কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকসহ গ্রেফতার ৪

0
200
atok-kushtiaDroho-6-p8

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে রাতের আঁধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙ্গায় জড়িত মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এই ঘটনার মদদ দেওয়ার অভিযোগে মাদ্রাসার দুই শিক্ষকও গ্রেফতার হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে, শহরের জুগিয়া পশ্চিমপাড়া ইবনে মাস্উদ (রা:) মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার শিংপুর মৃধাপাড়া এলাকার সমসের মৃধার ছেলে আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) ও এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়ীয়া এলাকার সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদ (২০)।

এ ঘটনায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে ওই মাদ্রাসার দুই শিক্ষক কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আল আমিন (২৭) ও অপর শিক্ষক পাবনা জেলার আমিনপুর থানার দিয়াড় বামুন্দি গ্রামের আজিজুল মন্ডলের ছেলে ইউসুফ আলী (২৬)।

রবিবার বিকালে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের কাছে চার জনের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় অতিরিক্ত ডিআইজি এ.কে.এম নাহিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাতসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, স্পর্শকাতর এই ঘটনা ঘটার পর সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে পুলিশের সব ইউনিটকে কাজে লাগিয়ে ২৩ ঘন্টার মধ্যে পুলিশ হামলা অংশ নেয়া ২ জন এবং তাদের মদদ দেওয়া ২ শিক্ষককে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, দেশের বিরুদ্ধে এবং দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর যে বা যারা আঘাত হানবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এ ঘটনার পেছনে কারা আছে, কারা ইন্ধন দিয়েছে, নেপথ্যে কেউ জড়িত রয়েছে কিনা পুলিশ সে সব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২ জন ব্যক্তি সনাক্ত ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে পুলিশ সুপার কুষ্টিয়ার নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারগণসহ ডিবি, ডিএসবি ও কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ সন্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযান পরিচালনাকালে কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন জুগিয়া পশ্চিমপাড়া মাদ্রাসা ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর জামাত বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহ (১৫) এবং আব্দুর রহমান (১৭) উভয়ের পিতা মোস্তফা কামাল , সাং – মশান ( বাজাজের পার্শ্বে ) থানা – মিরপুর , জেলা – কুষ্টিয়া কে আটক পূর্বক জিজ্ঞাসাবাদ ও ভিডিও ফুটেজ দেখালে তারা তথ্য দেয় যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটি কারা ভাংচুর করেছে। তারা একই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করে।

পরবর্তীতে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও পুলিশ সুপার কুষ্টিয়ার নিদের্শনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি কুষ্টিয়ার নেতৃত্বে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে আবু বক্কর ওরফে মিঠুন (১৯) এবং একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গোলাবাড়ীয়া এলাকার সামছুল আলমের ছেলে সবুজ ইসলাম ওরফে নাহিদকে (২০) তাদের নিজ নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সাথে জড়িত’ থাকার কথা স্বীকার করে। মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক ও ফয়জুল করিমের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায়।

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ০৫/১২/২০২০ ইং তারিখ রাত ২ টা ৫ মিনিটের সময় যখন মাদ্রাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন তারা দুজনে গোপনে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে শাহীন কাউন্সিলরের বাসার সামনে দিয়ে কানাবিল মোড় পার হয়। এরপর কমলাপুর হয়ে মজমপুর রেললাইন ধরে ফজলুল উলুম মাদ্রাসার পাশ দিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে ভাস্কর্যের নিকট আসে। তারপর ভাস্কর্য নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বাঁশের মই দিয়ে উপরে উঠে নাহিদুল ইসলামের ব্যাগ থেকে হাতুড়ি বের করে আবু বকর মিঠুন ও সবুজ ইসলাম দু’জনে মিলে রাত ২ টা ৫ মিনিট থেকে রাত ২ টা ১৩ মিনিট পর্যন্তু নির্মাণাধীন ভাস্কর্যটির বিভিন্ন জায়গায় হাতুড়ি দিয়ে স্বজরে আঘাত করে ভাস্কর্যটির ক্ষতি সাধন করে পুনরায় পায়ে হেঁটে মাদ্রাসায় গিয়ে সঙ্গোপনে ঘুমিয়ে পরে। পরবর্তীতে সকাল তারা মাদ্রাসার শিক্ষক আল আমিন ও ইউসুফ আলীকে ভাস্কর্য ভাংচুরের বিষয়টি জানালে উক্ত দুই শিক্ষক তাদেরকে মাদ্রাসা থেকে দ্রুত পালিয়ে যেতে বলে।

আসামীদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে উক্ত শিক্ষকদ্বয়কে মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় পেনাল কোড ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) তৎসহ ৪২৭/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং -০৮। মামলাটি বর্তমানে তদন্তনাধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য়ের মুখ ও হাতের অংশে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে দেশব্যাপী ইসলামপন্থি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মধ্যেই কুষ্টিয়ায় এ ঘটনা ঘটলো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলার এ ঘটনায় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।