কুষ্টিয়ার চালের বাজার অস্থির

0
140

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় চালের বাজারে অস্থিরতা থামছে না। হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। এ মোকামে সপ্তাহে অন্তত একবার বাড়ছে চালের দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরণের চালের দাম কেজি প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কুষ্টিয়ার চালের বাজারে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। গত সপ্তাহে তাঁরা মিলগেট থেকে যে দরে চাল কিনেছেন পরের সপ্তাহে আর সেই দামে চাল কিনতে পারছেন না। সর্বনি¤œ কেজিতে পঞ্চাশ পয়সা বেশি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। গত এক মাস ধরেই কুষ্টিয়ার বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির এই খেলা চলছে। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পেলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। আর এই সুযোগে কুষ্টিয়ার মিলাররা সিন্ডিকেট করে তাদের খেয়াল-খুশি মত চালের দাম বাড়িয়ে দিয়ে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

শনিবার সকালে সরেজমিনে কুষ্টিয়ার পৌর বাজার এবং বড় বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুসপ্তাহে কুষ্টিয়ার বাজারে সব ধরণের চালের দাম কেজি প্রতি এক থেকে দুই টাকা বেড়েছে। আর গত এক মাসে বাজারে সব ধরণের চালের দাম কেজি প্রতি চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই বাজারে সব ধরণের চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুন মাসের শুরুতে যে মিনিকেট (সরু চিকন চাল) ৫৬ টাকা কেজি ছিল সেই চাল এখন সাধারণ মানের ৫৮ টাকা এবং ভালো মানের মিনিকেট চাল ৫৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাজললতা চাল আগে যেখানে ৫০ টাকা কেজি ছিল এখন তা বেড়ে গিয়ে প্রতি কেজি ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আঠাশ চাল ৪৬ টাকা কেজির পরিবর্তে ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাসমতি চাল ৬৪ টাকা থেকে কেজি প্রতি চার টাকা বেড়ে গিয়ে ৬৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর নাজির শাইল চাল আগে যেখানে ৫৪ টাকা ছিল এখন সেখানে ৫৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী মসলেম উদ্দিন জানান, কুষ্টিয়ার চালের বাজার একেবারেই নিয়ন্ত্রণহীন। প্রতি সপ্তাহে চালের দাম বাড়ছে। তিনি জানান, গত এক মাস ধরেই বাজারের এই অবস্থা চলে আসছে। তিনি বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম হচ্ছে কুষ্টিয়ার খাজানগর। খাজানগরের এই চালের মোকাম থেকেই দেশের সিংহভাগ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। এখানকার মোকামে চালের দাম বাড়লে সারা দেশের বাজারের চালের দাম বাড়বে। কুষ্টিয়ার খাজানগর মিলগেটে পাইকারী পর্যায়ে মিনিকেট চাল পাইকারি ৫৫ টাকা ৫০ পয়সা, কাজললতা ৫১ টাকা, আঠাশ চাল ৪৭ টাকা এবং বাসমতি চাল ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী টিপু সুলতান জানান, পৌর বাজার এবং বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের কুষ্টিয়ার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কোন ক্ষমতা নেই। বাজারে চালের দাম বাড়া-কমা সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন খাজানগর মোকামের চাল ব্যবসায়ীরা। এদিকে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে নাভিশ^াস দেখা দিয়েছে। পৌর বাজারে চাল কিনতে আসা হাসিবুর রশিদ অভিযোগ করেন কুষ্টিয়া জেলায় সরকারের খাদ্য অধিদপ্তরের কোন মনিটরিং নেই। করোনার দোহায় দিয়েও অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ধানের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ যেন অনেকটায় মগের মুল্লুক। দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় করোনা মহামারীর এ সময়ে বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষজনকে চরম ভোগান্তি পৌঁহাতে হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান জানান, টানা লকডাউনের কারণে প্রায় দুসপ্তাহ ধরে খাজানগর চালের মোকামে বেচা-কেনা একেবারেই কম। আগে যেখানে খাজানগর মোকাম থেকে প্রতিটি ট্রাকে ১৫ টন চাল নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২শ থেকে আড়াই শ ট্রাক চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যেত এখন সেখানে মাত্র ৫০ ট্রাক চালও যাচ্ছে না। ধানের বাজার চড়া থাকার কারণে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে চালকল মালিক সমিতির এই নেতা জানান, ঈদের পর সরকার যদি সরু চাল আমদানী করে কেবলমাত্র তাহলেই চালের বাজারের এই অস্থিরতা কাটতে পারে।
কুষ্টিয়ার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তাহসানুল হক চালের বাজারের এই অস্থিরতা কথা স্বীকার করে জানান, ধানের বাজার এখনও চড়া রয়েছে। যে কারণে দাম বাড়ছে। ঈদের পর সরকার যদি চাল আমদানী করে তাহলে বাজারের এই অস্থিরতা অনেকটায় কেটে যাবে।