জিকে সড়কের গাছ কাটায় প্রতিবাদে ফুসে উঠেছে এলাকার মানুষ

0
19

কুমারখালী প্রতিনিধি

তিন মাস আগেও সড়কের দুই পাশের গাছ গুলোর নিচে পথিক বিশ্রাম নিত। স্বস্তিতে চলাচল করত। দফায় দফায় গাছ কাটায় গঙ্গা কপোতাক্ষা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের সড়ক মরুভূমিতে রূপ ধারণ করেছে।

জানা গেছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়া থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত পাউবোর (পানি উন্নয়ন বোর্ড) জিকে খাল ঘেঁষে প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এই সড়কে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় সমিতির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর আগে কয়েক হাজার ফলজ ও বনজ গাছের চারা রোপন করে উপজেলা বনবিভাগ। জিকে সড়কের দুই পাশে ছায়া ও শোভা বর্ধক পরিবেশ বান্ধ গাছ গুলো কাটার উদ্যোগ নেয় বনবিভাগ। ২০২৩ সালে যদুবয়রা থেকে সান্দিয়ারা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের আনুমানিক প্রায় ১০ হাজার গাছ দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। চলতি বছরেও ওই সড়কের লাহিনীপাড়া থেকে বাঁধবাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার ৩ হাজার গাছ বিক্রি ও কাটা হয়েছে। ফরে সড়কটি মরুভূমিতে পরিত হয়েছে।

আবার নতুন করে বাঁধবাজার থেকে মাদুলিয়া পর্যন্ত আরো তিন কিলোমিটার সড়কের পাশের কয়েক হাজার গাছ কাটার জন্য গাছের গাঁয়ে নাম্বারিং করে দরপত্র সম্পন্ন করেছেন বনবিভাগ।

এবার গাছ বিক্রির প্রতিবাদে ফুসে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তারা দাবি করছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য গাছ গুলো না কেটে সুরক্ষা দিতে হবে।

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, আর্থ – সামাজিক ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০০৪ সাল থেকে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। তারা প্রথমে স্থানীয়দের নিয়ে এলাকা ভিত্তিক সমিতি গঠন করে। পরে বিভিন্ন সড়কের ধারে জ্বালানি কাঠের গাছের চারা রোপন করেন। গাছ দেখাশোনা করে সমিতির সদস্যরা। গাছের বয়স যখন ১০ বছর পূর্ণ হলে। গাছ কাটা ও বিক্রির জন্য দরপত্র আহবান করে বনবিভাগ। গাছ বিক্রির ৫৫ ভাগ টাকা পান সমিতির সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে দেওয়া হয় ৫ ভাগ। আর বনবিভাগ ও সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভাগ পাই ২০ ভাগ করে টাকা।

রাজিব নামের এক ছাত্র বলেন, যেহেতু গাছগুলো আমাদের ছায়া দিচ্ছে। সড়কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করছে। পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করছে। সেহেতু গাছগুলো কর্তন না করা ভাল। তাঁর ভাষ্য, গাছপালা কমে যাওয়ার কারণেই বৃষ্টিপাত হচ্ছেনা, তীব্র তাপদাহ চলছে। এ জন্য গাছ না কাটার জোর দাবি করেন তিনি।

ওই সড়কে নিয়মিত চলাচল করেন ভ্যানচালক আব্দুল হাকিম। তিনি জানান, নিয়মিত ওই সড়ক দিয়ে মালামাল ও যাত্রী নিয়ে চলাচল করি। প্রায়ই সড়কে পাশের গাছের ছায়ায় বসে ক্লান্তি দূর করতে বিশ্রাম নিই। গাছ গুলো কেটে ফেলা হলে আর বসতে পারবো না।
এ বিষয়ে পরিবেশ বিষয়ক গবেষক গৌতম কুমার রায় জানান, ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি বা গাছপালা থাকা দরকার। কিন্তু সেই তুলনায় গাছ আছে মাত্র ৯ ভাগের কম। তবুও প্রতিদিনই গাছ উজার হচ্ছে, সৃজন হচ্ছেনা। যে মুহূর্তে তাপদাহ চলছে। পানির মহা সংকট চলছে। মানুষ গরমে নাভিঃশ্বাস করছে। পাখিকুল আশ্রয় পাচ্ছেনা। সেই মুহুর্তে গাছ গুলো কাটার ঘটনা সত্যি অদ্ভুত ও দুঃখজনক বটেই।

উপজেলা বনবিভাগ কার্যালয়ের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, ১০ বছর পূর্ণ হলেই সমিতির নিয়ম অনুসারে গাছ কেটে পুনরায় নতুন চারা রোপন করা হয়। ইতিমধ্যে ওই সড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। অন্যান্য গাছগুলো দরপত্রের মাধ্যমে কাটা হবে। তাঁর ভাষ্য, গাছ রক্ষার কোনো সুযোগ নাই।

যেহেতু তাপদাহ চলছে, সেহেতু এই মুহূর্তে গাছগুলো থাকা দরকার বলে মনে করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, বনবিভাগের সঙ্গে আলাপ করে বিধিমোতাবেক কার্যকারী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।