খোকসার কালীপূজা শনিবার রাতে

0
101

স্টাফ রিপোর্টার

শনিবার মধ্যরাতে খোকসার কালীর বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ পূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশ থেকে সনাতন ধর্মালম্বী ভক্ত ও পূনার্থীরা আসতে শুরু করেছেন। উপমহাদেশের প্রাচীনতম এ কালীপূজা প্রায় ৬শ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা রক্ষায় ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

রাজা-জমিদারী আমলের আদলে শরিবার (২১ জানুয়ারি) মধ্যরাতে মাঘি অমাবস্যার তিথিতে খোকসার কালীর বার্ষিক পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পূজা অর্চনা ও মানষার সামগ্রী উৎসর্গ সাথে অঞ্জলি চলবে সারা রাত ধরে। পর দিন রবিবার গধূলী লগ্নে গড়াই নদীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যদিয়ে বার্ষীক পূজার প্রথম পর্বের শেষ হবে। পূজার আনুষ্ঠানিকতা চলবে মাঘি সপ্তমীর পূজা পর্যন্ত। এ উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীন মেলা চলবে পক্ষকাল ব্যাপী।

উপজেলা সদরের পৌর এলাকার গড়াই নদীর তীরে কালী মন্দিরে খোকসার কালীর বার্ষিক পূজা উপলক্ষে ১১ হাত লম্বা প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রায় এক মাস আগে স্থানীয় শিল্পীরা কালী প্রতিমাটি তৈরী শুরু করেন। কদম গাছের কাঠের কাঠামের উপর খড় ও মাটির তৈরীর বিশালদেহী কালী প্রতিমাটির রং ও অলংকরণের কাজ চলছে। এ বছর পূজা দিতে আসা ভক্ত ও পূনার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পাশা-পাশি সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে থাকবে বলে জানান স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

কালীবাড়ির বিশাল মাঠ জুড়ে শাঁখা সিদুর ও পূজার সামগ্রীরসহ ঘর গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত বাঁশ বেত লোহা এবং কাঠের তৈরীর আসবাব পত্রের ৫ শতাধিক দোকানীরা স্টল সাজিয়ে বসেছেন। এ গ্রামীন মেলা পক্ষকাল ব্যাপী চলবে বলে আশা করছে পূজা কমিটির।

কালীর বার্ষিক পূজায় মানষা দিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছেন বিমল শর্মা। উপমহাদেশের প্রাচীনতম এ কালী পূজা সম্পর্কে মা-বাবার মুখে শুনেছেন। তাই মধ্যবয়সে মানসা নিয়ে এসেছেন। এদেশের মানুষের আথিতিয়তায় তিনি মুগ্ধ হয়েছেন।


খোকসা কালীপূজা মন্দির কমিটির সাধারন সম্পাদক সাবেক অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রায় ৬শ বছর ধরে বিশাল দেহী প্রতিমা তৈরী করে মাঘি অমাবস্যার তিথিতে কালীর বার্ষিক পূজা হয়ে আসছে। এ কালীর পূজা উপমহাদেশের মধ্যে শুধু খোকসাতে হয়। পূজা ও গ্রামীন মেলায় জাতীধর্ম নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ জমায়েত হয়। কখনো কোন বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। পূজার সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এ বছরও শান্তি পূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রশত্যাশার কথাই জানান তিনি।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, পুলিশ ইতোমধ্যে নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ শুরু করেছে। পূজা শুরুর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হবে। উৎসব ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোন আশঙ্কা দেখছেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস জানান, ঐতিহ্যবাহী কালীপূজা উৎসব মুখর করতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আয়োজক ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থার কর্মীরা মাঠে থাকবে বলেও জানান।

উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ৬শ বছর আগে গড়াই নদীর তীরে এক তান্ত্রিক সাধু এ পূজা প্রচলন করেন। নলডাঙ্গার রাজা ও শিলাইদহের জমিদারদের আমলে এ কালীপূজা ও গ্রামীন মেলা প্রসার ঘটে। এই দুই পরিবারের সন্মানে এখানে জোড়া পাঠা বলীর প্রচলন করা হয়।