খোকসার শিক্ষকসহ ১৫জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার সুপারিশ

0
375
প্রতিকী ছবি

স্টাফ রিপোর্টার

কুষ্টিয়ার খোকসার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র ও রুটিন মেরামত কাজের অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত থাকার প্রমান মেলায় ৬ প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং সরকারী কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে প্রকল্পের অর্থ ছাড়দাতা ও মধ্যস্বত্বা ভোগীরা পার পেয়ে যেতে বসেছে।

এ মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে, উপজেলার মাছুয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকর্ণ কুমার বিশ্বাস, খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাবুল আখতার, বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুরা পারভীন, সভাপতি মায়েন উদ্দিন বিশ্বাস, মামুদানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার বিশ্বাস, সভাপতি মাহিমা রঞ্জন মৈত্র, ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর হক, সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং স্থানীয় সরকারী প্রকৌশলী অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ ও সহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন। এ ছাড়া রাজিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বামনপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নাম মামলার সুপারিশে রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯, ১০১৯-২০, ২০২০-২১ অর্থবছরে শিা অধিদপ্তর থেকে উপজেলা ৮৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষদ্র মেরামত ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ আসে। বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কাজ না করেই বেশির ভাগ স্কুলের প্রধান শিক, পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, শিক্ষক সমিতির নেতা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা ভুয়া বিল ভাউচারে অর্থ তুলে আত্মসাৎ করে।

অভিযোগের পরিপ্রেেিত দুদক সমন্বিত কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাকারিয়া সরোজমিন তদন্ত করে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে কোন কাজ হয়নি দেখতে পান।

দুদক কর্মকর্তারা তদন্তকালে এসব স্কুলে মাটি ভরাটসহ অন্য যেসব সংস্কার কাজ হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি বলে জানতে পারেন। তদন্ত শেষে মামলার আরজি জানিয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয় কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে মামলা করার পাশাপাশি তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তদারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবু হানিফ দুদক কর্মকর্তাকে ম্যানেজের কথা বলে প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন। তবে দুদক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে না পারলেও আবু হানিফ সে অর্থ আর ফেরত দেননি।

উপজেলা প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীর প্ল্যান অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করার নিয়ম রয়েছে। কাজ শেষে পরিদর্শন করে প্রকৌশলী প্রত্যয়নপত্র দেবেন এমন বিধান আছে। তবে খোকসার ক্ষেত্রে উল্টো হয়েছে। কাজ হয়েছে কি-না পরিদর্শন না করেই বাস্তবায়ন হয়েছে মর্মে প্রত্যায়ন দেওয়া হয়েছে। আর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরে এ অর্থ উত্তোলন হয় বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুস সামাদ বলেন কীভাবে কাজ বাস্তবায়ন হবে তার একটি প্লানিং করে দেওয়া আমাদের কাজ। এর বাইরে আমাদের কিছু জানার নেই। কাজ করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের।

খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একটি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বাবুল আকতার বলেন, শিক নেতা আবু হানিফ সব অপকর্মের হোতা। আমাদের এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। তারা সব করেছেন।

এ বিষয়ে শিক নেতা আবু হানিফ বলেন, দুদক প্রতিটি স্কুলে গিয়ে তদন্ত করেছে। কে কতটুকু কাজ করেছে তা যাচাই করেছে। এরপর হয়তো মামলা হয়েছে। তাদের ম্যানেজ করার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগটি সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা নাজনীন আলম বলেন, মামলাটির বিষয়ে আমার জানা নেই। চিঠি পেলে প্রতিষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।