশুকে কবর দেওয়া হতো। কতটা নির্মম, কতটা অসভ্যতা। শুধু আত্মসম্মান বোধের কারণে নিজের ওরসজাত কন্যা সন্তানের ভাগ্যেই শুধু জুটতো এই নির্মম বরবরতা। জাহিলিয়ার সমস্ত কুসংস্কার, অত্যাচার, ব্যাভিচার, নির্যাতন সমুলে উৎপাটিত করার নির্মিত্তে আর্বিভাব হয়েছিলো মানবতার অগ্রদূত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তিনি তাঁর বাষট্টি বৎসর জীবনে অনেক অত্যাচার, নিপীরন, সীমাহীন যন্ত্রনাসহ্য করে যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে ইসলামকে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করেন।

আমাদের অবিভক্ত ভারতের সনাতন ধর্মে প্রচলিত একটি কলঙ্ক জনক প্রথা হলো সতীদাহ। মহাভারত এর একজন অনুবাদকের মত অনুযায়ী মাদ্রী স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পড়েই দুঃখে প্রাণ ত্যাগ করেন এবং দুজনের দেহই একসাথে দাহ করা হয়। অর্থাৎ মাদ্রীকে দাহ করার আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। রাজ পুতানায় “জহর ব্রত” প্রচলিত যাতে কোন শহর দখল হবার পূর্বেই নারীরা আত্মসম্মান রক্ষার্থে আগুনে ঝাঁপ (জহর বা বিষ) দিয়ে স্বেছায় মৃত্যুবরণ করতেন, যা সতীদাহের অনুরূপ। কিন্তু কালক্রমে ৯০০ বছরের এই পুরানো ভয়ঙ্কর প্রথা সতীদাহ যা ইংরেজ আমলেও চালু ছিল। বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে হিন্দু স্ত্রীকে সহমরণএ বাধ্য করা হত। বিশেষ করে কোন ধনী মৃত লোকের সম্পত্তি অধিকার করার লোভে তার আত্মীয়রা তার সদ্য বিধবা স্ত্রীকে ধরে বেঁধে, ঢাক-ঢোলের শব্দ দ্বারা তার কান্নার আওয়াজকে চাপা দিয়ে তার স্বামীর সাথে চিতায় শুইয়ে পুড়িয়ে মারতো। এই তো সেদিন ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজা রাম মোহন এর আরজির প্রেক্ষিতে লর্ড বেন্টিং একটি আইনের মাধ্যমে এ প্রথা রোধ করেন ।

অথচ হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ বেদেরে অথর্ববেদ ১৮.৩.২ মন্ত্রটিতে যা বলা হয়েছে (ঋগবেদ ১০.১৮.৮ এ ও . আছে) তার অর্থ ঃ “হে নারী ! মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি ? বাস্তব জীবনে ফিরে এসো। পুনরায় তোমার পাণি গ্রহণকারী পতির সাথে তোমার আবার পতœীত্ব তৈরী হবে।” বলুন তাহলে কি কারণে পুরোহিত গণ এরকম জঘন্য তম রীতি চালু রেখেছিলো।

বিষ্ণু কর্তৃক প্রদত্ত তালিকায় ব্যাভিচারী ও পশুকামিতার জন্য যে শাস্তির বিধান দিয়েছেন তা হলো- শাল্মলী— ব্যাভিচারী স্ত্রী-পুরুষকে পাঠানো হয় এখানে। জ্বলন্ত থামকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়। না করলে যমদূতরা জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে পেটায়। বজ্রকন্টকশালী— পশুকামিতার শাস্তি বিধান হয় নরকে। তীক্ষ্ণ হীরক-খচিত লৌহমানবকে আলিঙ্গন করতে বলা হয়।

ইয়াহুদি ও খ্রীষ্টান ধর্মের বাইবেলে ও ব্যাভিচারীর শাস্তি মৃত্যুদ-ের কথা বলা হয়েছে ।

বর্তমানে তারা একটি বিষয়ই জোরেশোরে প্রচার করছেন, ‘ঈশ্বর-পুত্র যীশু গোটা মানবজাতির পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য জীবন দিয়েছেন। যে কেউ যীশুতে বিশ্বাস স্থাপন করলে সে যত বড়ো পাপীই হোক সহজেই নিস্তার পেয়ে প্যারাডাইজ-এ পৌছে যাবে। তবে আমরা বাইবেল থেকে জানতে পারি ‘সন্তানের জন্য পিতার, কিংবা পিতার জন্য সন্তানের প্রাণদন্ড করা যাইবে না। প্রতিজন আপন আপন পাপপ্রযুক্তই প্রাণদন্ড ভোগ করিবে’ (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম, দ্বিতীয় বিবরণ, ২৪:১৬)।

আল-কোরআন কি বলে? আল্লাহতাআলা বলেন, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৩২),

এছাড়া ব্যভিচারের শাস্তির বিধান কি হবে- আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ’ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করবে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর : আয়াত ২)

চলমান আইন আর ধর্মীয় আইন কি বিপরীত মুখি? আমি বলব মোটেই না, তবে শাস্তির ধরন, পদ্ধতি ও সময়ের ব্যবধানের ভিন্নতা রয়েছে। ঘুরে ফিরে অধিকাংশ আইনের জন্য ধর্মেরই আশ্রয় নিতে হয়। অর্থাৎ ধর্মই হলো মূল আইনের উৎস। আপনি একটু খোঁজ করলে জানতে পারবেন এসব বিষয়ে কোন সাইকোলোজিষ্ট বা ডক্টর এর মতামত জানতে চাইলে সভাবতই ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কথা বলেন। ধর্ষণ অপরাধ প্রচলিত আইনের ভাষায় একটি ফৌজদারী অপরাধ। ধর্মীয় আইনেও তাই। আশে পাশের কিছু দেশের এ অপরাধের কি শাস্তির বিধান আছে? আশা করি হয়ত এর মাধ্যমে বিষয়টির অনেকটায় পরিষ্কার হয়ে যাবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন দেশে কি শাস্তির বিধান রয়েছে;

ফ্রান্সে ধর্ষণের শাস্তি ১৫ বছরের কারাদ-। তবে ঘটনায় ক্ষতি ও নৃশংসতার বিচারে তা ৩০ বছর পর্যন্ত বা যাবজ্জীবন কারাদ- ও হতে পারে। চীনে ধর্ষণ প্রমাণ হলেই আর কোনও সাজা নয়, বিশেষ অঙ্গ কর্তন এবং সরাসরি মৃত্যুদ-। অন্য কোন শাস্তি নেই। ইরানে ধর্ষককে ফাঁসি, না হয় সোজাসুজি গুলি করা হয়। এভাবেই ধর্ষককে এ দেশে শাস্তি দেওয়া হয়। আফগানিস্তানে ধর্ষণ করে ধরা পড়লে চার দিনের মধ্যে ধর্ষকের মাথায় সোজা গুলি করে মারা হয়। উত্তর কোরিয়ায় অভিযোগ, গ্রেফতার আর তারপর অভিযোগ প্রমাণ হলে গুলি করে হত্যা করা হয়। সৌদি আরবে জুম্মার নামাযের পর ধর্ষককে প্রকাশ্যেই শিরচ্ছেদ করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। মিশরে ধর্ষককে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়। ইসরায়েলে দোষ প্রমাণ হলে ১৬ বছরের কারাদ-। সে দেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা কিছুটা বর্ধিত। অন্য যৌন নির্যাতনও এর অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ও ফেডারেল আইন অনুযায়ী ধর্ষণের বিচার ভিন্ন। ফেডারেল আইন অনুযায়ী দোষীর সাজা কয়েক বছরের কারাদ- থেকে যাবজ্জীবনও হতে পারে। রাশিয়ায় ধর্ষকের তিন থেকে ছয় বছরের কারাদ-। তবে পরিস্থিতির বিচারে তা ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। যদি ধর্ষকের আচরণ অত্যন্ত নৃশংস হয়ে থাকে, তবে ২০ বছর পর্য- কারাদ- হতে পারে। পাঠক একটি বিষয় লক্ষনীয় এখানে উল্লেখিত দেশ গুলোতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খীষ্টান ও ইয়াহুদী সহ নাম না জানা অনেক জাতি গোষ্টির লোক বসবাস করে থাকে। ধর্ষণের মত ফৌজদার অপরাধের শাস্তি অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু বা দির্ঘ মেয়াদি কারাদ-।

পরিশেষে বলতে হয় এখনো আমাদের দেশে যে আইন বিদ্যমান নতুন কোন আইনের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়নি। বিদ্যমান আইনেই সাজা দেয়া সম্ভব। তাহলে সমস্যা কোথায় ? এটাই আসল কথা। উত্তর যে আমাদের অজানা তা কিন্তু নয় । মুর্দা কথা হলো আইনের প্রয়োগ ও শাস্তি নিশ্চিত না করা। এ অবক্ষয় থেকে রেহায় পেতে আমাদের করণীয় সর্বস্তরে নৈতিক শিক্ষ গ্রহন , ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। সর্বপরি দেশের সরকারের দায়িত্ব বিচার কার্য সুসিশ্চিত করে শাস্তির বিধান করা। তবেই হয়ত এ অপকর্ম থেকে রেহায় মিলবে ।