মেধাবী রাজিয়ার পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

0
91
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুদানের চেক নিচ্ছেন মেধাবী ছাত্রী রাজিয়া

স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে ভর্তির সুযোগ পাওয়া খোকসার রাজ মিস্ত্রী কন্যা রাজিয়া সুলতানার আর্থিক সহায়তা এগিয়ে এলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্তির পর্বে প্রয়োজনীয় ১০ হাজার টাকা অনুদানের একটি চেক দিয়েছেন। এছাড়া পল্লী নেটওয়ার নামের ইন্টারনেট সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মেধাবী ওই ছাত্রীকে আর্থিক সহযোগীতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

খোকসা থেকে প্রকাশিত একমাত্র সাপ্তাহি দ্রোহ পত্রিকার অনলাইন ভার্ষণে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত মেধাবী রাজিয়ার” শিরোনামের সংবাদটি প্রকাশিক হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার বিশ্বাসের দৃষ্টি গোচর হয়। তিনি পত্রিকা অফিসে ফোন করে ছাত্রীটির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। সোমবার দুপুরে মেধাবী রাজিয়া ও তার বাবা আব্দুর রাজ্জাকে নিজের দপ্তরে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থীর ভর্তির খরচের প্রথম পর্যায়ের খরচের ১০ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন।

সংবাদটি প্রকাশের পর ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান মিশনসহ একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মেধাবী ওই ছাত্রীকে আর্থিক সহযোগীতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার পাইকপাড়া মির্জাপুর গ্রামে হতদরিদ্র কাঠ মিস্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও সেলিনা খাতুন দম্পতির মেয়ে রাজিয়া সুলতানা। দুই ভাই বোনের মধ্যে সে বড়। ২০২০-২১ শিক্ষা বর্ষে আলহাজ্ব সাইদুর রহমান মন্টু মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। দারিদ্রতার সাথেই বেড়ে ওঠা রাজিয়া পড়েছে বানিজ্য বিভাগে। প্রথম শ্রেণি থেকে সব কাসেই তার রোল ছিল এক। পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসিতে কৃতিত্বে সাথে জিপিএ ৫সহ পাশ করেছে। কলেজে বানিজ্য শাখায় ভর্তি হয়। অন্য দিকে তার একমাত্র ছোট ভাই রেজাউল ইসলাম রাজুকে ভর্তি করা হয় ঝিনাইদহ পলিটেকনিক্যাল ইনিষ্টিটিউটে। দুই সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয় চালাতে চরম টানাপরনের মধ্যে পরেন কাঠ মিস্ত্রী বাবা রাজ্জাক। একমাত্র মেয়ে রাজিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটে মেধা তালিকায় ৯১৫ তম স্থান অধিকার করে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তিনি যেমন আনন্দিত হয়েছেন। অন্যদিকে মেয়ের ভর্তি ও লেখা পড়া চালানোর খরচের টাকার যোগান নিয়ে তার চিন্তার অন্ত নাই।

কাঁথা তৈরীর কারিগর মা সেলিনা খাতুন মেয়ের ভর্তির টাকা নিয়ে খুবই দুচিন্তায় ছিলেন। প্রতিবেশীর এক ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মোবাইল ফোনে তার কাছ থেকে ভর্তি ও খরচ সম্পর্কে জেনেছিলেন। চলতি মাসের ১৮ তারিখে ভর্তি চুড়ান্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। পরবর্তিতে আরো প্রায় ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকা জোগার করা নিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পরেছিলেন।

রাজিয়া সুলতানা জানান, টাকার অভাবে তার বাবা তৃতীয় শ্রেণি পর আর পড়তে পারেনি। সরকারী চাকুরি করা বন্ধুদের সাথে বসতে লজ্জা পান। এই গল্প শোনার পর থেকে সে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের সংকল্প করেন। বাবা মায়ের উপর চাপ কমাতে নিজে পড়া লেখার পাশা পাশি ছোট ভাই ও প্রতিবেশী ছাত্রদের প্রাইভেট পড়ায়।

উচ্চ মাধ্যমিকে ৪.৯২ পেয়ে পাশ করায় তার স্কোর সমস্যা হওয়া। এ কারণে পছন্দের সাবজেক্টে (বিষয়ে) ভর্তি হতে পারছে না। তবে বানিজ্য শাখায় ব্যাংকিং এন্ড ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে ভর্তি হবে বলে মনোস্থির করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়াসহ শিক্ষা জীবনের সাফল্যের পেছনে শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশী রয়েছে বলে সে জানায়।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর টাকা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পরেছিলে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহযোগীতায় এগিয়ে আসার পর তা লাঘব হয়েছে। এখানেই তো শেষ না। এরপর প্রতিমাসের খরচের টাকার যোগান দিয়ে ভাবছেন। দুই বচ্চার লেখা পড়ার খরচ যোগাতে তাকে এখন দিন রাত কাজ করতে হবে।

তিনি আরো জানান, কাসের এক বন্ধুর পরীক্ষার খাতায় অঙ্ক করে দেওয়ায় শিক্ষক তাকে মেরেছিলেন। সেই বন্ধু সরকারী চাকুরী করে। কিন্তু টাকার অভাবে পড়া লেখা ছেড়ে তিনি হয়েছেন কাঠ মিস্ত্রী। চাকুরী করা বন্ধুদের সাথে মিশতে লজ্জা পান। তাই নিজের বাচ্চা দুটিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন।