গণমাধ্যমের উপর আক্রমণ বন্ধের আহ্বান অ্যামনেস্টির

0
145
DROHO-AM-09-P1
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের উপর সরকারের ‘নিপীড়ন’ বেড়েছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পর্যবেক্ষণ।

মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকারের সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ ও দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিতর্কিত এই আইন করার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে অবিলম্বে আইনটি সংশোধন করে সংবিধান ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে ভিন্ন মত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বাড়ার তথ্য তুলে ধরে অ্যামনেস্টি বলেছে, বাংলাদেশ সরকারের সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর এই আইন করার পর থেকে এর আওতায় প্রায় দুই হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে।
“এর মধ্যে ৮০০ এর বেশি মামলা দায়ের হয়েছে ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে। দেশের সবচেয়ে খ্যাতনামা সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনাও বাড়ছে।”

স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণের জন্য এই আইনের ‘অস্পষ্টতাকে’ কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া।

এ বছর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ প্ল্যাটফর্মের অন্তত ১০ জন সম্পাদককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে প্রথমেই আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলের প্রসঙ্গ টেনেছে অ্যামনেস্টি।

এক ফেইসবুক পোস্টের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান শিখর শেরে বাংলানগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার পর ১০ মার্চ নিখোঁজ হন পক্ষকালের সম্পাদক কাজল। ওই মামলায় দৈনিক মানব জমিনের সম্পাদক মতিউর রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়।

প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ কাজলকে হঠাৎ করে ভারতের সীমান্তবর্তী বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখনও কারাবন্দি কাজলের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে।

এরপর করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে লকডাউনে দরিদ্রদের দেওয়া ত্রাণ আত্মসাৎ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ১৯ এপ্রিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতা।

নরসিংদীর ঘোড়াশাল থানায় আটকাবস্থায় একজনের মৃত্যু নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ১ মে দৈনিক গ্রামীণ দর্পণের বার্তা সম্পাদক রমজান আলী প্রামানিক, স্টাফ রিপোর্টার শান্তা বনিক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল নরসিংদী প্রতিদিনের সম্পাদক ও প্রকাশক খন্দকার শাহীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মাসের শেষ দিকে ২২ মে ‘আমার হবিগঞ্জ’র সম্পাদক সুশান্ত দাশ গুপ্তকে গ্রেপ্তার করা হয় এক আওয়ামী লীগ এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় গত ২২ জুন দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হওয়ার কথা তুলে ধরেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

দ্রুত এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অ্যামনেস্টির গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেছেন, “কর্তৃপক্ষের সমালোচনা এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি নিশ্চিতে সংবাদ প্রকাশের জন্যই এসব সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। “অবিলম্বে তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার এবং আটকদের মুক্তি দিতে হবে।”