কুষ্টিয়ার সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়ে গেছে

0
672

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া শহরে ৪টি, খোকসার ৩টিসহ জেলায় ১২টি সিনেমা হল গড়ে উঠেছিল। দুর্বল কাহিনী, গুণগত মান নিম্নমুখী, আকাশ শিল্প’র দাপটের কারণে এখন একটি মাত্র সিনেমা হল টিকে থাকলেও করোনা মহামারীর কারণে সেটিও এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে।

জেলার বাদ বাকি ১১টি হল এখন হাড়ি-পাতিলের গোডাউন আর কমিনিটি সেন্টারে রূপ নিয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা। ৬০’র দশকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সর্বপ্রথম গড়ে উঠেছিল রকসি সিনেমা হল। সেটিও ২০০৩ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে হলটি হাড়ি পাতিলের গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সাংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়া শহরের একেবারে প্রাণ কেন্দ্র এনএস রোডে পরিমল থিয়েটার কর্তৃপ নির্মাণ করেছিলেন কেয়া সিনেমা হল। সেটি ভেঙে সেখানে গড়ে উঠেছে বহুতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন পরিমল টাওয়ার। পৌরসভার বাণী সিনেমা হলটি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। এখন সেটি পৌরসভার কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন আজাদ নামের একজন ব্যবসায়ী হলটি পরিচালনা করতেন। জানালেন ছবির মান ক্রমাগত নি¤œমুখী হওয়ায় এবং আকাশ সংস্কৃতির দাপটের কারণে দর্শকরা হল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় অব্যাহত লোকসানের কারণে তিনি হল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। সিনেমা হলের সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে বুকিং এজেন্টে তদারকির বিষয়ে সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন।

কুষ্টিয়া শহরের রকসী সিনেমা হলের মালিক জামাল হোসেন বলেন, আগে হলে যে ছবি আসতো সে সময় প্রায় প্রতিটি ছবিই হাউজ ফুল হতো। কিন্তু এখন দর্শকরা আর হলে আসতে চাননা। তাই বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা। তারা সবাই ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন।

কুষ্টিয়া শহরের ব্যস্ততম বনানী সিনেমা হল মালিক বকুল হোসেন বলেন, ভালো কাহিনী নির্ভর ছবি নির্মাণ, সিনেমা হলের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারী ঋণ সহায়তা প্রদান করা হলে বন্ধ সিনেমা হলগুলো আবার চালু করা সম্ভব।

খোকসার ৩টি সিনেমা হল কার্যত ১০ বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে একটি সিনেমা হলের অবকাঠামো ভেঙ্গে গোডাউন তৈরী করা হয়েছে। অপরটি ভাঙ্গার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

আশির দশকে উপজেলা সদরের পাটের গোডাউন ভেঙ্গে তৈরী হয় প্রথম সিনেমা হল। দেখতে দেখতে এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি পেক্ষাগৃহের জন্ম হয়। প্রায় দুই যুগ ধরে চুটিয়ে ব্যাবসা করেন হল মালিকেরা। খোকসা বাজারের মধ্যে জনবহুল এলাকার অপর্ণা সিনেমা হলটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এটিও ভাঙ্গার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে হল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে। আশির দশকে নির্মিত মনামী সিনেমা হলটিও কার্যত বন্ধ রয়েছে। আগে ঈদ-পূজার উৎসবে দর্শক হলেও এখর আর কেউ হলে সিনেমা দেখতে আসেনা। এই হলটিও ভাঙ্গার জল্পনা কল্পনা চলছে।

প্রবীন সিনেমা ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন খোকন। তিনি দুটি সিনেমা হলের মালিক। সিনেমা ব্যবসা বন্ধের পেছনে তিনি দায়ী করেন একদিকে প্রযুক্তি অপব্যবহার, অন্যদিকে দিশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র পরিকল্পিত ভাবে শিল্পটাকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। সিনেমার সাথে অশ্লীল কাঠপিস সংযোজনের ফলে তারা নিজেরাও অপমাণিত হয়েছেন। অন্যদিকে মানুষকে সিনেমা হল বিমুখ করে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন,বর্তমান সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে সিনেমা ব্যবসার সুদিন ফেরাতে চায়। কিন্তু প্রণোদনার ঋণের সুধ ৪ শতাংশ বলা হলে প্রকৃত পক্ষে ৯ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। ফলে ব্যবসায়ীরা ঘুড়ে দাঁড়াতে আর পারবে না। তিনি একটি হল ইেিতামধ্যে ভেঙ্গে দিয়েছেন। আর একটি ভেঙ্গে কয়েকটি ব্যাংক বসানোর চেষ্টা করছেন বলে জানান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কুমারখালী উপজেলা শহরের হল বাজার এলাকায় জলি সিনেমা হল গড়ে ওঠে। সেটিও প্রায় বছর দশেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। হলটির চারপাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে মার্কেট। আর হলটি গুদাম ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ভেড়ামারা উপজেলায় তিনটি সিনেমা হল ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন শহরের কোচ ষ্ট্যান্ডের পাশে সজনী সিনেমা হলটিও ৩-৪ বছর ধরে বন্ধ। পাশেই ছিল লাবনী সিনেমা হল। সেটিও বছর ৫-৬ আগে বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ বছর দুয়েক আগে বন্ধ হয়ে গেছে শহরের চৈতন মধ্য বাজার এলাকায় অবস্থিত রুপাঞ্জলী সিনেমা হলটি। এর মধ্যে সজনী আর লাবনী সিনেমে হলটি গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর রুপাঞ্জলী হলটি ভেঙে হোটেলসহ মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে।

আশির দশকে গড়ে ওঠা মিরপুর উপজেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত নন্দিতা সিনেমা হলটি ২০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেখানে ঘর-বাড়ি গড়ে উঠেছে।

দৌলতপুর উপজেলায় তিনটি সিনেমা হলের সবগুলোই এখন বন্ধ। আল্লারদর্গা এলাকায় অবস্থিত উপজেলার প্রথম সিনেমা হল আশা সিনেমা হলটিও গত এক দশক ধরে বন্ধ। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ তারাগুনিয়া এলাকার অলংকার সিনেমা হল। ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। জমিও বিক্রি হয়ে গেছে। আর উপজেলার হোসেনাবাদ এলাকার রজিনা সিনেমা হলটিও এক দশকের বেশি সময় ধরে বন্ধ।