কুমারখালীতে ভর্ৎসনার অপমান সহ্য করতে না পেরে ছাত্রী আত্মহত্যা

0
165

দুই শিক্ষকের বিচার চেয়ে গ্রামবাসী বিক্ষোভ করেছে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুমারখালীরন সুলতানপুর মাহতাবুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় ােভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সুলতানপুর গ্রাম। দায়ী দুই শিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শতশত নারী-পুরুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা করে।

সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে নিজ ঘরে জিনিয়া খাতুন (১৪) নামের সমপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে ছাত্রীর মৃতদেহ গ্রামে আনা হলে তারা বিােভ মিছিল করেন। এসময় সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আব্দুর রশিদ জিনিয়ার মরদেহ দেখার জন্য সেখানে উপস্থিত হন। বিুব্ধ জনতা ওই শিক্ষকের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে।

নিহত জিনিয়া কয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়াদি গ্রামের হঠাৎ পাড়ার দিনমজুর জিল্লুর শেখের মেয়ে। সে সুলতানপুর মাহাতাবিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে সুলতানপুর ঈদগাহ ময়দানে জিনিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জিনিয়ার সহপাঠী তিথি জানায়, সোমবার বিকেল ৩টার দিকে অনেকটা কৌতূহল ও শখের বশবর্তী হয়ে জিনিয়াসহ তারা পাঁচ সহপাঠী বিদ্যালয়ের চার তলার সিঁড়িঘরে ধূমপান করছিল। তাদের ধূমপান করার দৃশ্য অন্য কাসের কয়েকজন শিার্থী দেখে শিকদের কাছে অভিযোগ করে। বিদ্যালয়ের আয়া শিউলী কে দিয়ে জিনিয়াসহ পাঁচ শিার্থী শিক রুমে ডেকে নিয়ে শিক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান তাদের প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চরম ভর্ৎসনা করেন।

এসময় ওই দুই শিক তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখান। স্কুল ব্যাগ আটকে রেখে অভিভাবকদের বিষয়টি জানানোসহ বিদ্যালয় থেকে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। ঘটনার পর বাড়ি ফিরে লজ্জা আর অপমানে অভিমান করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে জিনিয়া আত্মহত্যা করে।

নিহতের মামা জাহিদ হাসান জানান, পাঁচ ছাত্রী স্কুলের ছাদে ধূমপান করছিল। সেখানে তার ভাগনিও ছিল। তাদের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান গোপনে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ছাত্রীদের অফিস কে ডেকে মারধর করার পর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিসহ টিসি দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার হুমকী দেন। এ ঘটনার পর বিদ্যালয় ছুটি হলে তার ভাগনি বাড়িতে এসে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে।

স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক মশিউর রহমান লাল্টু, ওয়ালিউর রহমান ও বিদ্যালয়ের আয়া শিউলী আত্মগোপন করেছেন।

অভিযুক্ত দুই শিক মশিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান দাবি করেন, তারা ছাত্রীদের ধূমপানের কোনো দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করেননি। অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ধূমপান করার বিষয়ে তাদের কাছে অভিযোগ করলে জিনিয়াসহ পাঁচ শিার্থীকে ডেকে নিয়ে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং ধূমপান করার বিষয়টি অভিভাবকদের জানানোর কথা বলা হয়। এর বেশি কিছু নয়। শিার্থীর আত্মহত্যার এ ঘটনায় তারা দুজনই অনুতপ্ত এবং মা প্রার্থী বলে জানান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আব্দুর রশিদ জানান, তিনি ঘটনার সময় বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলেন। বিকেল সাড় ৫টার দিকে ঘটনাটি জেনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে যদি এ ঘটনার সঙ্গে কোনো শিক জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম জানান, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনি নিজেই সুলতানপুর এলাকায় ছিলেন। এ ঘটনায় জিনিয়ার পরিবারের প থেকে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।