সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : রাষ্ট্রপতি

0
111
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ -ফাইল ছবি

দ্রোহ অনলাইন ডেস্ক

দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে দল-মতের পার্থক্য ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

সোমবার জাতীয় সংসদের বছরের প্রথম অধিবেশনের (শীতকালীন) ভাষণে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।

অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির আগমনের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সম্ভাষণ জানান। সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রবেশের পর জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রতিবছরের মতো এবারও রাষ্ট্রপতি সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম ও উন্নয়ন তুলে ধরে ভাষণ দেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন, দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।

তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। গণতন্ত্রায়ন, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণি ও পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি সরকারি দল ও বিরোধী দল নির্বিশেষে মহান জাতীয় সংসদে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাই।

রাষ্ট্রপতি অর্থনীতি, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, খাদ্য-কৃষি, পরিবেশ-জলবায়ু, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন। এছাড়া দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, সরকার সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতি অর্জন করেছে। সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সাফল্যের সঙ্গে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ এবং ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

করোনা টিকা সরকার দ্রুত দিতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব লাইফ সাইনসেস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সিএমএসডি’র মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেওয়া হয়। আমি আশা করছি, সরকার খুব শিগগিরই দেশের জনগণকে করোনা টিকা দিতে পারবে।

আবদুল হামিদ বলেন, আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দারপ্রান্তে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে আমরা ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’ পালন করবো। তবে, আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হবো।