বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু

0
108
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু -ছবি সংগ্রহ

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

বর্ণিল আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু হয়েছে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে শিশুদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে ১০ দিনের আয়োজনের সূচনা হয়।

বাঙালির ইতিহাসের অনন্য এই উদযাপনের মুহূর্তে সঙ্গী হয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ এবং ফার্স্ট লেডি ফাজনা আহমেদ। অনুষ্ঠানস্থলে তাদের অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামও সেখানে ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম এবং স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও উপস্থিত আছেন অনুষ্ঠানে।

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত এক বছর থমকে গিয়েছিল সব আয়োজন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপন গত এক বছর ধরে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ ছিল, তার মাঝেই বাঙালির জীবনে এসেছে উদযাপনের আরেক মাহেন্দ্রক্ষণ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

এ দুই বিশেষ উপলক্ষ ঘিরে বুধবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে শুরু হল জাতীয় পর্যায়ে দশ দিনের অনুষ্ঠানমালার, যা শেষ হবে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনে।

জাতীয় প্যারেন্ড গ্রাউন্ডে ১০ দিনের এই অনুষ্ঠানমালার পাঁচ দিনের আয়োজনে যোগ দেবেন প্রতিবেশী পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান।

মহামারীর কারণে ওই পাঁচ দিনের আয়োজনে সর্বোচ্চ পাঁচশ জন আমন্ত্রিত অতিথি অংশ নিতে পারবেন। অনুষ্ঠানে আসার আগে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে তিনি সংক্রমিত নন।

বাকি পাঁচ দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের কেউ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে থাকবেন না; শিল্পীদের পরিবেশনা সেখানে থেকে টেলিভিশন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারে সীমাবদ্ধ থাকবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি বাস্তবায়ন কমিটির এই আয়োজনে জাতীয় সংগীতে পর শত শিশুর কণ্ঠে কয়েকটি গান পরিবেশিত হয়।

অতিথিরা মঞ্চে আনার পর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর ‘মুজিব চিরন্তন’- এই থিমের ওপর তৈরি একটি অ্যানিমেশন দেখানো হয়। সেই প্রদর্শনী শেষে হলে পরিবেশিত হয় এ আয়োজনের ‘থিম সং’ এর মিউজিক ভিডিও।

এরপর বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও দেখানো হয়। উদযাপন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মেলবন্ধনে ’অনন্য সময়’ পার করছে বাংলাদেশে। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের যাত্রা শুরু করেছিলেন, সোনার বাংলা গঠনের জন্য সেই স্বপ্নযাত্রার আরেকটি পর্যায়ের সঙ্গে মেলবন্ধন।

এই মেলবন্ধন আমাদের শ্রদ্ধার, আমাদের ভালোবাসার মেলবন্ধন, আমাদের অগ্রগতির মেলবন্ধন। এভাবে ১০ দিনের যে প্রোগ্রামটা সাজানো হয়েছে, প্রতিদিনই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম, তিনি বিভিন্ন সময়ে যে অবদান রেখেছেন, সেগুলো যতটুকু সম্ভব তুলে ধরা। কেননা এই মহাকাব্যিক জীবনকেতো আমরা ১০ দিনের মধ্যে তুলে ধরতে পারব না।

জোড়া উদযাপন ঘিরে ওই এলাকা সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে; রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টানানো হয়েছে প্রচুর ব্যানার-ফেস্টুন। বিভিন্ন ভবনে হয়েছে আলোকসজ্জা।

’মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যে ১০ দিনের এই আয়োজনে বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতা তুলে ধরার পাশাপাশি সামনে আনা হবে গত ৫০ বছরের ’স্বপ্নযাত্রার’ গল্প।

১০ দিনের আয়োজনের প্রথম দিন ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের উপর ভিত্তি করে সব আয়োজন সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাস্তবায়ন কমিটি।

শিশুকণ্ঠে সঙ্গীতের পর মুজিববর্ষের থিম সংয়ের মিউজিক ভিডিও প্রদর্শন হবে। তারপর থাকছে বিমানবাহিনীর ফ্লাই পাস্টের রেকর্ড করা ভিডিও প্রচার।

এরপর স্বাগত সম্ভাষণ জানাবেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।

প্রচারিত হবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগার ধারণ করা ভিডিও বার্তা।

চীনের রাষ্ট্রদূত তার দেশের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধুর যে আবক্ষ ভাস্কর্য হস্তান্তর করেছেন, তার ভিডিও দেখানো হবে অনুষ্ঠানে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিমের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত অডিও-ভিজ্যুয়ালে ফুটে উঠবে জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের নানা অধ্যায়।

অর্কেস্ট্রা মিউজিকের সঙ্গে গান পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধুকে প্রতীকী চিঠি উৎসর্গ, ‘মুজিব শতবর্ষের কার্যক্রম ফিরে দেখা’ শীর্ষক ভিডিও দেখানো হবে এ সময়।

এ পর্বে পরিবেশিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সব গান। সংগীত পরিবেশন করবেন সাদি মোহাম্মদ, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, শিমূল ইউসূফ।

তারা শোনাবেন ‘জাত গেল জাত গেল’, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তব একলা চল রে, ধনধান্য পুষ্প ভরা’সহ কয়েকটি সমবেত গান।

বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধু রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় থাকছে ভারতের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের নেতৃত্বে একটি বিশেষ পরিবেশনা।

বর্ণিল আতশবাজি ও লেজার শোর মাধ্যমে রাত ৮টায় শেষ হয় প্রথম দিনের আয়োজন।