শিশু সন্তানকে আর দেখা হলো না দগ্ধ আরাফাতের

0
38

স্টাফ রিপোর্টার

মা বাড়ি ফিরলেই তার সাথে ইয়াসিন আরাফাতও ইফতার করতে ঘরে ফিরবে বলে মুঠো ফোনে স্ত্রী রুমী আক্তার ফারজানাকে জানিছিলেন। কিন্তু কিছু সময় পরই প্রতিবেশি এক ছেলে এসে তাকে জানায়, পাশের গলির গ্যাসের আগুনে ইয়াছিন পুড়ে গেছে (দগ্ধ হয়েছে)। এর পর থেকে প্রায় সারা রাত এক মাসের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে শ্বাশুরীর হাত ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটে গেছে।

প্রায় ১২ ঘন্টা পর জানতে পারেন দগ্ধ ইয়াসিনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বুধবার বেলা ১টার পর শ্বাশুরীর সাথে সে দগ্ধ স্বামীর কাছে পৌচ্ছাতে পারেন। স্ত্রী রুমীর সাথে অগ্নিদগ্ধ ইয়াসিনের শেষ কথা হয়ে ছিল বার্ন ইউনিটে। নবজাত পুত্র সন্তান হুসাইনকে দেখার জন্য বয়না করেছিল। কিন্তু নার্সরা শিশুকে তার বাবার কাছে নিতে দেয়নি। স্ত্রী রুমী কাঁন্না করেছিল কিন্তু তাকে বেড় করে দেওয়া হয়।

স্বামীর শেষ ইচ্ছা, হাসপাতাল কর্তৃক্ষের নিষ্ঠুর আচরণ ও শিশু সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে বিলাপ করছিলেন নিহতের স্ত্রী রুমী আক্তার। তার দুই চোখ ছিল জলে ছলছলে। এই শিশু নিয়ে সে কার কাছে আশ্রয় নিবে এ নিয়ে তার বিলাপের অন্ত নেই।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুন দগ্ধ ইয়াসিন আরাফাত টানা ৬ দিন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মারা যায়। গভীর রাতে মা আয়শা খাতুন ও রড় ভাই আব্দুল কাদেরের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।

নিহতের মা আশয়া খাতুন জানান, ছোট ছোট ছেলেদের নিয়ে তিনি গাজীপুরের চলেযান। স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় তিনি ছেলেদের নিয়ে ঝুট কারখানায় কাজ করে জীবন চালাতেন। বড় ছেলের পর দেড় বছর আগে ছোট ছেলে ইয়াসিনকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ও নাতিদের নিয়ে ঘরে মাথা দিয়ে থাকতেন। এখন কি নিয়ে থাকবেন। উপস্থিত সবাইকে এই প্রশ্ন করছেন।

বুধবার সকালে নিহত ইয়াসিনের মৃতদেহবাহী আ্যাম্বুলেন্সটি তার নানা বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসার গোপগ্রাম ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপগ্রামে আনা হয়। জানাযা করা হয় স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে। পরে তাকে গোপগ্রাম কেন্দ্রীয় কবর স্থানে তার দাফন করা হয়।

অগ্নিদগ্ধ ইয়াসিন আরাফাত কুষ্টিয়া জেলা সদর উপজেলা উদিবাড়ি গ্রামের আল-আীমনের ছেলে। মা আয়শা খাতুন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পর থেকে দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরের একটি ঝুট কারখানায় কাজ করে জীবন চালাতে। দেড় বছর আগে ছোট ছেলে ইয়াসিনের বিয়ে দেন। ইয়াসিন ১ মাস বয়সী পুত্র সন্তান হুসাইন ও স্ত্রী রুমীকে নিয়ে সেখানেই মায়ের সাথে থাকতেন।

গোপগ্রাম ইুউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আলমি সরদার জানান, পরিবারটি খুবই নিরিহ ছিল। তারা উৎসবে আসতো। গ্রামের মানুষের সাথে মিলেমিশে চলাফেরা ছিল।

গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের তেলিরচালা এলাকার শফিক খানের টিনশেড কলোনির সামনে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩২ জন দগ্ধ হয়। দগ্ধদের মধ্যে ইয়াসিন সহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।