খোকসার মিরা রায় ও তার বৃদ্ধা মা নিজের ঘরে মরতে চান

0
101

স্টাফ রিপোর্টার

নিজের ঘরে মরতে পারলে আত্মা শান্তি পেত। তাই সরকারের কাছে শুধু মাত্র একটি ঘরের দাবি বৃদ্ধ মা-বেটির। যেখানে নিজের ধর্মমতে অন্তিম সময় কাটাতে পারবেন।

সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধা মিরা রায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। একবার সরকারী ঘরের তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছিলেন কিন্তু বিধিবাম, মৃত স্বামী বা তার নিজের নামে জমি না থাকায় নাম কাটা পরেছে। সেই থেকে সরকারী ঘর পাবার জন্য হন্নে হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শোমসপুর গ্রামে এক খুপড়ি ঘরে বাস করেন বৃদ্ধা মিরা রায় (৬৫) ও তার মা সুধারানী চক্রবর্তী (৮৫)। নিজে আনসার ভিডিপির সদস্য ছিলেন। ১০ বছর চাকুরীও করেছেন। স্বামী সুবল রায়ের মৃত্যুর পর তাদের মানবেতর জীবন শুরু হয়। রাজনৈতিক প্রতিহংসার শিকার হয়ে নিজের ভিটেবাড়ি থেকে বিতারিত পরিবারটির উপার্জনের কেউ নেই। মিরা নিজে ভালো চোখে দেখেন না। প্যারালাইসড হয়ে যাওয়া মা আশিতিপর বৃদ্ধা সুধারনী চক্রবর্তীর পেটের ভাত আর ওষুধ বার্তী চাপ হয়ে দাড়িয়েছে মেয়ে মিরার কাছে। অন্যদিকে প্রতিমাসে ঘর ভাড়া গুনতে হয় এক হাজার টাকা। পান থেকে চুন খসলেই ঘর মালিকের গালমন্দ তার নিত্য দিনের সাথি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুজিব বর্ষে গৃহহীন ও ভুমিহীনদের মধ্যে প্রধান মন্ত্রীর উপহারের ঘর বিতরনের ঘোষনার পর থেকে ঘরের আশায় বুক বেঁধেছেন বৃদ্ধা মিরা রায় ও তার মা। জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের প্রচষ্টায় প্রথম দিকের তালিকায় তার নাম এসেছিল। কিন্তু নিজের নামে জমি না থাকায় তিনি বাদ পরেন। পুত্র সন্তানহীন মিরা ঘরভাড়া আর পেটের দায়ে ভিক্ষায় নেমেছেন। তবে মা -বেটি দু’জনেই সরকারের উপহারের ঘরে মরতে চান।

বৃহস্পতিবার সকালে মিরা রায় ও তার মায়ের সাথে কথা বলার জন্য তার বাড়িয়ে যাওয়া হয়। তখন মিরা ভিক্ষায় বেড়িয়ে পরেছেন। খুপড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন বয়সের ভারে নুয়ে পরা আশিতিপর বৃদ্ধ সুধা রানী চক্রবর্তী। তিনি জানান, তাদের নিজের ঘর ছিল। যজমান ছিল (শিষ্য)। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তাদের সবহারা করেছে। তারা এই সরকারের কাছে একটি ঘর দাবি করেন। যেখানে আপাতত শান্তিতে মরতে পারবেন।

উপজেলা সদরের বাজারে বৃদ্ধ মিরা রায়য়ের সাথে দেখা করা হয়। তিনি বলেন, রাজবাড়ি জেলার পাংশার নারায়নপুরে তাদের সব ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তাদের সর্বশান্ত করেছে। প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর সময় নিজের ঠিকানা থাকা উচিত। কিন্তু তার কোন ঠিকানা নেই। নিজের ঘর না থাকায় প্রায় দুই যুগেরও বেশী সময় পূজা অর্চনা করতে পারেন না। ঘরে সন্ধ্যা বাতি দিতে পারেন না। সরকারের কাছে তাদের শুধু মাত্র একটি ঘরের দাবি। যেখানে তিনি নিজের ধর্মমতে মরতে পারেন।

তিনি আরো জানান, স্বামী ও নিজে আওয়ামী লীগ করতেন। সেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে ১৯৯৭ সালের দিকে প্রতিপক্ষের রোসানলে পরে নিজের ভিটা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে শোমসপুরে আশ্রয় নেন। সেই থেকে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। টাকা পয়সা না থাকায় প্রায় ২২ বছর খুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকছেন। উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়াম্যানকে সাথে নিয়ে ৪ বার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন তিনি। একবার তালিকায় নাম ছিল কিন্তু জমি না থাকায় তালিকা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমান কর্মকর্তারা আগামীতে ঘর দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

শোমসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বদর উদ্দিন খান বলেন, উপজেলা সর্ব প্রথম ঘরের দাবিদার মিরা। তিনি নিজে উপজেলা বৃদ্ধাকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছেন কিন্ত কি কারণে বৃদ্ধা ঘর পাচ্ছেন না, তার তার বোধগম্য নয়।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইসরাত জাহান পুনম বলেন, বৃদ্ধাকে জমিসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কর্মকর্তারা কথা দিয়েছে, আগামী কিস্তিতে তার নামে ঘর বরাদ্দ হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার বিশ্বাস বলেন, অনেকেই ঘরের সমস্যা নিয়ে আসেন। বৃদ্ধা মিরা রায় তার সাথে দেখা করলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।