স্কুল ছাত্রী খাদিজার চোখের সামনে পুড়ে গেলো সব স্বপ্ন

0
20

স্টাফ রিপোর্টার

মাঠের আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসাবশেষ থেকে নিজেদের বই খাতা খুজে বেড় করার চেষ্টা করছিল ৮ম শ্রেনির মেধাবী ছাত্রী খাদিজা ও তার ভাই বোনেরা। নিজের চোখের সামনে বাবা আল আমীন ইন্তাজ ও চাচাদের তিল তিল করে গড়া সব স্বপ্ন পুড়ে ছায় হয়ে যেতে দেখেছে সে।

কুষ্টিয়ার খোকসার শিমুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর বসোয়া পশ্চিম পাড়ায় পানের বরজ থেকে সৃষ্ট আগুনে ৪ কৃষকের বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করা ফসল ও বীজ। শিশুদের পড়ার বই। সর্বশ হারিয়ে কৃষক পরিবার গুলো দিশেহারা হয়ে পরেছে। পোড়া ঘরের ভিটায় সিমেন্টের বস্তা টাঙ্গিয়ে রাত পার করছেন তিনটি পরিবার। অন্যজন আশ্রয় নিয়েছে বাবার রান্না ঘরে। পোড়া ভিটায় কবে ঘর উঠবে তা জানেনা তারা। এ অগ্নিকান্ডে আরো ছয় কৃষকের প্রায় ৫ বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমান কোটি টাকায় পৌছাবে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকার সরকারী সহযোগীতা পায়নি।

ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড় টার দিকে বাড়ির পাশের ইসাহক আলীর পানের বরজে আগুন লাগে। তাপদাহের প্রভাবে মুহুত্যের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পরে। আগুনে ভষ্মে পরিণত হয় প্রন্তিক কৃষক ও ঘোড়ার গাড়ির চালক আল আমীন ইন্তাজ, তারই ভায়ের ছেলে মাসুদ মন্ডল, সবুজ হোসেন মন্ডল, সাবু মন্ডলের বাড়ি ঘর।

রবিবার সকালে সরেজমিন বসোয়া পশ্চিম পাড়া গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়ার কৃষকদের ১২টি ঘরের ভিটায় শুধু সিমেন্টের খুটি দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ি গুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পানি শুন্য বসোয়া খালের পাড়ে পুড়ে যাওয়া ঢেউটিন গুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ভাই বোনদের সাথে নিয়ে পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার করা পড়ার উপযোগী বই খুজে বেড় করার চেষ্টা করছিল খাদিজা নামের স্কুল ছাত্রী। গাছের ছায়ায় দলবেঁধে বসে পুড়ে যাওয়া পেঁয়াজ বাছায় করছে নারী পুরুষ সদস্যরা। কেউ ব্যস্ত পুড়ে যাওয়া ঘরের ভিটা ঘিরে আপাতত থাকার ব্যবস্থা করা নিয়ে।

স্কুল ছাত্রী খাদিজা জানায়, অগ্নিকান্ডের সময় বাড়ির পাশেই নিজেদের পানের বরজে পান গাছের মাথা মুড়ার কাজ করছিল। হঠাৎ মাঠের কৃষকদের চিৎকারের বেড়িয়ে এসে দেখে কৃষক ইসাহকের বরজে আগুন জ্বলছে। দেখতে দেখতে তার এক চাচার ঘরে আগুন ছড়িয়ে পরে। এসময় সেও আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। নিজের থাকার ঘরসহ পরিবারের সদস্যদের ১২টি কাঁচা ঘর পুড়ে যেতে দেখছে। তাদের চার ভাই বোনের বই খাতা, শখের পোশাক। দুপুরের খাবার। কিছু রক্ষা করতে পারেনি সে। যে বরজে সে মুহুত্যকাল আগে কাজ করছিল সেটি পুড়ে গেলো তারই চোখের সামনে।

খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যরা অনেক বার খোকসার ফায়ার সার্ভিসে ফোন করছিল। তার শুধু বলছিল গাড়ি রওনা হয়ে গেছে। ফায়ার সাভিসের গাড়ি আসার আগেই তাদের সব পুড়ে ছায় হয়ে যায়। সে শিক্ষকদের সাথে যোগযোগ করেছে। বই পেতে সময় লাগবে। তাই গত দুই দিন ধরে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরের ভিতর থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া বড় বোন সাদিয়ার দুই এক খানা গাইড বই উদ্ধার করতে পেরেছে। তার নিজেরসহ তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছোট বোন মারিয়া ও ছোট ভাই ইয়ামিনের একটি বইও উদ্ধার করতে পারেনি।

অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ রিক্তা খাতুন, স্বামী মাসুদ মন্ডল ও চার সন্তান সহ শ্বশুর আব্দুল লথিপের রান্না ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। তার ঘরের সিমেন্টের খুটি গুলো ছাড়া কিছুই নেই। তার ঘরে প্রায় ১৫০ মন রাখি পেঁয়াজসহ সারা বছর খাবারের ধান, গম ও ডাউল জাতিয় ফসল ও বীজ পুড়ে যাওয়ায় সে রিক্ত হয়ে গেছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ রিক্তা খাতুন কবে নিজের ভিটায় ফিরতে পারবেন তা জানেন না। অগ্নিকান্ডের দিন তার স্বামী ও তার দেবর ভাসুররা বাড়িতে ছিলেন না। কয়েকদিন আগে তারা গ্রামের অন্য শ্রমিকদের সাথে বিদেশে (অন্য জেলায়) ধান কাটার কাজে গিয়েছিলেন।

আল আমীন ইস্তাজ জানান, তিনি বাইরে ছিলেন। অগ্নিকান্ডের খবর জানার পর তিনি ৩/৪ বার ফাযার সাভিসে ফোন করেছেন। তারা ফোন ধরেছে। কিন্তু অগ্নিনির্বাপক গাড়ি আসতে অনেক দেরি করে। ফলে তাদের বাচ্চাদের লেখা পড়ার বই পোশাক, সংসারের জিনিপত্র কিছুই রক্ষা করেতে পারেনি। বই সংগ্রহ করাই অসম্ভব হয়ে পরেছে। ফলে তার শিশুদের লেখাপড়া ব্যহত হতে পারে। তারা সরকারী সহযোগীতা ও পায়নি। গ্রামের মানুষরা তাদের সহযোগীতায় এগিয়ে না এলে তাদের না খেয়ে মরতে হত।

স্থানীয ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর নাসির উদ্দিন জানান, ঘর – বাড়ি পোড়া কৃষকদের পাশে গ্রামের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগত ভাবে কিছু সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস জানান, কৃষকদের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। তাদর পাশে গ্রামের সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছেন। তা ছাড়া সরকারী সহয়তার জন্য কাগজপত্র তৈরী করা হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে কাগজ পাঠানো হবে।

খোকসা ফায়ার ষ্টেশনের অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, পানের বরজ থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনা স্থলে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই ফলে ঘটনা স্থলে পৌছাতে বিলম্ব হয়েছিল। ক্ষয়ক্ষতি প্রায় কোটি টাকা হবে।